ছবি- বহুমাত্রিক.কম
ঐশ্বর্যে ভরপুর বীর চট্টলার এক জনপদ রাউজান। বিস্ময়কর নদী হালদা এই জনপদকে দিয়েছে অনন্য সুখ্যাতি। হালদা বিধৌত উর্বর জনপদ আবুরখীল জন্ম দিয়েছে অজস্র গুণীজনকে। মহান দার্শনিক, কবি, সাধক, স্বাধীনতা সংগ্রামী-এমন অজস্র গুনীদের ধারণ করেছে এই আবুরখীল।
মহামতি বুদ্ধের অমিয় বাণীকে পাথেয় করে বৌদ্ধ অধ্যুষিত এই জনপদটির অধিবাসীরা শান্তি ও সেবার চিন্তর যে ব্রত নিয়ে যুগ যুগ ধরে ঐক্যদ্ধ সমাজের দৃষ্টান্ত স্বমহিমায় ভাস্বর করে রেখেছেন তা অতুলনীয়। পরম্পরায় গড়ে উঠা এখানকার অসংখ্য সামাজিক সংগঠনই এই জনপদের প্রাণ। বাংলা নববর্ষ ১৪২৯ এর পহেলা বৈশাখে এক বর্ণিল আয়োজনে আবুরখীলের ঐশ্বর্যকে ফের মেলে ধরলো সামাজিক সংগঠন দক্ষিণ ঢাকাখালী পল্লী মঙ্গল সমিতি।
সেবার মাঝে ঐক্য জাগানোর মূলনীতিকে ধারণ করে পল্লী মঙ্গল সমিতিই আবুরখীলের দক্ষিণ ঢাকাখালী অংশের অধিবাসীদের বেঁধেছেন সম্প্রীতির সুঁতোয়। চেতনা ও জাগরণে প্রজন্মকে নূতন পথের দিশা দিতে এই সমিতি অনন্য এক ভূমিকা পালন করে চলেছেন। বৃহস্পতিবার পহেলা বৈশাখে দিনভর উৎসব আমেজে গৌতম বিহার রূপ নিয়েছিল এক আনন্দতীর্থে। সমিতির নবনির্বাচিত কমিটির অভিষেক ও প্রধান পৃষ্ঠপোষক আবুরখীলবাসীর গৌরব, নন্দিত চিকিৎসক নেতা অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়ার সংবর্ধনার জমকালো আয়োজন সকালে শুরু হয়ে চলে মধ্যরাত অবধি।
নাচ, গান, জাদু প্রদর্শন, স্মরণিকার পাঠ উন্মোচন আর কথামালায় গৌতম বিহারের প্রাঙ্গন ছিল দর্শনার্থীতে কানায় কানায় পূর্ণ। বর্ণিল এসব আয়োজনে বর্তমান ও আগামীর পথনির্দেশ যেমন ফুটিয়ে তুলেন উদ্যোক্তরা, তেমনি তারা মেলে ধরেন তাদের গৌরবময় অতীতকেও।
সংবর্ধিত অতিথি অধ্যাপক ড. উত্তম কুমার বড়ুয়া তাঁর বক্তব্যে সমিতির নতুন নেতৃত্বকে সমাজ গঠনে আবুরখীলের ঐতিহ্যিক পরম্পরার কথা স্মরণ করিয়ে দেন। তিনি বলেন, ‘প্রাণিজগত থেকে শেখার অনেক কিছু আছে। পিঁপড়া আর মৌমাছিদের জীবন থেকে তোমাদের সেবা, সংযম, কর্তব্যনিষ্ঠা, পরোপকার আর ঐক্যবদ্ধ হওয়ার দীক্ষা নিতে হবে। ধর্মরাজ, রামচন্দ্র, বিপ্লবী রোহিনী বড়ুয়ারা আবুরখীলের জনপদকে যেভাবে মহিমান্বিত করে গেছেন, তোমাদেরকেও সেই পরম্পরা এগিয়ে নিতে হবে।’
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর নেতাজী সুভাষ আইডিওলজি (আইসিএনএসআই) চেয়ারম্যান ও বহুমাত্রিক.কম এর প্রধান সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম আবুরখীলকে পথপ্রদর্শক জনপদ হিসেবে অভিহিত করে বলেন, মুক্তি সংগ্রামের চেতনা একটি অঞ্চলের চিরন্তন মর্যাদার প্রতীক। ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে মহান বিপ্লবী শহীদ মাস্টারদা সূর্যসেনের যোগ্য সহযোদ্ধা বিপ্লবী রোহিনী বড়ুয়া, নেতাজীর আজাদ হিন্দ ফৌজের সদস্য হিমাংশু বিমল বড়ুয়া ও বিভূতি বড়ুয়া যে চেতনার ভীত গড়ে যান একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের দুর্বার ঘাঁটি আবুরখীল সেই প্রমাণ দিয়েছে। চেতনার এই যে শক্তি তা দিয়ে আবুরখীল ও পল্লী মঙ্গল সমিতি একদিন গোটা দেশকেই পথ দেখাবে।’
সমিতির সভাপতি সত্যজিত বড়ুয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানের উদ্বোধক ছিলেন সমিতির সাবেক সভাপতি রাহুল কান্তি বড়ুয়া। এতে প্রধান বক্তা ছিলেন সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অজিত কুমার বড়ুয়া।
সমিতির সাবেক সাধরণ সম্পাদক রূপায়ন বড়ুয়া কাজলের সঞ্চালনায় বিপ্লবী রোহিনী বড়ুয়ার উত্তরসূরি সাধন বড়ুয়া, একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মুল কমিটির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক লেখক-সাংবাদিক শওকত বাঙালী, স্থাপত্য অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক স্থপতি বিশ্বজিৎ বড়ুয়া, উরকিরচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সৈয়দ আব্দুল জব্বার সোহেল, দক্ষিণ ঢাকাখালী সমাজ উন্নয়ন সমিতির সাধারণ সম্পাদক সরোজ বড়ুয়া রূপু প্রমূখ বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন। এতে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন সমিতির সাধারণ সম্পাদক ছোটন বড়ুুয়াসহ সমিতির নেতৃবৃন্দ।
অনুষ্ঠানে সংবর্ধিত অতিথি ড. উত্তম কুমার বড়ুয়া সমিতির নবনির্বাচিতদের শপথ বাক্য পাঠ করান। পুরো আয়োজন জুড়ে নানা সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় মুগ্ধ করে রাখে স্থানীয় শিল্পীরা।
বহুমাত্রিক.কম