ছবি: সংগৃহীত
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের শাহজাহান রোডে একটি আবাসিক ফ্ল্যাটে মা ও মেয়েকে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় বাসার গৃহপরিচারিকাকে সন্দেহের তালিকায় রেখেছে পুলিশ। হত্যার পর সে নিহত কিশোরীর স্কুলড্রেস পরে বাসা থেকে বেরিয়ে যায় বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আনুমানিক ২০ বছর বয়সী ওই নারী নিজেকে আয়েশা পরিচয় দিয়ে চার দিন আগে বাসাটিতে কাজ নেয়। সেসময় নিজের গ্রামের বাড়ি রংপুর এবং জেনেভা ক্যাম্পে চাচার বাসায় থাকার কথা জানায় সে।ভবনের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নিহত মা লাইলা আফরোজ (৪৮) গৃহিণী। মেয়ে নাফিসা বিনতে আজিজ (১৫) মোহাম্মদপুরের প্রিপারেটরি স্কুলের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী। নাফিসার বাবা এম জেড আজিজুল ইসলাম পেশায় শিক্ষক। তিনি উত্তরার সানবিমস স্কুলের ফিজিক্সের শিক্ষক। সোমবার সকালে আজিজুল ইসলাম কাজের উদ্দেশে বের হয়ে যান। এরপর বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে এসে তিনি স্ত্রী ও মেয়েকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখতে পান। মেয়ে নাফিসাকে জীবিত অবস্থায় পেলেও হাসপাতালে নেওয়ার পর সে মারা যায়।
শাহজাহান রোডের ৩২/২/এ ভবনের একাধিক সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, নাফিসার বাবা বাসা থেকে সকাল ৭টার দিকে বের হয়ে যান। সকাল ৯টা ৩৫ মিনিট ৫৭ সেকেন্ডে কাধে কালো রঙের স্কুল ব্যাগ ও সাদা স্কুল ড্রেস পরে লিফট থেকে বের হন গৃহপরিচারিকা আয়েশা। এসময় তার মুখে মাস্ক পড়া ছিল। আরেক ফুটেজে দাড়োয়ানকে গেট খুলে দিতে দেখা যায় এবং আয়শাকে বের হয়ে রিকশায় উঠে স্থান ত্যাগ করতে দেখা যায়।নিহত পরিবারের গৃহকর্তা আজিজুল ইসলাম জানান, আমাদের বাসায় একজন কাজের মহিলা দরকার ছিলো। সাধারণত গেটে অনেকেই কাজের সন্ধানে আসে। চার দিন আগে একটি মেয়ে আসে। বোরকা পরিহিত মেয়েটি আমাদের বাসার দারোয়ান খালেকের কাছে কাজের সন্ধান করলে সে আমাদের বাসায় পাঠিয়ে দেয়। এরপর আমার স্ত্রী মেয়েটির সঙ্গে কথা বলে কাজে রেখে দেয়। পরে আমি স্ত্রীর মুখে শুনেছি, মেয়েটার নাম আয়েশা। বয়স আনুমানিক ২০ বছর। তার গ্রামের বাড়ি রংপুর। জেনেভা ক্যাম্পে চাচা-চাচির সঙ্গে থাকে। বাবা-মা আগুনে পুড়ে মারা গেছে। তার শরীরেও আগুনে পোড়ার ক্ষত রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, মেয়েটা কাজ শুরুর পর প্রথম দুদিন সময়মতো এসেছে। গতকাল সে সাড়ে ৯টার দিকে আসে। আজ কি হয়েছে এটা তো আর বলার অবস্থায় নেই।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পুলিশ জানায়, বাসার ভেতরে ধস্তাধস্তির স্পষ্ট আলামত রয়েছে। বাসার ইন্টারকমের লাইন খোলা, মেঝে এবং দেয়ালজুড়ে রক্তের দাগ, আলমারি ও ভ্যানিটি ব্যাগ তছনছ করা। এ ছাড়া হত্যায় ব্যবহৃত দুটি ধারালো ছুরি বাথরুমের বালতির ভেতর থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।
পুলিশ সূত্র জানায়, মেয়েটি খুব সুন্দরভাবে ঠান্ডা মাথায় হত্যা করে বাথরুমে গিয়ে গোসল করে নিজের শরীরের সমস্ত রক্ত পরিষ্কার করে নাফিসার স্কুলের ড্রেস পরে নির্দ্বিধায় গেট দিয়ে বেরিয়ে যায়।
এ বিষয়ে তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) ইবনে মিজান বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, চুরির উদ্দেশ্যেই এমনটা হতে পারে। সিসিটিভিতে একজন নারীকে দেখা গেছে। পোশাক পরিবর্তন করে বেরিয়ে যাওয়াও সত্য।
তিনি আরও বলেন, গৃহকর্মী যে সন্দেহভাজন—এই বিষয়টি যাচাই করা হচ্ছে। তার আগের পরিচয়, আসল নাম, আগের কর্মকাণ্ড—সবই তদন্তে দেখা হচ্ছে। হত্যার আগের এবং পরের তার গতিবিধি বিশ্লেষণ করে তদন্ত এগিয়ে চলবে।লাশ দুটি সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।




