Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ১২ ১৪৩১, শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪

সুনামগঞ্জে ভিজিএফ কার্ডের তালিকা তৈরীতে ব্যাপক অনিয়ম

জাহাঙ্গীর আলম ভূঁইয়া, সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১১:৫০, ১২ জুন ২০১৭

আপডেট: ০০:০০, ৩১ ডিসেম্বর ১৯৯৯

প্রিন্ট:

সুনামগঞ্জে ভিজিএফ কার্ডের তালিকা তৈরীতে ব্যাপক অনিয়ম

সুনামগঞ্জ : সুনামগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলায় ভিজিএফ কার্ডে নামের তালিকা তৈরীতে ব্যাপক অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ করা হয়েছে।

প্রথমে প্রকাশ না পেলেও এখন একের পর এক তথ্য ফাঁস হচ্ছে বিভিন্ন উপজেলায়। ক্ষতিগ্রস্তরা ত্রাণ না পেয়ে ও অনেকেই টাকার বিনিময়েও ত্রাণ না পেয়ে ঐসব চাঁদাবাজদের গণধোলাই ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে এলাকাবাসী।

ভিজিএফ কার্ড তৈরীতে অর্থের লেনদেন, একেই পরিবারে ২-৩জন,এলাকায় নেই সে সব পরিবারের সদস্যদের তালিকায় নাম অর্šÍভুক্তি সহ নানান অভিযোগ উঠছে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর,জামালগঞ্জ,বিশ্বম্ভরপুর,দিরাই শাল্লা, ধর্মপাশা সহ ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা গুলোতে। এছাড়াও হাওর বেষ্টিত এলাকায় ত্রান বিতরনে করতে দেশ ও বিদেশের লোকজন সহযোগীতার হাত বাড়ালেও তাদের-কে সঠিক ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের নাম না দিয়ে টাকার বিনিময়ে ত্রাণ দিচ্ছে চেয়ারম্যান ও মেম্বারগন অভিযোগ রয়েছে স্থানীয় এলাকাবাসীর।

আর নামে বে-নামে দেওয়া ভিজিএফ কার্ডের প্রথম কিস্তির বরাদ্ধ পায় নি অনেকেই। এছাড়াও এই সব বরাদ্ধ কোথায় যায় কেউ জানে না। সরকারী বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা বঞ্চিত ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের মাঝে ক্ষোবের সঞ্চার হচ্ছে। আর ঐসব দূর্নীতিবাজঁদের কঠিন শাস্তি না হওয়ায় জন্য প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে সরকার। ভিজিডি, ফেয়ারপ্রাইজ, ওএমএস ও ভিজিএফ কার্ডে তালিকায় নাম উঠানোর কথা বলে সুকৌশলে হাতিয়ে নিয়েছে লক্ষ লক্ষ টাকা। ত্রাণ না পাওয়ার ভয়ে অনেকেই মুখ খুলছেন না।

ঐসব অনিয়ম-দূর্নীতির কারণে বিভিন্ন জেলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, জেলার উর্ধবতন কর্মকর্তা সহ দূর্নীতি দমন কমিশন বরাবরে অভিযোগ দাখিল করেছে এলাকাবাসী। জানাযায়,জেলার বিশ্বাম্ভরপুর উপজেলার ফতেহপুর ইউনিয়নে একের পর এক অভিযোগ উঠেই যাচ্ছে আর সংশ্লিষ্টরা শুধু দায়সারা ভাবে এরিয়ে যাচ্ছেন। সম্প্রতি এ ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ড সদস্য অরুন কান্তির বিরোদ্ধে ভিজিএফ তালিকা তৈরীতে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এলাকায় নেই সেই সব পরিবারের নামে ভিজিএফ কার্ডে তালিকা তৈরী করেছেন।

এ ওয়ার্ডে নোয়াগাও রতিন্দ্র তালুকদার(তালিকার ক্রমিক নং ১৪৭৮) ও তার ছেলে পল্লব তালুকতার(তালিকার ক্রমিক নং ১৫০৮)ঢাকায় থাকে। মিলটন তালুকদার(১৪১৮) ও তার মা মিনা তালুকদার(তালিকার ক্রমিক নং ১৪৯৭),পটল দাসের স্ত্রী মায়া দাস ও তার ছেলে অরুন দাস মিলে বরাদ্ধ পেয়েছে ৩টি নামে(১০৮০,১৪৯৪,১৮৩২)।

এছাড়াও ঠিকানা পরির্বতন করে ভিজিএফ কার্ডের সুবিধা নিয়েছেন,গোপাল দাসের ছেলে বিদ্যুৎ দাস ও বিমান তালুকদার (১৬১৯,১৭৬৩) তারা ঠিকানা পরিবর্তন করে দুই নামে বরাদ্দ নিয়েছেন। অভিযোগ স্বীকার করে ইউপি সদস্য অরুন কান্তি বলেন,ভিজিডি,ফেয়ারপ্রাইস তালিকায় না থাকায় কিছু নাম পরির্বতন করা হয়েছে।

রঞ্জির চৌধুরী রাজন বলেন, কিছু ভূল ছিল তা সংশোধনের চেষ্টা করা হচ্ছে। অন্য দিকে,জেলার তাহিরপুরে কাতার চ্যারিট্যাবল ট্রাষ্ট হাওরাঞ্চলে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের সহায়তা দেয়। দক্ষিন শ্রীপুর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে নামের তালিকা আসে। অসহায় কৃষকদের কাছ থেকে জনপ্রতি ৫০০করে টাকা হাতিয়ে নেন ১,২ ও ৩ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত আসনের সদস্য ও লামাগাঁও গ্রামের বাসিন্দা ইউপি সদস্যা হাফসা বেগমের স্বামী কয়েস মিয়া ও তার লোকজন।

গত বৃহস্পতিবার তান না পেয়ে রাত ৮টার সময় উপজেলার দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নের লামাগাঁও বাজারে ইউপি সদস্যা হাফসা বেগমেরর স্বামী কয়েস মিয়াকে আটক করেন গনধৌলাই দেয় স্থানীয় উত্তেজিত জনতা। স্বামীকে উদ্ধার করতে গিয়ে ইউপি সদস্যা হাফসা বেগমও উত্তেজিত জনতার হাতে লাঞ্চিত হয়। অন্য দিকে,বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক পরিবারের ভিজিএফ কার্ডে নামের তালিকা প্রনয়ণে এক ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে স্বজন-প্রীতি ও অনিয়ম দূর্নীতির লিখিত অভিযোগ গত ৪জুন দক্ষিন বড়দল ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য তাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের মহা পরিচালক বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন একই ওয়ার্ডের বাসিন্দা রহমত আলী।

যার অনুলিপি দেয়া হয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়,ত্রান মন্ত্রনালয় ও স্থানীয় সংসদ সদস্যকে। সেই সাথে অভিযোগের কপি স্থানীয় সাংবাদিকদের হাতে হাতে পৌঁছে দেয় অভিযোগকারী রহমত আলী। লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে জানা যায়,দক্ষিন বড়দল ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য তাজুল ইসলাম বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের ভিজিএফ কার্ডে নামের তালিকা প্রনয়ণে তার আত্মীয়-স্বজন সহ একই পরিবারের একাধিক লোকজনের নাম অর্ন্তভূক্ত করে।

অভিযোগে উল্লেখ ইউপি সদস্য তাজুল ইসলামের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ ভিজিএফ এর তালিকায় রয়েছেন তার ছেলে আসাদুজ্জামান মানিক,স্ত্রী রিতা বেগম,মাতা জহুরা খাতুন,বড় ভাই নুরুল ইসলাম ও বড় ভাইয়ের ১ম স্ত্রী তাহেরা বেগম,২য় স্ত্রী রহিমা খাতুন। তালিকায় আরো রয়েছে ছোট ভাই নাজির ইসলাম ও ছোট ভাই নাজির ইসলামের স্ত্রী মর্জিনা বেগম, মেয়ে রিমা আক্তার,ছেলে রাখাব উদ্দিন,আর এক ছোট ভাই সাইফুল ইসলাম,ইউপি সদস্যে তাজুল ইসলামের ভগ্নিপতি শফিকুল ইসলাম ও বোন হাসিনা বেগম, ভাগ্নি সুমাইয়া আক্তার,ভাগ্না রেজাউল করিম।

চাচাতো ভাই মাফিকুল ইসলাম, চাচাতো বোন শাহানারা বেগম, চাচী শাহেদা খাতুন এর নাম ভিজিএফএর তালিকায় অর্ন্তভূক্ত করা হয়েছে। এ বিষয়ে অভিযোগকারী রহমত আলী জানান,ইউপি সদস্য তাজুল ইসলাম প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকায় তাদের নাম অন্তর্ভূক্ত না করে তার আত্মীয় স্বজেনর নাম অর্ন্তভুক্ত করেছে। যে কারণে গ্রামবাসীর পক্ষে আমি এর সুষ্ট তদন্ত দাবী করে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দিয়েছি।

অভিযুক্ত দক্ষিন বড়দল ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য তাজুল ইসলাম বলেন,আমি প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের নামেই তালিকা প্রনয়ন করেছি। দক্ষিন বড়দল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আজহার আলী বলেন,৮নং ওয়ার্ডের কুকর কান্দি গ্রামবাসী অনিয়মের বিষয়ে আমাকে অবহিত করেছে। একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প ও দক্ষিন বড়দল ইউনিয়ন ভিজিএফ তদারকি কর্মকর্তা মনু লাল রায় বলেন,বিষয়টি শুনেছি। তালিকায় স্বজনপ্রীতি প্রমান হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন,বিষয়টি জানতে পেরে পুলিশ ফোর্স পাঠানো হয়েছে। ঘটনার সত্যতা পেলে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer