ঢাকাঃ ‘চাঁদের বুড়ি চরকা কাটে না’। ছোট্ট বেলা থেকে এই লাইনটি শুনতে শুনতেই মনে হয় আমরা সবাই বড় হয়েছি। বিশাল আকাশের ঐ চাঁদটির দিকে তাকালে মনে হয় হয় ঐ চাঁদটির মাঝে একজন বুড়ি চরকা ঘুরাচ্ছে আর কাপড় বুনছে ।
এমনি ভাবেই নিজের স্বপ্নের বর্ণনা দিচ্ছিলেন আবু বক্কর সিদ্দিক নামের বৃদ্ধ লোকটি। তার বয়স আনুমানিক ৭৪ বছর। চশমা ছাড়া চোখে বেশ ভালোয় দেখেন এখনো । তার বাবা ও ছিলেন কাপড় বোনার কারিগর । ব্রিটিশ আমলে তার বাবা কাপড় বোনার কারিগর ছিল ।
মসলিন বুনতেন তার বাবা ও তার পূর্ব পুরুষেরা । তিনি ছোটবেলা থেকেই চরকার শব্দ শুনতে শুনতেই বড় হয়েছেন । আর দেখেছেন কিভাবে অত্যাচারিত হয়েছেন তার বাবা আর পূর্ব পুরুষেরা । মূলত ১৭৫৭ থেকে ১৯৪৭ পর্যন্ত সময় কালকে ব্রিটিশ আমল ধরা হয় । এই সময়টাতে বাঙ্গালীরা শোষণের স্বীকার হয় ।
সেই সময়টা তে আমাদের এই অঞ্চল অনেক সমৃদ্ধ ছিল । সেই জন্য সবার নজর ছিল এই দিকে । আমাদের বস্ত্র শিল্পের খ্যাতি ছিল সেই সময় থেকেই । বিশ্বজোড়া খ্যাতি ছিল আমাদের তৈরি কাপড়ের । মসলিন ছিল জগত খ্যাত । ইংরেজরা অনেক চেষ্টা করে ছিল আমাদের মত কাপড় বানাতে কিন্তু তারা কিছুতেই কাপড় তৈরির পদ্ধতি আয়ত্ত করতে পারেনি । কিন্তু ইংরেজরা ছিল খুবই হিংসুক ।
তারা যেটা পাবে না অন্য কাউকে ও সেটা পেতে দেবে না । তাই তারা সেই সময়ের মসলিন কারিগরদের বৃদ্ধাঙ্গুলি কেটে দিয়েছিল । বৃদ্ধাঙ্গুলি ছাড়া মসলিন তৈরি করা যেত না কোনও ভাবেই । এই ভাবেই দুঃখের কথা বলছিলেন আবু বক্কর সিদ্দিক ।
কথা গুলো বলতে বলতে তার দুচোখ থেকে আপনা আপনি পানি ঝরছিল ।তার পর ও তিনি ছাড়েননি তার পূর্ব পুরুষের এই পেশা । কিন্তু কখনো পারেন নি মসলিন বুনতে । তিনি এখন মিরপুর বেনারশি পল্লীতে কাপড় বুনেন । তার কাছে এখন একটি মাত্র চরকা আছে ।
সেটিতেই তিনি কাপড় বুনেন কাঁপা কাঁপা হাতে । তিনি কখনো বিয়েও করেন নি । তাই তার বংশেরও আর কেউ নেই । বয়স হয়েছে তাই খুব বেশী সময় কাজ করতে পারেন না তিনি ।
তবে বাংলাদেশে তাঁত শিল্প এখনো অবহেলিত । তাঁত শিল্পীরা পায়না তাদের যোগ্য সম্মান । নিখুঁত কাজ করেও তারা পায়না তাদের কাজের মর্যাদা । তাঁত শিল্প আমাদের ঐতিহ্য । এই তাঁত শিল্পের জন্যই একসময় বহির্বিশ্ব জানতো আমাদের কথা।কিন্তু সেই তাঁত শিল্পীদের জীবনের খবর আমরা কেউ রাখি না ।
বাংলাদেশ সময়ঃ ১৩৪০,মার্চ ২৯, ২০১৪
বহুমাত্রিক.কম