ছবি-বহুমাত্রিক.কম
নওগাঁ : আদালতের আদেশ না থাকলেও নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার কোলা ইউনিয়নে পার আধাইপুর গ্রামে প্রভাবশালীর হয়ে আদিবাসী এক পরিবারের বাড়ি-ঘর ভেঙ্গে দিয়েছে থানা পুলিশ। একই সাথে তাদের উচ্ছেদ করে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছে বাড়ি-ঘরের অবকাঠামোগুলো।
এরপর থেকে আদিবাসী ও পরিবারটি আশ্রয়হীন হয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। এ বিষয়ে রোববার বিকেলে আদিবাসী ওই পরিবারের গৃহবধূ মিরা রানী ওরাউ (৩৮) তার দুই সন্তান নিয়ে নওগাঁ জেলা প্রেস ক্লাবে এসে লিখিত অভিযোগ করে বিচার প্রার্থনা করেন।
মিরা রানী বলেন, পার আধাইপুর গ্রামে ১৭ শতাংশ একটি কবলাকৃত জমিতে বাড়ি-ঘর করে তিনি দীর্ঘ দিন ধরে স্বামী ও দুই সন্তানদের সাথে নিয়ে বসবাস করে আসছিলেন। কিন্তু একই এলাকার প্রভাবশালী গোলাম মোস্তফা মিথ্যা একটি দলিল মূলে জমিটি জোড়পূর্বক দখলে নিতে চান। দলিলটি প্রশাসনের অনুমতিও নেই।
এ নিয়ে বেশ কয়েকবার প্রভাবশালী গোলাম মোস্তফা ও তাদের লোকজন মিরার বাড়ি-ঘর ভেঙ্গে উচ্ছেদ করে জমিটি জবর দখলের চেষ্টা করেন। বিষয়টি নিয়ে আদালতে মামলা রয়েছে। এ ঘটনা থানা পুলিশ ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা জানেন।
এরই মধ্যে গত শনিবার দুপুরে আদালতের অনুমতি না নিয়েই বদলগাছী থানার ওসি রফিকুল ইসলামের নির্দেশে এসআই নূরুল ইসলাম ও সঙ্গীয় ফোর্সসহ রহস্যজনক ভাবে স্থানীয় প্রভাবশালী ভূমি দস্যু গোলাম মোস্তফার পক্ষ নিয়ে মিরার বাড়ি ঘর ভেঙ্গে দেয়। এ সময় গোলাম মোস্তফা ও তার লোকজনও পুলিশের সাথে ঘর-বাড়ি ভাঙ্গায় অংশ নেয়। তারা ভাংচূর করে মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করে নিয়ে যাবার সময় বাকি আসবাব পত্রে আগুন ধরিয়ে দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়।
তিনি আরো জানান, ঘটনার পর আশ্রয়হীন হয়ে দুই সন্তান ও স্বামীকে নিয়ে নিজেদের নিরাপত্তাহীনতা ও বাস্তভিটা হারানো আশংকায় ভাসমান জীবন যাপন করছেন।
গোলাম মোস্তফা জানান, জমিটি ১৯৯১ সালে স্থানীয় বোনা ওরাউ এর কাছ থেকে তিনি কিনেছেন। ক্রয় সূত্রে তিনিই জমিটির প্রকৃত মালিক। আদিবাসী মিরা ওরাউ জোড় করে ঘর-বাড়ি তুলে অবৈধ ভাবে দখল করেন। এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ দিলে পুলিশ তা ভেঙ্গে দেয়।
বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় কোলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান স্কেন্দার মির্জা বাচ্চু জানান, যেহেতু আদালতে মামলা আছে সেহেতু মামলার রায়ের পূর্বে কিছু করা ঠিক হয়নি। তিনি আরো বলেন, থানা পুলিশ যে ঘটনা ঘটিয়েছে তা আইনের পরিপন্থী। এ ধরনের ঘটনা পুলিশ প্রশাসনকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বদলগাছী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রফিকুল ইসলাম জানান, মিরা রানী ওরাউ ও তার লোকজন জমিটি নিয়ে বারবার গোলাম মোস্তফাকে হয়রানী করে আসছিলেন।
অপর এক প্রশ্নে জবাবে ওসি বলেন, আদালতের নির্দেশ না থাকলেও মামলার প্রেক্ষিতে থানা পুলিশের নিজস্ব ক্ষমতা বলে মিরা রানীকে ওই জমি থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। তবে বাড়ি ঘরের জিনিসপত্র লুটের কথা অস্বীকার তিনি আরো বলেন, আসবাবপত্রগুলো থানা হেফাজতে রয়েছে।
পুলিশ সুপার মোজাম্মেল হক জানান, আদালতের নির্দেশ না থাকলে কোন পুলিশ কর্মকর্তার কাউকে কোন সম্পত্তি থেকে উচ্ছেদ করার ক্ষমতা রাখে না। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত তাকে কেউ কোন অভিযোগ করেননি। তবে বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বহুমাত্রিক.কম