ফাইল ছবি
মৃত্যুসনদ জাল করার অভিযোগের মামলায় ‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ার’ আশ্রমের চেয়ারম্যান মিল্টন সমাদ্দারের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার ঢাকার অ্যাডিশনাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেন শুনানি শেষে রিমান্ডের আদেশ দেন।
এর আগে মিরপুর মডেল থানায় করা মামলায় মিল্টন সমাদ্দারের সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) এসআই কামাল হোসেন।
মিল্টন সমাদ্দারের পক্ষে আইনজীবী ওয়াহিদুজ্জামান (বিপ্লব) রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু, অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর তাপস কুমার পাল, সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর আজাদ রহমান বিরোধীতা করেন। শুনানি শেষে আদালত রিমান্ডের আদেশ দেন।
বেলা ১টা ২০ মিনিটের দিকে মিল্টন সমাদ্দারকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে হাজির করা হয়। সেখানে তাকে আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়। শুনানিকালে তাকে এজলাসে তোলা হয়।
রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, গত ২৪ এপ্রিল সোস্যাল মিডিয়া, বিভিন্ন ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় ফলাওভাবে প্রচার হয়। সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর ওই ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ের লক্ষ্যে গত ১ মেমিরপুরস্থ চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ার সেন্টারে পুলিশের উপস্থিতির টের পেয়ে আসামি মিল্টন সমাদ্দার পালানোর চেষ্টাকালে গ্রেপ্তার হন। তখন আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি জানান যে, তিনি কোনো নিবন্ধিত ডাক্তার নন এবং তার ওই প্রতিষ্ঠানে নিবন্ধিত কোনো ডাক্তার নিয়োগ প্রদান করেননি। তিনি চাইল্ড অ্যান্ড ওন্ড এইজ কেয়ার সেবার নামে প্রতিষ্ঠান তৈরি করে নিজে ডাক্তার সেজে এজাহারনামীয় পলাতক আসামির সঙ্গে যোগসাজসে প্রতারণামূলকভাবে বিভিন্ন চিকিৎসা করে, সেবা প্রদান করে, ক্রিয়েটিভ কনটেন্ট তৈরি করে ফেসবুক হোয়াটসআপ ও ইমোর মাধ্যমে ১ কোটি ২০ লাখ ফ্রেন্ড-ফলোয়ারের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়ে প্রতারণামূলকভাবে অর্থ উপার্জন করেন। তখন আসামির দেখানো মতে তার প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন কাগজপত্র ও তার টেবিলে থাকা ডেথ সার্টিফিকেট, যাতে প্রতি পাতায় চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ার অবগানাইজেশন লেখা ৫০টি ও দুটি স্ট্যাম্প সিল জব্দ হয়। সার্টিফিকেটগুলো আসামি মিল্টন সমাদ্দার নিজে ডাক্তার সেজে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে মৃত সার্টিফিকেটধারী ব্যক্তিদের মৃত ঘোষণা করে জালালিয়াতির মাধ্যমে মৃত্যুর সনদপত্রে ভুয়া ডাক্তারের স্বাক্ষর ও সিল এবং নিজে ডাক্তার সেজে স্বাক্ষর ও সিল প্রদান করেন এবং মৃত ব্যক্তির আত্মীয় স্বজনের কাছে খাটি হিসেবে ব্যবহার করে মৃত ব্যক্তিদের আত্মীয়স্বজনের কাছে মৃত্যুর সনদপত্র প্রদান করেছেন।
রিমান্ড আবেদনে আরও জানা যায়, আসামি দীর্ঘ দিন ধরে মানবতার সেবা ও চিকিৎসার নামে বিভিন্ন বয়স্ক ও শিশুকে নিয়ে শারীরিক, মানসিক আঘাত করে কখনো কখনো তাদের সুচিকিৎসার নাম করে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নিয়ে বিক্রি করে থাকে মর্মে বিভিন্ন ইলেকট্রিক মিডিয়া, সোস্যাল মিডিয়া ফলোয়াভাবে প্রচার হয়েছে। আসামি একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার না হয়েও সেবার নামে অজ্ঞাতনামা, ওয়ারিশবিহীন ব্যক্তিদের নিয়ে চিকিৎসা প্রদান না করে খাবারের যথাযথমান বজায় না রেখে বিভিন্ন মানুষকে ধুঁকে ধুঁকে মৃত্যুর কোলে ঠেলে মৃত্যু ঘটিয়েছে। তিনি দীর্ঘ দিন ধরে জালজালিয়াতির মাধামে ৫০টি ডেথ সার্টিফিকেট দিয়েছেন। মৃত্যু সনদ প্রদানে মৃত্যুর সঠিক কারণ, শিশু পাচার, মৃত সনদ জালিয়াতি করে খাঁটি হিসেবে ব্যবহার সংক্রান্তে আসামির সহযোগী অন্য আসামিদের শনাক্তসহ নাম, ঠিকানা সংগ্রহ এবং গ্রেপ্তার করার লক্ষ্যে সাত দিনের পুলিশ রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন।
গতকাল বুধবার রাতে রাজধানীর মিরপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে মিল্টন সমাদ্দারকে গ্রেপ্তার করে ডিবি। তার বিরুদ্ধে মৃত্যুর জাল সনদ তৈরি, টর্চার সেলে মানুষকে নির্যাতন ও মানবপাচারের অভিযোগে তিনটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
