Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ১৫ ১৪৩১, সোমবার ২৯ এপ্রিল ২০২৪

জলবায়ু পরিবর্তন

কৃষিখাতে অভিযোজন সক্ষমতা বাড়ানোর তাগিদ ড. আতিউরের

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২১:৫৯, ৮ অক্টোবর ২০২৩

আপডেট: ২২:১৯, ৮ অক্টোবর ২০২৩

প্রিন্ট:

কৃষিখাতে অভিযোজন সক্ষমতা বাড়ানোর তাগিদ ড. আতিউরের

প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখছেন ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আতিউর রহমান। ছবি: আরডিআরএস

জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগ মোকাবিলায় বাংলাদেশের কাছে শিখতে পারে বাকি বিশ্ব এমন মন্তব্য করেছেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ও ইমেরিটাস প্রফেসর ড. আতিউর রহমান। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় বাংলাদেশের সামর্থ্য অনেক বেড়েছে যা বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশ এ ব্যাপারে অগ্রগণ্য।

বেসরকারি সংস্থা আরডিআরএস আয়োজিত ‘জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন, কৃষি উদ্ভাবন ও রিজিলিয়েন্স’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। রাজধানীর রেডিসন হোটেলে শনিবার অনুষ্ঠিত এই সেমিনারে ড. আতিউর বলেন, ‘অল্প কিছুদিন আগেও জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধিকে ভবিষ্যতের বিষয় হিসেবে মনে করা হলেও, এখন তা খুবই প্রাসঙ্গিক। জলবায়ু পরিবর্তন বর্তমানে আমাদের সবার ওপর এসে পড়েছে। একে এখনই মোকাবেলা করতে হবে। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় বাংলাদেশের সামর্থ্য অনেক বেড়েছে, বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশ এ ব্যাপারে অগ্রগণ্য। জলবায়ু পরিবর্তন জনিত দুর্যোগ মোকাবিলায় বাকি বিশ্বের বাংলাদেশের থেকে শেখার আছে।’

তিনি এ প্রসঙ্গে জার্মানিতে হওয়া সাম্প্রতিক ঝড়ের কথা উল্লেখ করে বলেন, সেই ঝড়ে দুই শতাধিক মানুষ হতাহত হয়েছেন অথচ বাংলাদেশের আম্পানের মতো মারাত্মক সাইক্লোনেও প্রাণহানির সংখ্যা অতি সামান্য। এর থেকেই প্রমাণিত হয়, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় বাংলাদেশের সক্ষমতা কতখানি। জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে দেশের কৃষিখাতের অভিযোজনের সক্ষমতা বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করে সাবেক কেন্দ্রীয় ব্যাংক গভর্নর বলেন, ‘দেশে সৌরবিদ্যুৎ চালিত সেচপাম্পের সংখ্যা আরও বাড়াতে হবে। এতে কৃষিকাজে সেচে ব্যবহৃত জ্বালানির খরচই শুধু কমবে না, পরিবেশ দূষণও অনেকটাই হ্রাস পাবে।’

চরাঞ্চল, দক্ষিণাঞ্চলসহ দেশের পিছিয়ে থাকা অঞ্চলগুলোতে সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্রিক সেচ ব্যবস্থা ও বায়োগ্যাসের মত পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির প্রসারে এগিয়ে আসতে আরডিআরএসের মত বেসরকারি সংস্থা ও এনজিওগুলোকে এগিয়ে আসার কথা জানান ড. আতিউর রহমান।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ইতিমধ্যেই আমাদের ভৌত ও পরিবেশগত সম্পদ, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডসহ সার্বিক সক্ষমতার ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। ফলে মানুষের জীবন ও জীবিকা, খাদ্য, পানি, সম্পদ, বসতি, স্বাস্থ্য এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে নিরাপত্তাহীনতার সৃষ্টি করছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে পরিবেশগত অবনতি ঘটছে, খাদ্য নিরাপত্তা কমছে। এতে বাড়ছে মানুষে মানুষে দ্বন্দ্ব। একই সঙ্গে বিভিন্ন রোগ ও স্বাস্থ্যের ঝুঁকিও বাড়ছে।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ পড়েন ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার ডেপুটি প্রজেক্ট লিডার এবং স্বাধীনতা পুরস্কার বিজয়ী মৃন্ময় গুহ নিয়োগী। তিনি বলেন, কৃষি উদ্ভাবনের জন্য আরও গবেষণা প্রয়োজন। উচ্চফলনশীল ফসলের প্রবর্তন ও বাস্তবায়ন দেশকে সবার জন্য খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সহায়তা করবে। কিন্তু এর জন্য মাঠপর্যায়ে আরও নিবিড়ভাবে কাজ করতে হবে।

সেমিনারে সভাপতি ঢাকা স্কুল অব ইকোনমিকসের চেয়ারম্যান কাজী খলীকুজ্জামান আহমদ বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের দায় উন্নত বিশ্বের, কিন্তু খেসারত দিতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। তিনি বাংলাদেশের মতো জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ঝুঁকিতে থাকা  দেশগুলোকে ন্যায্য অর্থনৈতিক বণ্টনের আওতায় আনার ওপর জোর দেন।

সেমিনারের অন্যতম আলোচক চ্যানেল আইয়ের পরিচালক শাইখ সিরাজ বলেন, বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন এবং স্থিতিস্থাপকতা, কৃষিতে উদ্ভাবন এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করার জন্য আরডিআরএস চমৎকার উদাহরণ তৈরি করেছে। বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলও জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থার মধ্যে আছে।

অনুষ্ঠানে আরও আলোচনা করেন পিকেএসএফের পরিচালনা পরিষদের সদস্য মো. আবদুল মুঈদ। আরডিআরএসের চেয়ারপারসন পারভীন মাহমুদ অনুষ্ঠানটি উদ্বোধন করেন। আরডিআরএস বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক তপন কুমার কর্মকার ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer