ছবি : বহুমাত্রিক.কম
সুনামগঞ্জ : একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে শহীদ অনেক মুক্তিযোদ্ধার কবর জুটেনি। যাদের ভাগ্যে কবর জুটেছে, স্বাধীন দেশে তাদের কবর রয়েছে নিদারুণ অযত্ন আর অবহেলায়। সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার সীমান্তের টেকেরঘাটে খনিজ প্রকল্পের অভ্যন্তরে মুক্তিযোদ্ধা শহীদ সিরাজুল ইসলামের সমাধি তেমনি একটি।
সুনামগঞ্জে স্বাধীনতা যুদ্ধে যাদের বিভিন্ন সময় মেঘালয়ের পাদদেশে সীমান্তবর্তী এলাকা জাহাঙ্গীর নগর ইউনিয়নের ডলুরায় চির নিদ্রায় সমাহিত করা হয় মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ৪৮ জনকে।
মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে শহীদ ৪৮ বীর যোদ্ধার কবরের পাশে তৈরি করা হয়েছে একটি স্মৃতিসৌধ ও মুক্তিযোদ্ধের স্মারক ভাস্কর্য ও গেইট। প্রতিটি কবর পিলার দিয়ে আলাদা করে বসিয়ে চিহ্নিত করা হয়েছে।
স্বাধীনতা যুদ্ধে ৪২জন মুসলিম শহীদের কবরের পূর্ব পাশ্বে রয়েছে ৬ জন হিন্দু মুক্তিযোদ্ধার সমাধি রয়েছে। তাদেরকে আবার আলাদা আলাদা করে দাহ করা হয়েছে। অনেকেই এখানে তাদের প্রিয়জনের সন্ধান পেয়েছেন।
জানা গেছে, ১৯৭১সালে স্থানীয় ভাবে প্রতিষ্ঠিত মুক্তি সংগ্রাম স্মৃতি ট্রাষ্ট্র শহীদের সমাধিগুলোর সংরক্ষণ করার উদ্যোগ নেয়। পরবর্তীতে আরেক বীর সেনানী সাব সেক্টর কমান্ডার সকল শহীদের নাম মার্বেল পাথরে খোদায় করে লিখে গেইটে বসিয়ে দেন।
মুক্তিযোদ্ধারা জানিয়েছেন, স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ৫নং সেক্টরের অধীনে বালাট সাব সেক্টরের আওতায় ছিল এই ডলুরা এলাকা। ডলুরার পাশ্ববর্তী সীমান্তের ওপারে মৈলাম এলাকা। আর বালাটের একটি পাহাড় ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্প। সুনামগঞ্জের ষোলঘরে ছিল হানাদার বাহিনীদের অবস্থান।
এই ক্যাম্পের আশ পাশের এলাকায় হানাদারদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের সন্মূখ যুদ্ধ হয়। বিভিন্ন সময়ে এই ডলুরায় ৪৮ জন বীর মুক্তিযোদ্বাকে সমাহিত করা হয়।
মুক্তিযুদ্ধের সময় সকল শহীদ সেনানীর কবর দেওয়ার দায়িত্ব পালন করতেন মধু মিয়া। আর শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের জানাজা পড়াতেন মুন্সি তারু মিয়া। আফাজ উদ্দিন, কিতাব আলী, আব্দুর রহিম, মোগল মিয়া, হযরত আলী এবং মফিজ উদ্দিন তারা সবাই মধু মিয়াকে সহযোগীতা করতেন। হিন্দু মুক্তিযোদ্ধাদের দাহ করার কাজ করতেন খেপু ঠাকুর। এরা সবাই ছিল প্রবাসী সরকারের ৯ সদস্য বিশিষ্ট অনুমোদিত কমিটির সদস্য।
২০০৪ সালের ১৫ মার্চ মাসে মধুূ মিয়ার মৃত্যু হলে তার শেষ ইচছা অনুযায়ী ডলুরায় ৪৮ শহীদের পাশেই সমাহিত করা হয়। ডলুরায় যে সব শহীদ চিরনিদ্রায় ঘুমিয়ে আছেন তারা হলেন- মন্তাজ মিয়া, সালাউদ্দিন, রহিম বক্স, জনাব আলী, তাহের মিয়া, আঃ হক, মুজিবুর রহমান, নূরুল হক, আঃ করিম, সরুজ মিয়া, ওয়াজিদ আলী, সাজু মিয়া, ধন মিয়া, ফজলুল হক, সামছুল ইসলাম, জয়নাল আবেদিন, মরহুজ আলী, আঃ রহমান, কেন্দু মিয়া, মস্তাক মিয়া, আঃ সাত্তার, আজমল আলী, সিরাজ মিয়া, সামছু মিয়া, তারা মিয়া, আবেদ আলী, আতাহার আলী, লাল মিয়া, চান্দু মিয়া, দানু মিয়া, মন্নাফ মিয়া, রহিম মিয়া, আলী আহমদ, সিদ্দিক মিয়া, এবি সিদ্দিক, সায়েদুর রহমান, রহমত আলী, আঃ হামিদ খান, সিদ্দিক আহমদ, আব্দুল খালেক ও মধু মিয়া। হিন্দু মুক্তিযোদ্ধারা হলেন-যুগেন্দ্র দাস, শ্রীকান্ত দাস, হরলাল দাস, অধর দাস, অরবিন্দু রায় ও কবিন্দ্র দাস।
বহুমাত্রিক.কম