
ঢাকা : আজ ঐতিহাসিক ৭ জুন, ছয় দফা দিবস। ছয় দফা কর্মসূচি বাঙ্গালি জাতির `মুক্তির সনদ` (Charter of Freedom) বা `ম্যাগনাকার্টা` হিসাবে পরিচিত।
মাথায় একটা জিনিস কাজ করছিলো না, ১৯৬৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান লাহোরে বিরোধী দলের একটা সম্মেলনে ছয় দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেন এবং সেই বছরের ২৩ মার্চ লাহোরের এক সংবাদ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেন। কিন্তু ৭ জুন কেন ছয় দফা দিবস হিসাবে পালন করা হয়? পরে এই আন্তঃজাল ঘেটে সঠিক তথ্যগুলো উদঘাটন করা সম্ভব হল।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি তাসখন্দ চুক্তিকে কেন্দ্র করে লাহোরে অনুষ্ঠিত সম্মেলনের সাবজেক্ট কমিটিতে ছয় দফা উত্থাপন করেন এবং পরের দিন সম্মেলনের আলোচ্যসূচিতে যাতে এটি স্থান পায় সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেন।
এই সম্মেলনে বঙ্গবন্ধুর এ দাবির প্রতি আয়োজক পক্ষ থেকে গুরুত্ব প্রদান করেনি। তারা এ দাবি প্রত্যাখ্যান করে। প্রতিবাদে বঙ্গবন্ধু সম্মেলনে যোগ না দিয়ে লাহোরে অবস্থানকালেই ছয় দফা উত্থাপন করেন।
সেদিন পাকিস্তানের তৎকালীন সেনাশাসক জেনারেল আইয়ুব খান অস্ত্রের ভাষায় ছয় দফা মোকাবেলার ঘোষণা দিয়েছিলেন। ছয় দফার সমর্থনে ১৯৬৬ সালের ১৩ মে আওয়ামী লীগ আয়োজিত পল্টনের জনসভায় ৭ জুন হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
মাসব্যাপি ৬ দফা প্রচারে ব্যাপক কর্মসূচিও ঘোষণা করা হয়। সামরিকজান্তার ১৪৪ ধারা, নির্যাতন, নিষ্পেষণ ও গুলিবর্ষণ উপেক্ষা করে দেশব্যাপী ছয় দফা দাবিতে ছাত্র, শ্রমিক, কৃষক, মজুরসহ আপামর জনগণের স্বতঃস্ফুর্ত আন্দোলনে ও শ্রমিকনেতা মনু মিয়াসহ এগারো শহীদের রক্তে রঞ্জিত ৭ জুন অমরত্ব লাভ করল।
৭ জুন স্বীকৃতি অর্জন করল বাঙালির `মুক্তির সনদ` ছয় দফার দিবস রূপে। [সূত্রঃ দৈনিক জনকন্ঠ, ৭ জুন, ২০১৫ ও বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের জ্যেষ্ঠ কন্যা শারমিন আহমদের `৭ জুন ছয় দফা দিবস স্মরণে` শীর্ষক লেখা]
তাজউদ্দীন আহমদ এ প্রসঙ্গে বলেন “জাতীয় মুক্তিসংগ্রাম এগোয় সর্পিল গতিতে। আঁকাবাঁকা পথ ধরে। রক্তপিচ্ছিল এই পথ। বাধা এখানে অসংখ্য। পার হতে হয় অনেক চড়াই উৎরাই। সংগ্রামের এক একটা মোড় পরিবর্তনে ইতিহাসে সংযোজিত হয় নতুন অধ্যায়।
৭ জুন আমাদের মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাসে এমনি একটি যুগান্তকারী মোড় পরিবর্তন। ৭ জুনকে এক অর্থে বলা যায় ৬ দফার দিবস। এই দিনে ৬ দফার দাবিতে বাঙ্গালী রক্ত দিতে শুরু করে। স্বাধিকারের এই আন্দোলনই ধাপে ধাপে রক্তনদী পেরিয়ে স্বাধীনতাযুদ্ধে গিয়ে শেষ হয়েছে। কাজেই বাঙ্গালী জাতির স্বাধীনতা সংগ্রামে ৭ জুন অমর। অবিস্মরণীয় এক ঐতিহাসিক দিন ৭ জুন।”-সূত্রঃ দৈনিক বাংলা, ৭ জুন, ১৯৭২। ইতিহাসের পাতা থেকে, সম্পাদনা সিমিন হোসেন রিমি।
লেখক : ছাত্রলীগ নেতা, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
বহুমাত্রিক.কম