
ছবি- সংগৃহীত
ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের চেয়ে ৩৬ ধাপ এগিয়ে আছে বাহরাইন। তবে মাঠের খেলায় তা এতটুকুও ফুটিয়ে তুলতে পারেনি দলটি। উল্টো বাংলাদেশের কাছে কোনো পাত্তায় পায়নি তারা। উইমেন্স এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে নিজেদের প্রথম ম্যাচে বাহরাইনকে ৭-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ।
র্যাঙ্কিং যেনো শুধুই একটা সংখ্যা, মাঠের খেলায় তা বেশ ভালোভাবেই প্রমাণ করলো বাংলাদেশের মেয়েরা। একটি-দুটি নয়, র্যাঙ্কিংয়ে ৩৬ ধাপ এগিয়ে দলটাকে একে একে ৭টি গোল দিয়েছে বাংলাদেশ! প্রথমার্ধেই তাদের জালে ৫গোল দেয় পিটার বাটলারের শিষ্যরা, দ্বিতীয়ার্ধে আরও দুটি।
ম্যাচের আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের কোচ পিটার বাটলার বলেছিলেন, বাহরাইনের বিপক্ষে আত্মবিশ্বাস নিয়েই মাঠে নামবে বাংলাদেশ। তবে সেই আত্মবিশ্বাস যে বাংলাদেশের মেয়েদের গোলের ক্ষুদা এতটা বাড়িয়ে দেবে, সেটা কে-ই বা জানতো!
এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের ম্যাচে মিয়ানমারের ইয়াংগুনে রোববার (২৯ জুন) শক্তিশালী বাহরাইনের বিপক্ষে মাঠে নামে বাংলাদেশ। ম্যাচের শুরু থেকেই প্রতিপক্ষের ওপর চাপ তৈরি করে খেলতে থাকে ঋতুপর্ণারা।
দারুণ চিপ শটে শুরুতেই বাংলাদেশকে এগিয়ে দেন শামসুন্নাহার জুনিয়র। এরপর বাঁ পায়ের দৃষ্টিনন্দন বাঁকানো শটে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন ঋতুপর্ণা চাকমা। ১৫ মিনিটের মধ্যেই কোণঠাসা হয়ে পড়ে বাহরাইন। প্রথমার্ধেই আরও তিন গোল করে বাংলাদেশ।
কিক অফের পর প্রথম মিনিটেই দারুণ আক্রমণ শাণায় বাংলাদেশ। বাঁ দিক থেকে দূরপাল্লার শট নেন ঋতুপর্ণা, গোলকিপার লাফিয়ে দ্বিতীয় প্রচেষ্টায় বল গ্লাভসে জমান। গত উইমেন্স সাফে প্রায় একই জায়গা থেকে দূরপাল্লার শটে নেপালের জালে গোল করেছিলেন ঋতুপর্ণা।
চাপ ধরে রেখে দশম মিনিটে গোল পেয়ে যায় বাংলাদেশ। মাঝমাঠ থেকে আসা লম্বা ক্রস দারুণ ক্ষিপ্রতায় অফসাইডের ফাঁদ ভেঙে ডি-বক্সে ঢুকে পড়েন শামসুন্নাহার জুনিয়র। আগুয়ান গোলকিপারের মাথার ওপর দিয়ে চিপ শটে জাল খুঁজে নেন এই ফরোয়ার্ড।
ম্যাচের ১৫তম মিনিটে ব্যবধান ব্যবধান দ্বিগুণ করেন ঋতুপর্ণা। স্বপ্না রানীর আড়াআড়ি ক্রস ধরে বক্সে ঢুকে বাঁ পায়ের দৃষ্টিনন্দন বাঁকানো শটে লক্ষ্যভেদ করেন এই ফরোয়ার্ড।
একের পর এক আক্রমণে প্রতিপক্ষকে কোণঠাসা করে ফেলে বাংলাদেশ। ২৪তম মিনিটে ব্যবধান আরও বাড়ানোর সুবর্ণ সুযোগ পান মনিকা চাকমা। কিন্তু গোলরক্ষককে একা পেয়েও বল মারেন ক্রসবারের উপর দিয়ে।
৩২তম মিনিটে আফঈদা খন্দকারের ক্রসে তহুরা খাতুন হেডে জালে বল জড়ান, তবে অফসাইডের কারণে সেটি গোল হয়নি। ৩৫তম মিনিটে বক্সের ভেতরে দারুণ শট নিয়েছিলেন তহুরা, তবে প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডারের গায়ে লেগে তা প্রতিহত হয়।
৪০তম মিনিটে ব্যবধান আরও বাড়িয়ে নেয় বাংলাদেশ। মনিকার কর্নার থেকে বল পেয়ে যান মারিয়া। অনেকটা এগিয়ে আড়াআড়ি ক্রস বাড়ান বক্সে, সেখান থেকে বল পেয়ে যান কোহাতি কিসকু। জটলার মধ্যে টোকায় বল জালে জড়ান এই ডিফেন্ডার।
প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে আরও দুই গোল পায় বাংলাদেশ। বক্সের ঠিক ওপর থেকে তহুরার শট গোলকিপারের গ্লাভস ছুঁয়ে জালে জড়ায়। একটু পর শামসুন্নাহার জুনিয়রের কাটব্যাক থেকে নিখুঁত টোকায় নিজের দ্বিতীয় গোলটি করেন তহুরা।
‘সি’ গ্রুপে দ্বিতীয় ম্যাচে বুধবার মিয়ানমারের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। নিজেদের প্রথম ম্যাচে তুর্কমেনিস্তানকে ৮-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে স্বাগতিকরা।
দ্বিতীয়ার্ধেও একই ছন্দে খেলতে থাকে বাংলাদেশ। ৬০তম মিনিটে সতীর্থের ক্রসে শামসুন্নাহার জুনিয়র টোকা দেওয়ার পর রাওয়ান আল আলির পা হয়ে বল জালে জড়ায়। ৭৪তম মিনিটে বক্সে ঢুকে বডি ডজে এক ডিফেন্ডারকে ছিটকে দিয়ে নিচু শটে স্কোরলাইন ৭-০ করেন মুনকি আক্তার।
৮৬তম মিনিটে জালে বল জড়ান বদলি ফরোয়ার্ড সাগরিকা। তবে অফসাইডের কারণে বাতিল হয় এই গোল। শেষ পর্যন্ত ৭-০ গোলের বিশাল জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে বাংলাদেশ।