Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

কার্তিক ৩০ ১৪৩২, শনিবার ১৫ নভেম্বর ২০২৫

২৬ টুকরা আশরাফুলের দাফন সম্পন্ন : হতবিহ্বল মায়ের আহাজারি

বহুমাত্রিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৯:২১, ১৫ নভেম্বর ২০২৫

প্রিন্ট:

২৬ টুকরা আশরাফুলের দাফন সম্পন্ন : হতবিহ্বল মায়ের আহাজারি

ছবি: সংগৃহীত

পরকীয়া প্রেমের দ্বন্দ্বে বাল্যবন্ধুর হাতে নৃশংসভাবে খুন হওয়া কাঁচামাল ব্যবসায়ী আশরাফুল হকের (৪২) জানাজা ও দাফন সম্পন্ন হয়েছে। শনিবার সকাল সাড়ে আটটার দিকে বদরগঞ্জ উপজেলার গোপালপুর নয়াপাড়া আল মাহফুজ মাদ্রাসা মাঠে হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় তাকে।এদিকে আশরাফুলের জানাজা ও দাফন ঘিরে এলাকায় গভীর শোক নেমে এসেছে। আজ ভোর থেকে বদরগঞ্জের গোপালপুর ইউনিয়নের নয়পাড়া গ্রামে হাজারো মানুষ ভিড় করেন। 

এর আগে, শুক্রবার গভীর রাতে আশরাফুলের মরদেহ গ্রামের বাড়িতে পৌঁছায়। সকালে জানাজায় অংশ নিতে দূরদূরান্ত থেকে মুসল্লিরা ছুটে আসেন। জানাজা শেষে স্থানীয় কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন করা হয়। মায়ের আহাজারি, স্বজনদের কান্না আর বিহ্বল মানুষের দীর্ঘশ্বাসে ভারী হয়ে ওঠে আশরাফুলের শেষবিদায়ের মুহূর্ত।

স্থানীয়রা জানান, হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই আশরাফুলের পরিবার শোকে মুহ্যমান। পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেন-বাল্যবন্ধু জরেজ আশরাফুলকে ডেকে নিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করেছেন। এ ঘটনায় নিহত আশরাফুলের বোন আনজিনা বেগম শুক্রবার সকালে ঢাকার শাহবাগ থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলায় আশরাফুলের বন্ধু জরেজুল ইসলাম জরেজকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। এ ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে জরেজুল ইসলাম ও শামীমা নামের এক নারীকে।

আহাজারি করতে করতে আশরাফুল হকের স্ত্রী লাকী বেগম বলেন, ‘নিজের ভাই মনে করতো জরেজকে। জাপান যাওয়ার ১০ লাখ টাকা চাইছিল, সেই টাকাও আমরা দিতে চাইছি। আরও টাকা লাগলে নিতো। আমার সব সম্পত্তি নিয়া স্বামীটারে বাঁচাই রাখতো। স্বামীটার জান কেন কাড়ি নিল। আমি উনার (জরেজের) ফাঁসি চাই। যারা আমার স্বামীরে টুকরা টুকরা করছে, সবার ফাঁসি চাই।’

বাবা আবদুর রশিদের বিলাপ, ‘হাসপাতালে ছিলাম। জরেজ খুব তাগদা দিয়া ছেলেটারে ঢাকা নিয়া গেছে। বাবাটাক খুন করবে জানলে নিজের জান দিয়াও ঢাকা যাবার দিতাম না। ছোট নাতি-নাতনি, আমাদের এখন কে দেখবে।’

সরেজমিনে দেখা যায়, মা এছরা খাতুন মূর্ছা যাচ্ছেন। স্বজনেরা জ্ঞান ফেরালে বিলাপ করছেন, ‘আমার বেটা তো কারও ক্ষতি করে নাই। তাহলে কেন এমন করল ওরা? কেন আমার বেটাকে টুকরা টুকরা করল?’

পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায় মা-বাবার একমাত্র ছেলে আশরাফুল হক। তার চার বোন আছে। ভাই-বোনের মধ্যে আশরাফুল তৃতীয়। তার বাবা আবদুর রশিদ ছিলেন একজন ক্ষুদ্র কাঁচামাল ব্যবসায়ী। ছোট থাকতেই বাবার হাত ধরে কাঁচামাল ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন আশরাফুল। তিনি কাঁচামাল আমদানিকারক ছিলেন। বিভিন্ন দেশ থেকে কাঁচামাল এনে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন আড়তে দিতেন। তার সংসারে ১৩ বছর বয়সী সপ্তম শ্রেণিতে পড়ুয়া এক মেয়ে ও ৭ বছর বয়সী এক ছেলে আছে।

এলাকার সাবেক ইউপি সদস্য আমজাদ হোসেন বলেন, আশরাফুল কাঁচামালের ব্যবসা করতেন। তিনি একজন বড় ব্যবসায়ী ছিলেন। কাঁচামাল ট্রাকে করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠাতেন। তিনি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। তিনি অত্যন্ত নম্র ও ভদ্র মানুষ ছিলেন। বছরের দুই ঈদে এলাকার গরিব মানুষদের দুই হাত প্রসার করে শাড়ি লুঙ্গিসহ শুকনা খাবার বিতরণ করতেন। গরিব মানুষদের জন্য প্রতিবছর কোরবানির ঈদে একটি গরু কিনে মাংস বিতরণ করতেন। তাকে হত্যাকারী যেই হোক, তার বিচার চান তিনি।

বদরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এ কে এম আতিকুর রহমান বলেন, সকালে আশরাফুল হকের লাশ তার নিজ গ্রামে দাফন হয়েছে। তাকে হত্যার ঘটনায় শাহবাগ থানায় মামলা হয়েছে। তার সঙ্গে থাকা বন্ধু জরেজুল ও শামীমা নামের এক নারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

উলেখ্য, গত ১১ নভেম্বর মালয়েশিয়া-ফেরত বন্ধু জরেজুল ইসলামের সঙ্গে ঢাকায় যান আশরাফুল। এরপর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানী ঢাকার হাইকোর্ট-সংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহ মাঠের গেটের পাশে একটি ড্রাম থেকে এক তার খণ্ডিত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

Walton Refrigerator cables
Walton Refrigerator cables