Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

কার্তিক ৯ ১৪৩২, শনিবার ২৫ অক্টোবর ২০২৫

ল্যাবরেটরিতে মানবদাঁত তৈরির প্রচেষ্টায় বিজ্ঞানীরা

বহুমাত্রিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৭:১২, ২৫ অক্টোবর ২০২৫

প্রিন্ট:

ল্যাবরেটরিতে মানবদাঁত তৈরির প্রচেষ্টায় বিজ্ঞানীরা

ছবি: সংগৃহীত

অনেকেই দাঁতের ডাক্তারকে ভয় পান। এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। দাঁতের স্বাস্থ্য খারাপ হলে মানুষের খাওয়া, কথা বলা ও সামাজিক মেলামেশার সক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এমনকি মুখের জীবাণু রক্তপ্রবাহে ঢুকে পড়লে তা হৃদরোগসহ নানা সংক্রমণের কারণও হতে পারে। প্রবীণদের ক্ষেত্রে এই ঝুঁকি বেশি। দাঁত প্রতিস্থাপনের জন্য প্রায়শই  অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হয় এবং রোগীর চোয়ালের হাড়ে একটি টাইটানিয়াম স্ক্রু স্থাপন করা হয়। তারপর  কয়েক মাস অপেক্ষা করা হয় এবং এর উপরে একটি মুকুট বা ক্যাপ লাগানো হয়। 

কিন্তু বিশ্বজুড়ে গবেষকরা  মানুষের চোয়ালে প্রকৃত জৈবিক দাঁত স্থাপন বা গজানোর উপায় খুঁজে বের করার জন্য কাজ করছেন। এটা হয়তো একটা পথ, কিন্তু লন্ডনের কিংস কলেজে, পুনর্জন্মমূলক দন্তচিকিৎসার স্নাতকোত্তর প্রোগ্রামের পরিচালক আনা অ্যাঞ্জেলোভা ভলপোনি প্রায় দুই দশক ধরে ল্যাবে তৈরি দাঁত নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আসছেন। ২০১৩ সালে মানব ও ইঁদুরের কোষ থেকে একটি দাঁত তৈরির জন্য গবেষণা দলের অংশ ছিলেন তিনি

অ্যাঞ্জেলোভা বলেন, ল্যাবের পাত্রে তৈরি দাঁত দেখে আমরা এ বিষয়ে আরও নতুন নতুন তথ্য জানছি। সুগঠিত দাঁতের জন্য অনেকেই এখন ব্রেস বা ইমপ্লান্টের আশ্রয় নেন। কিন্তু এসব ইমপ্লান্ট রোগী তো বটেই, দন্তচিকিৎসকের জন্যও তৈরি করতে পারে অপ্রত্যাশিত জটিলতা। ডেন্টাল, ওরাল অ্যান্ড ক্রেনিওফেশিয়াল সায়েন্স বিভাগের শেষ বর্ষের পিএইচডি গবেষক জুয়েচেন ঝাং বলেন, ইমপ্লান্টের জন্য অস্ত্রোপচার করতে হয়। সেইসঙ্গে মাড়ির হাড়ের সঙ্গে ইমপ্লান্টের ভালো সংমিশ্রণ প্রয়োজন হয়। 

তিনি বলেন, ল্যাবে তৈরি দাঁত স্বাভাবিকভাবেই গজাবে, প্রকৃত দাঁতের মতো চোয়ালে মিশে যাবে। এই দাঁত হবে আরও মজবুত, দীর্ঘস্থায়ী, এবং শরীরের সঙ্গে মানানসই। ফলে ফিলিং বা ইমপ্লান্টের চেয়ে অনেক বেশি টেকসই হওয়ার পাশাপাশি জৈবিকভাবে বেশি সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে।

ভলপোনি বলেন, ল্যাবে দাঁত তৈরির ধারণাটি ১৯৮০-এর দশকের, কিন্তু এক দশকেরও বেশি সময় আগে তিনি এবং তার সহকর্মীরা যে দাঁত তৈরি করেছিলেন তা ছিল প্রথম যা প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের মাড়ির কোষ এবং ইঁদুরের ভ্রূণ থেকে কোষ নিয়ে  তৈরি করা হয়েছিল। এরপর ভলপোনি প্রোটিন কোলাজেন দিয়ে তৈরি একটি  হাইড্রোজেল ব্যবহার করেন, যা এক ধরনের পলিমার। এর মধ্যে পানির পরিমাণ বেশি থাকে। 

ঝাং বলছেন, ‘আমরা এই কোষ পেলেটটি হাইড্রোজেলের ভিতরে ইনজেক্ট করি এবং প্রায় আট দিন ধরে এটি বৃদ্ধি করি।’ আট দিনের শেষে ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের সহযোগিতায় তৈরি হাইড্রোজেলের ভিতরে দাঁতের মতো কাঠামো তৈরি হয়। দাঁত গজানোর উপযুক্ত পরিবেশ তৈরির কাজে সফল হওয়ার পর গবেষকদের এখন এই দাঁত কীভাবে ল্যাব থেকে বের করে রোগীর মুখে প্রতিস্থাপন করা যায়, তা নিয়ে কাজ করতে হবে। আর এই ধাপে সাফল্য পেতে আরও কয়েক বছর লেগে যেতে পারে।

ঝাং বলেন, ‘মুখে দাঁত প্রতিস্থাপন করার জন্য আমাদের কয়েকটা পরিকল্পনা আছে। আমরা চাইলে দাঁতের অপরিণত কোষ সরাসরি দাঁত না থাকা ফাঁকা জায়গায় স্থাপন করতে পারি—সেখানেই দাঁত গজাবে। অথবা পুরো দাঁতই আগে ল্যাবে তৈরি করে তারপর রোগীর মুখে প্রতিস্থাপন করতে পারি।’

অন্যদিকে ওসাকার মেডিকেল রিসার্চ ইনস্টিটিউট কিতানো হাসপাতালের কাৎসু তাকাহাশি এবং তার সহকর্মীরা অ্যানোডোন্টিয়া বা দাঁতের জন্মগত  রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের দাঁতের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করার জন্য একটি অ্যান্টিবডি-ভিত্তিক চিকিৎসা তৈরি করছেন। এই চিকিৎসাটি মানব ক্লিনিকাল ট্রায়ালে প্রবেশ করেছে এবং এই দশকের শেষ নাগাদ এর ফলাফল বেরোতে পারে।

Walton Refrigerator cables
Walton Refrigerator cables