ছবি : সংগৃহীত
ঢাকা : দেশের খাদ্য নিরাপত্তা বজায় রাখতে ও কৃষিখাতের সার্বিক সংকট উত্তরণে কৃষি গবেষণার বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে (পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ-পিপিপি) দৃষ্টিভঙ্গির সমস্যাকেই প্রধান অন্তরায় হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।
সাম্প্রতিক চ্যালেঞ্জ ও কৃষি গবেষণায় পিপিপি’র অপরিহার্যতার কথা তুলে ধরে এবিষয়ে সংশ্লিষ্ট সকলের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন এনে আরও ইতিবাচক-উদার হওয়ার তাগিদ দিয়েছে তারা।
বাংলাদেশ উদ্ভিদ প্রজনন ও কৌলিতত্ত্ব সমিতির আয়োজনে শস্যের প্রজননে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব বিষয়ক এক জাতীয় কর্মশালায় অংশ নিয়ে বিশেষজ্ঞরা এই তাগিদ দিয়েছেন।
শনিবার রাজধানীর বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটে অনুষ্ঠিত এই কর্মশালায় কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের বিশেষজ্ঞ প্রতিনিধিবৃন্দ, সরকারি ও বেসরকারি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিবৃন্দ অংশ নেন। আয়োজনে সহযোগিতা দেয় এসিআই এগ্রিবিজনেস লিমিটেড।
বাংলাদেশ উদ্ভিদ প্রজনন ও কৌলিতত্ত্ব সমিতির সভাপতি ড. এম খায়রুল বাশারের সভাপতিত্বে কর্মশালায় আলোচ্য বিষয়ের ওপর গবেষণা নিবন্ধ উপস্থাপন করেন এসসিএ এগ্রি বিজনেস লিমিটেডের উপদেষ্টা অধ্যাপক লুৎফর রহমান, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপািচার্য অধ্যাপক ড. এম শাহ-ই-আলম, জ্যেষ্ঠ ব্রিডার মো: শাজাহান আলী এবং শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিকস অ্যান্ড প্ল্যান্ট ব্রিডিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মোঃ শহীদুর রশীদ ভূঁইয়া।
কর্মশালায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন-আয়োজক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিকস অ্যান্ড প্ল্যান্ট ব্রিডিং বিভাগের অধ্যাপক ড. আমিনুল ইসলাম।
কর্মশালায় অধ্যাপক লুৎফর রহমান শস্যের প্রজননে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে বলেন, ‘এই বিষয়টিতে সরকার, গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে এক হতে হবে। প্রতিটি ফ্যাক্টর বিবেচনায় নিয়ে ব্রিডিং করতে হবে।’
‘শুধুমাত্র উচ্চফলনের ওপর ভিত্তি করে ভ্যরাইটি বের করা ঠিক হবে না। আমাদের প্রচুর জেনেটিক রিসোর্স রয়েছে’-উল্লেখ করেন অধ্যাপক লুৎফর রহমান।
তিনি আরও বলেন, ‘‘ফার্মারের সঙ্গে পার্টিসিপেটরি ব্রিডিংয়ে যেতে হবে আমাদের। একটি প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়, একজন ব্রিডারের ভ্যারাইটি অন্যরা ওন করেন না। এখানে ‘আমি’ ছাড়া ‘আমরা’ কখনো চিন্তা করি না।’’ -এ মনেবৃত্তি পরিবর্তন করা জরুরি বলেও মনে করেন জ্যেষ্ঠ এই কৃষি বিজ্ঞানী।
কর্মশালায় প্রবন্ধ উপস্থাপনে অধ্যাপক ড. মোঃ শাহ-ই-আলম বলেন, ‘গবেষণার দায়িত্ব শুধু পাবলিক সেক্টরের নয়। গত এক দশকে প্রাইভেট সেক্টরও এক্ষেত্রে এগিয়ে এসেছে। যা অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক।’
সহ-প্রবন্ধ উপস্থাপক মোঃ শাজাহান আলী, ‘‘ব্রিডারদের ‘কষ্ট অব রিসার্চ’, ‘ইনোভেটিভ রিসার্চ’ ও ‘ইমপ্যাক্ট অব রিসার্চ’ ভাবতে হবে। সম্পদ, জ্ঞান ও ঝুঁকি শেয়ার করতে হবে। প্রোডাক্ট ও সার্ভিস শেয়ার করতে হবে।’’
অধ্যাপক শহীদুর রশীদ ভুঁইয়া বলেন, ‘আমরা ভ্যারাইটির স্বর্ণযুগে আছি। ব্রিডিংয়ের স্বর্ণ যুগে আছি কিনা জানি না। একই বীজ ভিন্ন নামে বিক্রি হচ্ছে, সবাই দাবি করছে, ‘দিস ইজ মাই ভ্যারাইটি।’
তিনি আরও বলেন, ‘কোম্পানিগুলো বেশি বীজ তৈরি করছে না, এখানে স্বচ্ছতা ঘাটতি রয়েছে। ৮০ ভাগ ভ্যারাইটি কালেক্টেড। একজন ব্রিডার ১০ বছরে ৭০টি ভ্যরাইটি বের করছেন। এটা কিভাবে সম্ভব-ভাবতে হবে?’
কর্মশালার মুক্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে সাবেক কৃষি সচিব আনোয়ার ফারুক বলেন, ‘পাবলিক-পাবলিক ই তো পার্টনারশিপ হচ্ছে না, তাহলে পাবলিক-প্রাইভেট কিভাবে হবে? দৃষ্টিভঙ্গি যতোক্ষণ না পরিবর্তন না হবে, ততোক্ষণ উত্তরণ করতে পারব না।’
আলোচনায় অন্যান্যের মধ্যে আরও অংশ নেন-বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের (বিএআরসি) সাবেক নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. আব্দুর রাজ্জাক, ড. ভাগ্য রানী বণিক, এসিআই’র পরিচালক আবুল বাশার, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক (গবেষণা) ড. তমাল লতা, বিএআরসি’র সদস্য পরিচালক ড. আজিজ জিলানী চৌধুরী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিকস অ্যান্ড প্ল্যান্ট ব্রিডিং বিভাগের অধ্যাপক নাসরিন আক্তার আইভি, বিএডিসি’র সিড প্রোডাকশন ফার্ম’র ম্যানেজার নরেশ চন্দ্র পাল প্রমূখ।
বহুমাত্রিক.কম