ছবি: সংগৃহীত
দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হলে মব ভায়োলেন্স’ থেকে সরে আসতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বুধবার গুলশানে লেকশোরে চিব্বশের গণঅভ্যুত্থানে বিএনপি’ শীর্ষক সংকলিত গ্রন্থের প্রকাশনা উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন। এর আগে গণঅভ্যুত্থানের ওপর একটি প্রামাণ্য চিত্র উপস্থাপন করা হয়।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, গণতন্ত্রের প্রধানতম কথা হচ্ছে, আপনাকে অন্যের মত সহ্য করতে হবে, আমি কথা বলব, আপনার কথা সহ্য করব না, পিটিয়ে দেবো, মব ভায়োলেন্স তৈরি করবো, কিছু মানুষ জড়ো করে বলব যে ভেঙে দাও, গুড়িয়ে দাও, তাকে মেরে ফেলো পিটিয়ে, দিস ইজ নট ডেমোক্রেসি। ডেমোক্রেসির মূল কথাটা হচ্ছে, আমি তোমার সঙ্গে একমত না হতে পারি, কিন্তু তোমার মত প্রকাশের যে স্বাধীনতা তাকে আমি আমার জীবন দিয়ে হলেও রক্ষা করব। দ্যাট ইজ ডেমোক্রেসি। দুর্ভাগ্যক্রমে আমরা এখানে অন্যের মতকে সহ্য করতে চাই না, আমরা তাকে উড়িয়ে দিতে চাই, এই জায়গা থেকে আমাদেরকে সরে আসতে হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে সত্যিকার অর্থেই যদি আমরা টেকসই একটা ব্যবস্থা তৈরি করতে চাই, ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হতে না চাই তাহলে গণতন্ত্রকে আমাদের এখানে প্রতিপালন করতে হবে। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্মাণ করতে হবে। কোন দল কে জিতল, কে হারলো, এটা জরুরি নয়, জরুরি হচ্ছে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানটা শক্তিশালী হলো কিনা, আমাদের জুডিশিয়ারি ইন্ডিপেন্ডেন্ট কিনা, আমাদের মিডিয়া ইন্ডিপেন্ডেন্ট কিনা, আমাদের পার্লামেন্ট ইফেক্টিভ কিনা, আমাদের দেশ আইনের শাসনে চলছে কিনা, সুশাসন চলছে কিনা, মানুষের সামাজিক মর্যাদা সুরক্ষা এবং মানবাধিকার আমরা রাখতে পারছি কিনা, এই বিষয়গুলোকে নিয়েই আমাদের ভবিষ্যতে কাজ করতে হবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, নির্বাচন আসছে। বিএনপির উপরে দায়িত্ব বেশি পড়ছে। বিএনপিকে সত্যিকার অর্থেই এমন একটা মোর্চা গড়ে তুলতে হবে যে মোর্চা গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছে অতীতে, লড়াই করবে এবং গণতন্ত্রকে এখানে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেবে। এই মোর্চাই আমাদেরকে এখানে গড়তে হবে। আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, তার দিকে তাকালেই তো আমরা উত্তরটা পেয়ে যাই। যে একজন নেত্রী যিনি গণতন্ত্রের জন্য, গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার জন্য, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরে আনার জন্য কত নির্যাতন সহ্য করেছেন এবং দীর্ঘ ছয় বছর কারা অন্তরীণ থেকেছেন। এখনো অসুস্থ অবস্থায় তিনি কিন্তু এই গণতন্ত্রের কথাই বলছেন। তিনি বলেন, আমার মাঝে মাঝে একটু হতাশ লাগে। হতাশ লাগে যখন বাংলাদেশে চারদিকে দেখতে পাই। যখন দেখি যে আপনার একদিকে ফ্যাসিস্ট হাসিনার মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্যে রায় দেওয়া হচ্ছে কোর্টে। অন্যদিকে দেখি মবক্রেসি, মব ভালোলেন্স চলছে। এটা কিসের আলামত আমি জানি না। ফখরুল বলেন, আমি তো মনে করি যে, ওই রায়ের যে গুরুত্ব সেটাকে কমিয়ে দেয়ার জন্য একটা বিশেষ মহল ভিন্ন খাতে বিশ্ব দৃষ্টিকে নেয়ার জন্য এই কাজগুলো করেছে। এই বিষয়গুলো আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। আমরা যারা গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করি, লড়াই করি, যারা প্রাণ দিয়েছে- আমাদের ছেলেরা। আজকে কোনো একটা মহল অত্যন্ত সচেতনতার সঙ্গে অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে, চালাকির সঙ্গে সেটাকে বিভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছে কিনা এটা আমাদের দেখা উচিত। এর মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করছে কিনা?
তিনি আরও বলেন, আমি খুব পরিষ্কার করে বলতে চাই বিএনপি কোনো বিপ্লবী দল নয়। বিএনপি একটা লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি। আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি এবং গণতন্ত্রের জন্যই আমরা সারাজীবন ধরে লড়াই করেছি এবং এই দেশের মানুষ বাংলাদেশের মানুষও তার গণতান্ত্রিক অধিকার জন্যই শত শত বছর ধরে লড়াই করেছে। এখানে নিঃসন্দেহে যারা বিভিন্ন মতবাদে বিশ্বাস করেন করতে পারেন।
ফখরুল বলেন, আমরা বিএনপি, খুব পরিষ্কার ভাষায় আমরা বলতে চাই, উই আর লিবারেল ডেমোক্রেটস। এতে যদি আমাদেরকে কারো ভুল বোঝার কোনো সুযোগ আমি দিতে চাই না। আমি বিপ্লবী নয়। আই এম এ লিবারেল ডেমোক্রেট। আমরা সকলকে নিয়ে এই ভূখণ্ডে যারা বাস করে তাদের সকলকে নিয়ে সকল ধর্ম, সকল বর্ণ, সকল মত সকলকে একসাথে করে আমরা একটা রেইনবো স্টেট নির্মাণ করতে চাই এটা আমাদের ঘোষিত নীতি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খানের সভাপতিত্বে সভায় স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান, যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, ন্যাশনাল পিপপলস পার্টির চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, যুবদলের আবদুল মোনায়েম মুন্না, গ্রন্থের সম্পাদক বাবুল তালুকদার, প্রকাশক অধ্যাপক বিএম নাগিব হোসেন বক্তব্য রাখেন।




