Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

পৌষ ২ ১৪৩২, বুধবার ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫

আরও ২০টি দেশের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা বাড়াল যুক্তরাষ্ট্র

প্রকাশিত: ১১:৪৭, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫

প্রিন্ট:

আরও ২০টি দেশের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা বাড়াল যুক্তরাষ্ট্র

ফাইল ছবি

আরও ২০ টি দেশ এবং ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে যুক্ত করে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা সম্প্রসারণ করছে যুক্তরাষ্ট্র। এর ফলে এ বছরের শুরুতে ঘোষিত কঠোর ভ্রমণ ও অভিবাসন সীমাবদ্ধতার আওতাভুক্ত দেশের সংখ্যা দ্বিগুণ হলো। ট্রাম্প প্রশাসন সম্পূর্ণ ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার তালিকায় আরও পাঁচটি দেশ যুক্ত করেছে এবং ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের ইস্যু করা ভ্রমণ নথি বহনকারীদের ওপরও যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।

পাশাপাশি আরও ১৫টি দেশের নাগরিকদের ওপর আংশিক সীমাবদ্ধতা জারি করা হয়েছে। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা এপি। প্রশাসনের ভাষ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ ও অভিবাসনের ক্ষেত্রে প্রবেশের মানদণ্ড আরও কঠোর করার চলমান প্রচেষ্টার অংশ হিসেবেই এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে সমালোচকদের মতে, এই পদক্ষেপ নানা দেশের মানুষের জন্য অন্যায্যভাবে ভ্রমণ বন্ধ করে দিচ্ছে। প্রশাসন আরও ইঙ্গিত দেয়, থ্যাঙ্কসগিভিং সপ্তাহান্তে ন্যাশনাল গার্ডের দুই সদস্যকে গুলির ঘটনায় অভিযুক্ত এক আফগান নাগরিক গ্রেপ্তারের পরই তারা এই নিষেধাজ্ঞা আরও বিস্তৃত করার সিদ্ধান্ত নেয়।

যাদের কাছে ইতিমধ্যেই বৈধ ভিসা রয়েছে, যারা যুক্তরাষ্ট্রের বৈধ স্থায়ী বাসিন্দা (গ্রিন কার্ডধারী), অথবা কূটনীতিক, ক্রীড়াবিদসহ নির্দিষ্ট কিছু ভিসা শ্রেণির আওতায় পড়েন, এছাড়া যাদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ দেশটির স্বার্থে সহায়ক বলে বিবেচিত, তারা এই নিষেধাজ্ঞার বাইরে থাকবেন। ঘোষণায় বলা হয়েছে, এই পরিবর্তনগুলো আগামী ১লা জানুয়ারি থেকে কার্যকর হবে। এ বছরের জুনে প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেন, ১২টি দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা হবে এবং আরও সাতটি দেশের নাগরিকদের ওপর কঠোর সীমাবদ্ধতা আরোপ করা হবে। এই সিদ্ধান্ত তার প্রথম মেয়াদের একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতিকে আবারও কার্যকর করে। সেই সময় নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা দেশগুলো হলো আফগানিস্তান, মিয়ানমার, চাদ, কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, ইকুয়েটোরিয়াল গিনি, ইরিত্রিয়া, হাইতি, ইরান, লিবিয়া, সোমালিয়া, সুদান ও ইয়েমেন। পাশাপাশি বুরুন্ডি, কিউবা, লাওস, সিয়েরা লিওন, টোগো, তুর্কমেনিস্তান ও ভেনেজুয়েলার নাগরিকদের ওপর বাড়তি বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। মঙ্গলবার রিপাবলিকান প্রশাসন ঘোষণা দেয়, যেসব দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে, সেই তালিকায় নতুন করে যুক্ত হচ্ছে বুরকিনা ফাসো, মালি, নাইজার, দক্ষিণ সুদান ও সিরিয়া। একই সঙ্গে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের ইস্যু করা ভ্রমণ নথি বহনকারীদের ওপর সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে, যা ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সর্বশেষ ভ্রমণ সীমাবদ্ধতা। উল্লেখ্য, দক্ষিণ সুদানের নাগরিকরা আগেই কঠোর বিধিনিষেধের মুখে ছিলেন। এছাড়া আরও ১৫টি দেশকে আংশিক নিষেধাজ্ঞার তালিকায় যুক্ত করা হয়েছে।

দেশগুলো হলো অ্যাঙ্গোলা, অ্যান্টিগুয়া ও বারবুডা, বেনিন, আইভরি কোস্ট, ডোমিনিকা, গ্যাবন, গাম্বিয়া, মালাউই, মৌরিতানিয়া, নাইজেরিয়া, সেনেগাল, তানজানিয়া, টোঙ্গা, জাম্বিয়া ও জিম্বাবুয়ে। এই নিষেধাজ্ঞাগুলো যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণকারী পর্যটক ও সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে ইচ্ছুক- উভয়ের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে। প্রশাসনের দাবি, যেসব দেশের ওপর ভ্রমণ সীমাবদ্ধতা আরোপ করা হয়েছে, সেসব দেশে ব্যাপক দুর্নীতি, জাল বা অবিশ্বস্ত নাগরিক নথি এবং অপরাধ সংক্রান্ত রেকর্ডের ঘাটতি রয়েছে, যা যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণের জন্য নাগরিকদের যথাযথভাবে যাচাই-বাছাই করা কঠিন করে তোলে। তারা আরও বলেছে, কিছু দেশে ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও থেকে যাওয়ার হার বেশি, কেউ কেউ যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠাতে চাওয়া নাগরিকদের গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানায়, আবার কোথাও স্থিতিশীলতা ও সরকারি নিয়ন্ত্রণের অভাব রয়েছে। এসব কারণেও যাচাই প্রক্রিয়া জটিল হয়। পাশাপাশি অভিবাসন আইন প্রয়োগ, পররাষ্ট্রনীতি ও জাতীয় নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। হোয়াইট হাউসের কাছে ন্যাশনাল গার্ডের দুই সদস্যকে গুলির ঘটনায় অভিযুক্ত আফগান ব্যক্তি হত্যা ও হামলার অভিযোগে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন। ওই ঘটনার পর প্রশাসন অভিবাসন সংক্রান্ত একাধিক কড়াকড়ি ঘোষণা করে, যার মধ্যে আগেই নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা ১৯টি দেশের নাগরিকদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরে আরও সীমাবদ্ধতাও ছিল। ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা সম্প্রসারণের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

সমালোচকদের মতে, জাতীয় নিরাপত্তার অজুহাতে প্রশাসন নানা দেশের মানুষকে সম্মিলিতভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ থেকে বিরত রাখছে। ইন্টারন্যাশনাল রিফিউজি অ্যাসিস্ট্যান্স প্রজেক্টের যুক্তরাষ্ট্রের আইনি কর্মসূচির ভাইস প্রেসিডেন্ট লরি বল কুপার বলেন, এই সম্প্রসারিত নিষেধাজ্ঞা জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে নয়; বরং মানুষ কোথা থেকে এসেছে, শুধু সেই কারণেই তাদেরকে দানব হিসেবে দেখানোর আরেকটি লজ্জাজনক প্রচেষ্টা। আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের দুই দশকব্যাপী যুদ্ধে সহায়তা করা আফগানদের পক্ষে কাজ করা সংগঠনগুলোও মঙ্গলবার উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তাদের দাবি, হালনাগাদ নিষেধাজ্ঞায় আর বিশেষ অভিবাসী ভিসা পাওয়ার যোগ্য আফগানদের জন্য কোনো ব্যতিক্রম রাখা হয়নি। এই ভিসা শ্রেণিটি বিশেষভাবে তাদের জন্য, যারা নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধ প্রচেষ্টায় ঘনিষ্ঠভাবে সহায়তা করেছিলেন। বিশেষ অভিবাসী ভিসা কর্মসূচির পক্ষে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করা সংস্থা ‘নো ওয়ান লেফট বিহাইন্ড’ এই পরিবর্তন নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা বলেছে, জাতীয় নিরাপত্তার প্রতি প্রেসিডেন্টের অঙ্গীকারকে তারা সম্মান করে, তবে কঠোর যাচাই-বাছাইয়ের পর যুক্তরাষ্ট্রকে সহায়তাকারী আফগানদের প্রবেশের অনুমতি দেয়া দেশটির নিরাপত্তাকেই শক্তিশালী করে।

সংস্থাটি এক বিবৃতিতে বলেছে, যদিও এই নীতিগত পরিবর্তন যাচাই প্রক্রিয়ার অসঙ্গতি পর্যালোচনার উদ্দেশ্যে নেয়া হয়েছে। তবে এটি অনিচ্ছাকৃতভাবে এমন মানুষদেরই সীমাবদ্ধ করছে, যারা আমাদের ইতিহাসে সবচেয়ে কঠোরভাবে যাচাই করা হয়েছে, যে যুদ্ধকালীন মিত্ররা এই ঘোষণায় উল্লেখিত সন্ত্রাসীদের লক্ষ্যবস্তু। নতুন করে নিষিদ্ধ বা সীমাবদ্ধ তালিকায় পড়া দেশগুলোর সরকারগুলো মঙ্গলবার গভীর রাতে জানিয়েছে, তারা বিষয়টি পর্যালোচনা করছে। ক্যারিবীয় দ্বীপদেশ ডোমিনিকার সরকার এক বিবৃতিতে বলেছে, তারা বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব ও জরুরি বিষয় হিসেবে দেখছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে নিষেধাজ্ঞার অর্থ ও সম্ভাব্য সমস্যা পরিষ্কার করতে চাইছে। অ্যান্টিগুয়া ও বারবুডার যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত রোনাল্ড সন্ডার্স বলেন, বিষয়টি অত্যন্ত গুরুতর এবং নতুন নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কে আরও তথ্য জানতে তিনি মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলবেন। এছাড়া ট্রাম্প প্রশাসন কিছু দেশের ক্ষেত্রে, যেমন লাওস ও সিয়েরা লিওন, আগের আংশিক নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করেছে।

আবার এক ক্ষেত্রে- তুর্কমেনিস্তানের পরিস্থিতি উন্নত হওয়ায় কিছু বিধিনিষেধ শিথিল করা হয়েছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন। জুনে ঘোষিত আগের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার বাকি সব ব্যবস্থা অপরিবর্তিত থাকবে। ফিলিস্তিনিদের ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা এমন এক সময় এলো, যখন কয়েক মাস আগেই প্রশাসন এমন বিধিনিষেধ আরোপ করেছিল, যার ফলে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের পাসপোর্টধারীদের জন্য ব্যবসা, কাজ, ভ্রমণ বা শিক্ষার উদ্দেশ্যে যুক্তরাষ্ট্রে আসা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। মঙ্গলবারের ঘোষণায় আরও এক ধাপ এগিয়ে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের পাসপোর্টধারীদের যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাসের পথও বন্ধ করে দেয়া হলো। এই সিদ্ধান্তের পক্ষে যুক্তি দিতে গিয়ে প্রশাসন বলেছে, পশ্চিম তীর ও গাজা উপত্যকায় ‘যুক্তরাষ্ট্র ঘোষিত উগ্র গোষ্ঠীগুলো সক্রিয়ভাবে কাজ করছে এবং তারা মার্কিন নাগরিকদের হত্যা করেছে।’ পাশাপাশি সাম্প্রতিক যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে ওই এলাকায় যাচাই ও স্ক্রিনিং সক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।
 

Walton Refrigerator cables
Walton Refrigerator cables