ছবি: বহুমাত্রিক.কম
ময়মনসিংহ: নেত্রকোণার কেন্দুয়া উপজেলার কান্দিউড়া ইউনিয়নে নিম্নমানের সামগ্রীতে রাস্তা সংস্কার আটকে দিল ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। টেন্ডারের বেধে দেওয়া সময় অতিক্রান্ত হওয়ার এক বছর পর রাস্তার সংস্কারের জন্য নিম্নমানের সামগ্রী নিয়ে এলে প্রতিবাদে পথে নেমে আসেন এলাকাবাসী। দীর্ঘদিন চুপ করে থাকলেও ‘দেয়ালে পিঠ’ ঠেকে যাওয়া প্রতিবাদে সরব হন স্থানীয়রা।
উপজেলার কান্দিউড়া ইউনিয়নের ৫, ৬, ৭, ও ৮ নং ওয়ার্ডের অধিবাসীদের যাতায়াতের প্রধান অবলম্বন এই সড়ক সংস্কারে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার রিয়াজ উদ্দিনের স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে গত ২৫ মার্চ (২০২৪) এক প্রতিবাদী মানববন্ধন করেন স্থানীয়রা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, কেন্দুয়া উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মোফাজ্জল হোসেন ভূঁইয়ার নিকটাত্মীয় ওই ঠিকাদার বরাবরই এ ধরণের নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে সড়ক সংস্কার বা নির্মাণ করেন। কিছু দিন যেতেই সড়ক ভেঙে যায়। স্থানীয়রা প্রতিবাদ করলেও প্রভাবশালী আত্মীয়ের প্রভাব খাটিয়ে বরাবরেই পার পেয়ে যান তিনি।’
মানববন্ধনে এলাকাবাসীরা বলেন, ‘‘জরাজীর্ণ রাস্তার কারণে হাজার টাকা মণ ধান আমাদের বেঁচতে হয় ৭০০ বা ৮০০ টাকা মণে। সারাদেশে সড়ক যোগাযোগ উন্নত হলেও আমরা এর কোন সুফল পাচ্ছি না ।আমাদের জন্য সরকার ঠিকই দিয়েছেন, কিন্তু আমরা পাচ্ছি শুধুমাত্র বাজে একজন ঠিকাদারের জন্য। ভালো রাস্তা না থাকায় ধানসহ অন্যান্য ফসল আনা-নেওয়ায় খুবই অসুবিধায় পড়তে হয় আমাদের। এখানে অনেক ফিশারি আছে, কিন্তু মাছ বাজারে পাঠানোর মত ব্যবস্থা নাই। বহু মাছ পচে নষ্ট হয়। লাখ লাখ টাকার ক্ষতি করছে সে। কেউ অসুস্থ হলে তাকে কাঁধে করে নিতে হয়। এমনকী, প্রসুতি মায়েদের কিংবা অসুস্থ রোগীদের আনা নেওয়াও কঠিন হয়ে পড়ে।’
তারা বলেন, ‘আমরা ঠিকাদারকে অনেক অনুনয় করলেও সে করছে না। সে একটি ব্রিজ করেছে, অল্পদিনেই তা ফেটে গেছে। এখন কাজ করতে যে সুরকি আনছে তা একরকম মাটি। সামনে বর্ষা কাল আসছে, কিভাবে আমরা ধান তুলবো? ঠিকাদার নিজেও স্বীকার করছে সুরকী খারাপ এসেছে। আমরা ধরে ফেলেছি বলে, নইলে সে স্বীকার করতো না। এই রাস্তা সংস্কারে ২ কোটি ৪২ লাখ টাকা বাজেট হয়েছে শুনে আমরা উল্লাস করেছিলাম, কিন্তু বাজে ঠিকাদারের কারণে তা আমাদের কোন কাজেই আসছে না।’
‘আড়াই বছর আগে টেন্ডার হলেও ঠিকাদার রিয়াজ উদ্দিন সড়ক সংস্কারের কাজ সম্পন্ন করতে পারেনি। ৪ সেপ্টেম্বর.২০২৩ এ এই কাজ সমাপ্ত হওয়ার কথা ছিল। এখন শুরু হচ্ছে ২০২৪ এ। এখন কাজ শুরু করলেও এখানে নিয়ে আসা খোয়া অত্যন্ত নিম্নমানের। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আমাদের আবেদন, নিম্নমানের এই সামগ্রী সরিয়ে নিয়ে মানসম্মত সামগ্রী দিয়ে রাস্তা সংস্কার করা হোক’-বলেন স্থানীয় এক কৃষক।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক এলাকাবাসী অভিযোগ করেন, ‘বর্তমান কেন্দুয়া উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মোফাজ্জল হোসেন ভূঁইয়ার নিকটাত্মীয় হওয়ার কারণে স্থানীয়দের কোন কথাকেই পাত্তা দিচ্ছেন না তিনি। সংশ্লিষ্ট অফিসে অভিযোগ জানালেও অদৃশ্য কোন কারণে তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থাই নেওয়া হয় না।’
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য সাজু তালুকদার (৭ নং ওয়ার্ড) স্থানীয়দের এই অভিযোগ সমর্থন করে বলেন, ‘২ বছর ধরে রাস্তা কেটে রাখছে। এই রাস্তাটি ৮-১০টি গ্রামের সমন্বয়ে রাস্তা। হাজার হাজার লোক প্রতিদিন যাতায়াত করে। সীমাহীন দূর্ভোগ পোহাচ্ছেন তারা। ২ বছর পর কাজ শুরু করলেও খুবই নিম্নমানের খোয়া । এটি কাজের উপযোগী নয়। আমরা এই নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে রাস্তা নির্মাণ প্রতিহত করতে চাই।’ তিনি আরও বলেন, ‘ঠিকাদারকে স্থানীয়রা অনুরোধ করলে সে এলাকাবাসীর ওপর চড়াও হয়। তার খুঁটির জোর কোথায় তা সবাই জানতে চায়।’
অভিযোগের বিষয়ে ঠিকাদার রিয়াজ উদ্দিনের বক্তব্য জানতে তার ফোনে চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।