-কথা বলেছন ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আতিউর রহমান । ছবি: সংগৃহীত
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাঙ্খিত ‘সচেষ্ট সমাজ’ গড়ে তুলতে শিক্ষিত তরুণ প্রজন্মকেই সবার আগে এগিয়ে আসতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রয়াণ বার্ষিকী উপলক্ষে মঙ্গলবার বিকালে (৮ আগস্ট ২০২৩) রাজধানীর বাংলামটরে গবেষণা সংস্থা ‘উন্নয়ন সমন্বয়’র খোন্দকার ইব্রাহীম খালেদ সভাকক্ষে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে ‘প্রান্তজনের সখা’ শীর্ষক বক্তৃতানুষ্ঠানে এই মন্তব্য করেন তিনি। এতে যোগ দেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও রবীন্দ্রপ্রেমীরা।
ড. আতিউর রহমান তাঁর দীর্ঘ রবীন্দ্রচর্চার উপলব্ধি থেকে ‘ভিন্ন এক রবীন্দ্রনাথকে’ তুলে ধরেন তরুণদের মাঝে, যেখানে কবি, কথাশিল্পী, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক, সুরস্রষ্টা কিংবা চিত্রশিল্পী ইত্যাদি প্রচলিত পরিচয়ের বাইরে প্রান্তিক মানুষের দুঃখ-দুর্দশার সমব্যথী এক সমাজকর্মীর পরিচয়ই বড় হয়ে উঠে।
আতিউর রহমান বলেন, ‘‘কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর চেয়েছিলেন সাধারণের উন্নয়নের জন্য একটি ‘সচেষ্ট সমাজ’, যা সমকালেও অত্যন্ত প্রয়োজন। যে সমাজ দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন ও প্রগতি এগিয়ে নেবে। তিনি চেয়েছিলেন শ্রমজীবী প্রান্তিক মানুষের প্রাপ্য আশা করবার অধিকার যেন আরও বিস্তৃত হয়। কাছের মানুষদের ডেকে ডেকে কবি বলতেন, ‘যে যেভাবে পারো, একটি করে গ্রামের দায়িত্ব নাও’।’
‘রুপোর চামচ মুখে নিয়ে জন্মালেও কবি রবীন্দ্রনাথ যে প্রান্তজনের কত বড় সখা ছিলেন তা তৎকালীন পূর্ববঙ্গের শিলাইদহ ও পতিসরের বিস্তৃত অঞ্চলে তাঁর বিচরণকালের ইতিবৃত্ত থেকে জানতে পারব। তিনি এই অঞ্চলে পৈত্রিক জমিদারি সামলাতে এলেও মনেপ্রাণে রবীন্দ্রনাথ জমিদার হয়ে উঠতে পারেননি। তিনি সব সময় নিজেকে ভাবতেন ওই অঞ্চলের কৃষক-শ্রমিক শ্রেণির একজন ট্রাস্টি হিসেবে। তিনি প্রান্তিক মানুষের দুঃখ-কষ্ট তন্নতন্ন করে খুঁজেছেন। তা লাঘবের সম্ভব সব রকম প্রচেষ্টাও নিয়েছেন। কবি খেদের সঙ্গে বলতেন, ‘....জমিদারি করে গরীব প্রজাদারে কাছ থেকে দু’টো পয়সা নিই, এর চেয়ে বড় লজ্জা আর কিছু নেই-’’-বলেন ড. রহমান।
‘সমবায় ও কৃষি ঋণ ব্যবস্থা প্রবর্তনের যে উন্নত চিন্তা ও দৃষ্টান্ত কবিগুরু আমাদের মাঝে রেখে গেছেন তাই আজকের কৃষককুলের জন্য নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের পূর্বসূত্র হিসেবে কাজ করছে’, উল্লেখ করে আতিউর রহমান বলেন, ‘নিজের পরিবারের সদস্যসহ বহু মানুষকে তিনি উন্নত কৃষি বিদ্যা পাঠের জন্য বিদেশে পাঠিয়েছেন। আধুনিক প্রযুক্তি ও উন্নত জাত তিনি জমিদারির কৃষকদের মাঝে বিলিয়েছেন। উন্নত গাভী পালনে কৃষকদের সহযোগিতা দিয়েছেন। এমন বহু উদ্যোগ তিনি নিয়েছেন কৃষকদের উন্নত জীবন দেওয়ার জন্যই। একজন আপদামস্তক কবির পক্ষে এর চেয়ে মানবিক চরিত্র আর কি-ইবা হতে পারে।’
তরুণ শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে খ্যাতিমান এই উন্নয়ন গবেষক বলেন, ‘রবীন্দ্রনাথের জীবন-দর্শনের অনেক অজানা অধ্যায় রবীন্দ্রচর্চায় আজও ব্রাত্য থেকে গেছে। রবীন্দ্রচর্চায় কবির এমন অনেক মানবিক ও সমাজঘনিষ্ট ভাবনা অধ্যয়ন করতে হবে। পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভূক্তও করতে হবে। সত্যি কথা বলতে, রবীন্দ্রনাথের বিস্তৃত জীবন ও কর্ম অধ্যয়নে প্রতিনিয়তই এমন ‘নতুন রবীন্দ্রনাথ’কে আমরা আবিষ্কার করব এবং তা আমাদের ক্ষয়িষ্ণু সমাজে নতুন পথের দিশা দিবে’
উন্নয়ন সমন্বয় এর জ্যেষ্ঠ অনুষ্ঠান সমন্বয়ক জাহিদুর রহমানের সঞ্চালনায় বক্তৃতানুষ্ঠানে শিক্ষার্থী ও রবীন্দ্র অনুরাগীদের বিভিন্ন প্রশ্নেও উত্তর দেন অধ্যাপক আতিউর রহমান।