
ফাইল ছবি
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া লঘুচাপটি আরও ঘনীভূত হয়ে প্রথমে নিম্নচাপ এবং পরে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হলেও ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেয়নি বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। বৃহস্পতিবার ঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্রের আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক মুঠোফোনে জানান, কিছু কিছু গণমাধ্যম ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়েছে বলে খবর প্রকাশ করেছে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এই গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেয়ার কোনো আশঙ্কা নেই।
বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় ‘শক্তি’ সৃষ্টি হয়েছে- এমন সংবাদ দুপুর থেকে দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। ওইসব প্রতিবেদনে মার্কিন নৌবাহিনী পরিচালিত জয়েন্ট টাইফুন ওয়ার্নিং সেন্টারের বরাতে জানানো হয়, দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় অবস্থান করছে।এ বিষয়ে জানতে চাইলে আবুল কালাম মল্লিক বলেন, অঞ্চলভেদে আবহাওয়া সংক্রান্ত পরিভাষাগুলো ভিন্ন হতে পারে। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, উত্তর আটলান্টিক অঞ্চলে তৈরি হওয়া ঝড়কে হারিকেন বলা হয় কিন্তু আমাদের অঞ্চলে বলা হয় সাইক্লোন। একইভাবে আমাদের এখানে আবহাওয়া পরিস্থিতি বর্ণনার কিছু আলাদা ক্যাটাগরি আছে। তারা যে সতর্কবার্তা প্রকাশ করেছে সেটা হয়তো আক্ষরিক অনুবাদ করলে ‘ঘূর্ণিঝড়’ দাঁড়ায়, কিন্তু তাতে প্রকৃত অবস্থা বুঝায় না।
এজন্য আবহাওয়া সংক্রান্ত পরিভাষা ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বনের অুনুরোধ জানান তিনি। পাশাপাশি জোর দিয়ে বলেন, এই গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেয়ার কোনো আশঙ্কা নাই।
এর আগে আবহাওয়া অধিদফতর থেকে প্রকাশিত এক সতর্কবার্তায় জানানো হয়েছে, বিকাল ৩টা থেকে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টা সারা দেশে ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণ হতে পারে। সেইসঙ্গে চট্টগ্রাম বিভাগের পাহাড়ে ভূমিধসের আশঙ্কা রয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, উত্তরপশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় গভীর নিম্নচাপ অবস্থান করছে। সেই সঙ্গে মৌসুমি বায়ু সক্রিয় রয়েছে। এর প্রভাবে ৪৮ ঘণ্টায় রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও ভারি (২৪ ঘণ্টায় ৪৪-৮৮ মিলিমিটার) থেকে অতি ভারি (২৪ ঘণ্টায় ১৮৮ মিলিমিটার) বর্ষণ হতে পারে।
বর্ষণের কারণে চট্টগ্রাম বিভাগের পাহাড়ি এলাকার কোথাও কোথাও ভূমিধ্বসেরও আশঙ্কা রয়েছে। সেইসঙ্গে ভারি বর্ষণজনিত কারণে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীর কোথাও কোথাও অস্থায়ীভাবে জলাবদ্ধতা তৈরি হতে পারে।
এদিকে আবহাওয়া অফিসের বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গভীর নিম্নচাপটি দুপুরে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৮৩৫ কিলোমিটার, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৮১০ কিলোমিটার, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৬৫ কিলোমিটার এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৮৫ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরোও উত্তর-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে রাত ৯টা নাগাদ গোপালপুর এবং পারাদ্বীপের মধ্যে ওড়িশা ও সংলগ্ন অন্ধ্র প্রদেশ উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় বায়ুচাপের তারতম্যের আধিক্য বিরাজ করছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর, বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা ও সমুদ্রবন্দরের ওপর দিয়ে দমকা বা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৪৮ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝাড়ো হাওয়ার আকারে ৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর উত্তাল রয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলে আবহাওয়া অফিস। সেইসঙ্গে উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।