![আমি থাকবো না, চলে যাবো: মুহম্মদ জাফর ইকবাল আমি থাকবো না, চলে যাবো: মুহম্মদ জাফর ইকবাল](https://www.bahumatrik.com/media/imgAll/2014May/zafor-sir20150831125646.jpg)
ছবি-সংগৃহীত
সিলেট: শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনরত শিক্ষকদের ওপর ছাত্রলীগ কর্মীদের হামলার ঘটনায় ক্ষোভে-অপমানে মুহ্যমান জনপ্রিয় লেখক ও বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল।
ঘটনার পর দিন সোমবার দুপরে বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনরত শিক্ষকদের প্রতিবাদ সমাবেশে দেয়া বক্তৃতায় দীর্ঘদিনের কর্মস্থল ছাড়ার ঘোষণাও দেন তিনি। ক্ষুব্ধ জাফর ইকবাল বলেন, ‘আপনাদের যদি সমস্যা হয়, তাহলে আমি থাকবো না, চলে যাবো। তবে যাওয়ার আগে দেখে যেতে চাই আপনারা মাথা তুলে দাঁড়িয়েছেন।’
‘এর আগেও এখান থেকে আমাদের তাড়ানোর চেষ্টা করা হয়েছে। সেটা হয়েছে বিএনপি-জামায়াত সরকারের আমলে। মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীরা সেটা করেছে। আমি তাদের কাছে মাথা নত করিনি।এখন চলে গেলেও সান্ত্বনা থাকবে, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বলে দাবিদারদের সময়েই চলে গেলাম’-বলেন প্রগতিশীল এই লেখক-শিক্ষাবিদ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যবিরোধী আন্দোলনরত ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ শিক্ষক পরিষদ’ আয়োজিত এই সমাবেশে মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, এর আগে আপনাদের কর্মসূচিতে আমি কখনো আসিনি। কারণ সব সময় বলা হয়, আমি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছি-রাজনীতি করছি। সবাই বলে, এই দম্পত্তি চলে গেলেই ভালো। এতো অপমান নিয়ে থাকা যায় না। একবার চলে যেতেও চেয়েছিলাম। কিন্তু শিক্ষার্থীরা এমন একটা পরিবেশ তৈরি করলো যে জন্য আর যাওয়া গেলো না।’
স্পষ্টবাদিতা আর মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে অবস্থান নেয়ার কারণে বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক নিগৃহের শিকার জাফর ইকবাল বলেন, ‘আমি একমাত্র মানুষ যাকে বিএনপি, জামায়াত, জাতীয়পার্টি, হেফাজত, আওয়ামী লীগ, বাম সংগঠনগুলো একযোগে অপছন্দ করে। এখন আওয়ামী লীগও অপছন্দ করে।’
আত্মসমালোচনা করে এই শিক্ষক বলেন, ‘আমি সবার কাছে ক্ষমা চাই,আমরা এখানে এমন কিছু ছাত্র সৃষ্টি করেছি যাদের ব্যবহার করা যায়, যারা শিক্ষকদের গায়ে হাত তুলে। এই ব্যর্থতার দায় আমার।’
রোববারে চোখের সামনে ছাত্রদের হাতের শিক্ষকদের লাঞ্ছিত হওয়ার দুঃখজনক স্মৃতি সারাজীবন পীড়া দিবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘শরীরে আঘাত লাগলে সেরে যায়। শরীরের ব্যথা ভালো হয়, কিন্তু মনের ব্যথা ভালো হয় না। আমাদের মনে আঘাত লেগেছে। আমাদের শিক্ষকদের গায়ে হাত তোলা হয়। অথচ সবাই বসে বসে সে দৃশ্য দেখে।’
উপাচার্যের অপসারণ দাবিতে শিক্ষকদের নমনীয় আন্দোলনের সমালোচনা করে জাফর ইকবাল বলেন, এটা বোকাদের আন্দোলন। এর মতো বোকাদের সমাবেশ আর নাই। ক্লাস পরীক্ষা সব কিছু ঠিকঠাক মতো নেয়া হচ্ছে, আবার আন্দোলনও হচ্ছে, এদেশে এভাবে কখনো দাবি আদায় হয় না। এমন অহিংস আন্দোলন কর্মসূচি দেখে মহাত্মা গান্ধীও লজ্জা পেতেন। অথচ এই আন্দোলন কর্মসূচির বিরুদ্ধেই ছাত্রলীগকে লেলিয়ে দেয়া হয়েছে।’
ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে শাবিতে সোমবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত কর্মবিরতি পালন করেন উপাচার্যবিরোধী আন্দোলনরত শিক্ষকরা। তবে সকল বিভাগের পরীক্ষা কর্মবিরতির আওতামুক্ত ছিলো । কর্মবিরতি শেষে তারা মিছিল ও সমাবেশ করেন। বিশ্বিদ্যালয়ের ক্যান্টিন থেকে মিছিলটি শুরু হয়ে উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়, যেখানে যোগ দেন অনেক সাধারণ শিক্ষার্থীরাও।
সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, অধ্যাপক সৈয়দ সামসুল আলম, অধ্যাপক ইয়াসমিন হক, অধ্যাপক শরীফ মোহাম্মদ শরাফউদ্দিন, অধ্যাপক তুলসী কুমার দাস, অধ্যাপক আনোয়ারুল ইসলাম দিপু প্রমুখ।
বহুমাত্রিক.কম