ফাইল ছবি
রাজধানীর জাতীয় ঈদগাহের সামনে থেকে আশরাফুল হকের (৪৩) ২৬ টুকরো করা লাশ উদ্ধারের ঘটনায় নিহতের বন্ধু মো. জরেজুল ইসলাম ও শামীমা আক্তার নামে বিবাহিত এক নারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শুক্রবার রাত ১০ টার দিকে কুমিল্লার দাউদকান্দি থেকে জরেজুলকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। অন্যদিকে র্যাব-৩ এর একটি দল লাকসাম থেকে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত আশরাফুলের পরকীয়া প্রেমিকা শামীমাকেও গ্রেপ্তার করে। এসময় হত্যাকাণ্ডে ব্যাবহৃত বিভিন্ন আলামত উদ্ধার করা হয়।
ডিবি সূত্র জানায়, শামীমা আক্তার কুমিল্লার বাসিন্দা। তার এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। শামীমার স্বামী সৌদি আরবে থাকেন। তিন বছর আগে ফেসবুক ও মেসেঞ্জারে তার সম্পর্ক হয় মালয়েশিয়া প্রবাসী জরেজুল ইসলামের সঙ্গে। ছুটিতে দেশে ফেরার সময় শামীমার সঙ্গে জরেজুলের শারীরিক সম্পর্ক হয়। অন্যদিকে রংপুরে একই এলাকায় থাকা জরেজুল ও আশরাফুলের মধ্যে গভীর বন্ধুত্ব ছিল। দীর্ঘদিন পর মালয়েশিয়া থেকে দেশে ফিরে জরেজুল সব সময় আশরাফুলের সঙ্গেই বেড়াতো। জরেজুলের মাধ্যমে আশরাফুলের সঙ্গে শামীমার পরিচয় হয়। এরপর আশরাফুল ও শামীমার মধ্যেও পরকীয়া সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সম্প্রতি জরেজুল ঢাকায় এসে দক্ষিণ ধনিয়ায় একটি বাসা ভাড়া নেন। শামীমা তার ছেলে-মেয়েকে কুমিল্লায় রেখে সেখানে এসে ওঠে। ঘটনার দিন আশরাফুল ও জরেজুল একসঙ্গেই ওই বাসায় যায়। ওই সময় জরেজুলের সঙ্গে শামীমার শারীরিক সম্পর্ক হয়। এটি জেনে জরেজের অগোচরে আশরাফুলও শামীমার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করতে চান। তখন শামীমা আশরাফুলের সঙ্গেও শারীরিক সম্পর্ক করে।
বিষয়টি টের পেয়ে যান জরেজুল। তখন ক্ষিপ্ত হয়ে বাসা থেকে বের হয়ে যায় সে। বের হওয়ার সময় ভুলে আশরাফুলের মোবাইল সঙ্গে নিয়ে যান তিনি। পরে মোবাইল নিতে ফিরে এসে জরেজুল দেখেন শামীমা ও আশরাফুল একসঙ্গে ঘুমিয়ে আছেন। ওই সময় জরেজ বাসার ভেতরে লুকিয়ে রাতের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। রাত হলে শামীমা ও আশরাফুল আবার শারীরিক সম্পর্ক করলে জরেজুল তা মেনে নিতে পারেনি। পরে আশরাফুলকে বালিশ চাপা দিয়ে ধরেন জরেজুল। ওই সময় শামীমাও সেখানে ছিলো। এক পর্যায়ে হাতুড়ি দিয়ে মাথায় আঘাত করলে আশরাফুলের মৃত্যু হয়। হত্যার পর লাশ দুইদিন বাসার ভেতরে রেখে দুইজন ভাবতে থাকে। পরে দুইজন আশরাফুলের লাশ ২৬ টুকরো করে দুটি ড্রামে ভরে গত বৃহস্পতিবার হাইকোর্ট সংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহ মাঠের সামনে ফেলে দুজনই কুমিল্লায় পালিয়ে যায়। আর সেই ড্রাম থেকে আশরাফুলের ২৬ টুকরো করা লাশ উদ্ধার করে শাহবাগ থানা পুলিশ।
এ বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ-ডিএমপি'র যুগ্ম কমিশনার (ডিবি-দক্ষিণ) মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম দৈনিক মানবজমিন'কে বলেন, ত্রিভুজ পরকীয়া প্রেমের জের ধরে এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে। আশরাফুল ও জরেজুল ইসলাম একে অপরের বন্ধু। শামীমা নামে কুমিল্লার এক প্রবাসীর স্ত্রীর সঙ্গে তাদের দুজনেরই পরকীয়ার সম্পর্ক গড়ে উঠে। এই সম্পর্ককে কেন্দ্র করে আশরাফুল তার বন্ধু জরেজ ও প্রেমিকা শামীমার হাতে খুন হয়। তিনি বলেন, লাশ উদ্ধারের পর থেকে বিষয়টি নিয়ে ডিবি তদন্ত শুরু করে। পরে তথ্যপ্রযুক্তি সহযোগিতায় শুক্রবার রাত ১০ টায় কুমিল্লা থেকে জরেজুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে ডিবি। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে এবং এ বিষয়ে আইনি প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।




