-কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী
ঢাকা : কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেছেন, বিজ্ঞান গবেষণায় রক্ষণশীলতা ও সুরক্ষার ব্যাপারে আমরা সচেতন কিন্তু সত্যকে চোখ বন্ধ করে অস্বীকার করব সেই ব্যাধিটা আমাদের নাই।
শুক্রবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নওয়াব আলী সিনেট মিলনায়তনে ‘ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অন বায়োটেকনোলজি ইন হেলথ অ্যান্ড এগ্রিকালচার’ শীর্ষক দু’দিনের বিজ্ঞান সম্মেলনের উদ্বোধনী পর্বে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
গ্লোবাল নেটওয়ার্ক অব বাংলাদেশি বায়োটেকনোলজিস্ট(জিএনওবিবি)’র আয়োজিত এই সম্মেলনে দেশি-বিদেশি চারশ’ গবেষক ও বিজ্ঞান শিক্ষার্থী অংশ নিচ্ছেন। স্বাস্থ্য ও কৃষিতে জীবপ্রযুক্তির বহুমূখি ব্যহারের সম্ভাবনা এই আয়োজনে তুলে ধরা হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘গবেষণায় জীবপ্রযুক্তির ব্যবহার সুলভমূল্যে ওষুধের সেবার দ্বার উন্মূক্ত করছে।কৃষি উৎপাদনের বিভিন্ন ক্ষেত্রেও এর অবদান অনেক।’
রাজনৈতিক নেতৃত্বের বিজ্ঞানমনষ্কতার অভাব দেশের জন্য ক্ষতির কারণ হিসাবে বর্ণনা করে মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘এখানে একটি কথা আমি বলতে চাই, বিজ্ঞান মনষ্কতা যে কতদূর এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে একটা দেশকে..যদি বিজ্ঞান মনষ্কতা না থাকে তাহলে কত পিছিয়ে যেতে পারে আমি সেবিষয়ে বলতে চাই-সেই ১৯৯২-৯৩ সালে যখন ফাইবার অপটিক ক্যাবল সারাবিশ্বে ছড়ানোর প্রশ্নটা আসলো বাংলাদেশ বিনাখরচে এই ক্যাবলের সঙ্গে যুক্ত হতে পারতো, কোনো খরচ লাগতো না।’
‘কিন্তু তখন জাতীয় নিরাপত্তার কথা বলে ফাইবার অপটিক ক্যাবল আনলাম না। সেই ফাইবার অপটিকস ক্যাবল আজকে নিজেদের খরচে আনতে হয়েছে। কাজেই রক্ষণশীলতা, অজ্ঞতা, মূঢ়তা একটা দেশকে কতটা পিছিয়ে নিয়ে পারে এটি তার উদাহরণ।’
কৃষিতে জিনপ্রকৌশল প্রযুক্তির ব্যবহারে অনেক দেশের দ্বিমূখি অবস্থানের সমালোচনা করে কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘অনেক দেশ এখনো জিএম ফুড নিয়ে রক্ষণশীলতা নিয়ে বসে আছে। তাদের মধ্যে দ্বিচারিতা কাজ করছে। আমি যদি কাপড়টা জিএম পড়ি তাহলে ঠিক আছে, অর্থাৎ তুলাটা ঠিক আছে।কিন্তু খাবার না। তুলার যে তেলটা খাচ্ছেন সেটা কী? এই যে দ্বিচারিতা বা চোখ বুঝে থাকা বিজ্ঞান মনষ্কতা নয়।’
‘আমরা কনজারভেটিভ নই। রক্ষণশীলতা ও সুরক্ষার ব্যাপারে আমরা সচেতন কিন্তু সত্যকে চোখ বন্ধ করে অস্বীকার করব সেই ব্যাধিটা আমাদের নাই। নতুন জিনিসের আলোচনা-সমালোচনা থাকবে, কিন্তু আমি যে জিনিসটা অনুরোধ করব চোখ খোলা রেখে কান খোলা রেখে ..যদি ভুল করে থাকেন অবশ্যই সেটাকে ম্যানশন করবেন..বলবেন কিন্তু বাথটাবের সঙ্গে বাচ্চাকেও ফেলে দিবেন তা হতে পারে না’-বলেন সরকারের এই জ্যেষ্ঠ মন্ত্রী।
তিনি আরও বলেন, ‘জিএম’র পরে আরও নতুন আবিষ্কার বিজ্ঞানে আসবে, নতুন জেনারেশন আসবে, আমি হয়ত তখন থাকব না, নবজাতক শিশু যারা বড় হয়ে গবেষণায় যুক্ত হবে তার ভিত্তি আমরা রচনা করে যাচ্ছি।তার প্রমাণ আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। যে ফাইবার অপটিক ক্যাবল বাদ দেয়া হয়েছিল, সেই বাংলাদেশ এখন আইসিটি’তে বীরদর্পে এগিয়ে যাচ্ছে। এটাকেই বলে অগ্রসর চিন্তার নেতৃত্ব।’
জিএনওবিবি’র প্রেসিডেন্ট এবাং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমেস্ট্রি ও মলিক্যুলার বায়োলজি’র অধ্যাপক জেবা ইসলাম সিরাজের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন ঘোষণা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোঃ আখতারুজ্জামান। অনুষ্ঠানে ‘স্বাস্থ্য ও কৃষিতে বায়োটেকনোলজি’ শীর্ষক গবেষণা নিবন্ধ উপস্থাপন করেন জাপানের ইয়াতি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগি অধ্যাপক ও জিএনওবিবি-র সহ-প্রতিষ্ঠাতা ড. আবিদুর রহমান।
এতে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন-ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. এম ইমদাদুল হক ও যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম আনোয়ার হোসেন। অনুষ্ঠান কমিটির আহ্বায়ক ও আইসিডিডআর,বি-র বায়োসেফটি বিভাগের প্রধান ড. আসাদুলঘানি ধন্যবাদ জ্ঞান করেন।
দু্’দিনের এই সম্মেলনে বিষয়ে আয়োজক সংগঠনের জেনারেল সেক্রেটারি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. এম মঞ্জুরুল করিম বহুমাত্রিক.কম-কে বলেন, ‘নতুনদের সক্ষমতা দেয়া হচ্ছে এই আয়োজনে। প্রতিথযশা বিজ্ঞানীদের সঙ্গে মেলবন্ধন সৃষ্টি করা। যেন নেটওয়ার্কিয়ের সুযোগ, দুপক্ষ থেকেই সৃষ্টি হয়। এছাড়া ১২০জন হচ্ছে পোস্টার প্রেজেন্টার। তারা থিমেটিকভাবে তাদের পোস্টার উপস্থাপন করবেন।’
‘বলা যায় এই আয়োজনে ১৬০টি গবেষণা প্রবন্ধ এবার পোস্টার এবং ওর্যাল ফর্মে উপস্থাপিত হচ্ছে। বলে রাখা ভাল, পুরো জীবপ্রযুক্তিকে ৯টি সেশনে ভাগ করেছি আমরা। একেকটি সেশন একেটি বায়োটেকনোলজির বিষয়ের ওপর ডেডিকেটেডে। যেমন ধরুন এগ্রিকালচারাল বায়োটেকনোলজি, আরেকটি হচ্ছে ফিশারিজ, অ্যানিমেল বায়োটেকনোলজি, ফার্মাসিউটিকেলস বায়োটেকনোলজি, ন্যানো বায়োটেকনোলজি, জেনেটিক্স অ্যান্ড জেনোমিক্স, মেডিক্যাল বায়োটেকনোলজি ইত্যাদি-যোগ করেন অধ্যাপক করিম।
তিনি আরও বলেন, ‘গুরুত্বপূর্ণ একটি সেশন হচ্ছে বায়ো এথিকস অ্যান্ড বায়োসেফটি। এটাকে আমরা একটি জেনারেল সেশন রেখেছি। যার মাধ্যমে এথিক্যাল বিষয়গুলো এবং সেফটি-সিকিউরিটির বিষয়গুলো সকলের সামনে একযোগে উপস্থাপনের সুযোগ রেখেছি।’
আন্তর্জাতিক এই সম্মেলনের টাইটেল স্পন্সর স্কয়ার ফার্মাসিউটিকেলস লিমিটেড ও এসিআই এগ্রিবিজনেস। গণমাধ্যম সহযোগি হিসাবে রয়েছে প্রথম আলো’র সাময়িকী বিজ্ঞানচিন্তা, দ্য ডেইলি স্টার। সম্প্রচার সহযোগি : সময় টেলিভিশন। আয়োজনের অনলাইন মিডিয়া পার্টনার বহুমাত্রিক.কম।
বহুমাত্রিক.কম