ছবি: সংগৃহীত
শেরপুরে চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (সিজেএম) কোর্টে জনবল নিয়োগে কঠোর গোপনীয়তা ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্নের উদ্রেক হয়েছে। সেইসাথে বিষয়টি বিভিন্ন মহলে জানাজানির পর তা দামাচাপা দিতে চলছে নানা তৎপরতা। অন্যদিকে ঐ গোপন নিয়োগ বাতিলসহ তদন্ত সাপেক্ষে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি উঠেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শেরপুরের চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (সিজেএম) কোর্টের আওতায় সম্প্রতি বেঞ্জ সহকারী, ক্যাশ সরকার, প্রসেস সার্ভার (জারীকারক), নিরাপত্তা প্রহরী ও অফিস সহায়কসহ ৯ শূন্য/সৃষ্ট পদে জনবল নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেন সিজেএম এসএম হুমায়ুন কবীর। অভিযোগ উঠেছে, জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ তৌফিক আজিজসহ সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের না জানিয়েই ২ টি অখ্যাত পত্রিকায় (দৈনিক সরেজমিন ও দৈনিক তথ্যধারা) গত ৩১ জুলাই ঐ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হলেও অখ্যাত পত্রিকা দুটির সেদিনের সকল কপি হাতিয়ে নেয় সিজেএম এর আশীর্বাদপুষ্ট নাজির সাইফুল ইসলামসহ একটি চক্র। তদুপরি ঐ বিজ্ঞপ্তির কপি বিচার বিভাগ ও বার অঙ্গনসহ সংশ্লিষ্ট কোন দপ্তরেই পাঠানো হয়নি। ফলে শেরপুরবাসিসহ দেশের মেধাবী চাকুরী প্রার্থীদের অনেকেই সেই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে অবগত হওয়ার সুযোগ পায়নি।
ঐ অবস্থায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানোর পর তারা বিস্ময় প্রকাশ করে নেতিবাচক মনোভাব প্রকাশের পরও নিরবেই নিয়োগ প্রক্রিয়া চলমান থাকে। ফলে ঐ ৯ পদের বিপরীতে যেখানে ৫ শ থেতে ৯ শ জন চাকুরী প্রার্থীর আবেদন পড়ার কথা ,সেখানে আবেদন পড়ে মাত্র ৪১ জনের। অন্যদিকে শেরপুর বিচার বিভাগের কর্নধার জেলা ও দায়রা জজ উচ্চতর প্রশিক্ষণে সম্প্রতি ভারতে অবস্থান করা অবস্থায় গত ১৪ অক্টোবর শনিবার তড়িঘড়ি করে নেওয়া হয় তাদের লিখিত পরীক্ষা। ঐ পরীক্ষায় অংশ নেন আবেদনকারীদের মধ্যে আরও কয়েকজন কম সংখ্যক প্রার্থী। এভাবে রোববার নির্ধারিত পদের মধ্যে স্বল্প সংখ্যক বেশী প্রার্থীর ভাইবা বা মৌখিক পরীক্ষা নিয়ে নিরবেই চূড়ান্ত করা হয় সেই ৯ পদে পছন্দের প্রার্থী।
অভিযোগ রয়েছে, পছন্দের নির্দিষ্ট প্রার্থী ছাড়া ঐ জনবল নিয়োগের ক্ষেত্রে অন্য যাদের আবেদন পড়েছিল, তারা ছিলেন ড্যামি প্রার্থী বা তারা পছন্দের প্রার্থীদের পক্ষেই প্রক্সি দিতে পরীক্ষায় নাম মাত্র অংশ নিয়েছেন বা তাদের অংশ গ্রহণ দেখানো হয়েছে। এছাড়া অর্থ মন্ত্রনালয়ের সাম্প্রতিক প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী জনবল নিয়োগের ক্ষেত্রে টেলিটক বাংলাদেশ লি: মাধ্যমে অনলাইনে আবেদন গ্রহণ ও ৯ ম গ্রেড বা তদুর্ধ গ্রেড (নন ক্যাডার) থেকে ২০ তম গ্রেডের পরীক্ষা ফি আদায় এবং অনলাইনে আবেদন গ্রহণ করা না হলে পরীক্ষা ফি বাবদ অর্থ চালানের মাধ্যমে ( ব্যাংক ড্রাফট/পে অর্ডার) গ্রহণের বিধান থাকলেও ওই নিয়োগের ক্ষেত্রে তার ব্যত্যয় ঘটেছে। ফলে সিজেএম কোর্টের আওতায় শেরপুরসহ বিভিন্ন অঞ্চলের চাকুরী প্রার্থীদের জানার সুযোগ না দিয়ে এবং উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে পাশ কাটিয়ে বা অনেকটা অন্ধকারে রেখে নিরবেই চূড়ান্ত করা হয়েছে ৯ পদের জনবল নিয়োগ।
অন্য দিকে নিরবে ওই জনবল নিয়োগের ঘটনা জানতে মঙ্গলবার শেরপুরের কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মী সিজেএম কোর্টের নাজির সাইফুল ইসলাম, প্রধান বেঞ্জ সহকারী রোকন, ও সংশ্লিষ্ট কর্মচারী মলয় চক্রবর্তীর সাথে কথা বললে তারা ওই নিয়োগ নিয়ে কোন তথ্য প্রদানে অপরাগতা প্রকাশ করেন। সেই সাথে তারা সিজেএম একজন ‘স্বচ্ছ ও খোদাভিরু’ মানুষ বলে দাবি করেন। বিষয়টি কর্তৃপক্ষের গোচরে আসার পর তা দামাচাপা দিতে বিভিন্নভাবে শুরু হয়েছে।