
ফাইল ছবি
ভারতের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব তথা বাংলাদেশে নিযুক্ত সাবেক ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা রাষ্ট্রপতির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে রাজ্যসভার সদস্য হতে চলেছেন। হবু পার্লামেন্টারিয়ান শ্রিংলাকে অভিবাদন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সোশ্যাল মিডিয়াতে লিখেছেন, ‘তার অনন্য দৃষ্টিভঙ্গী দেশের সংসদীয় কার্যক্রমকে সমৃদ্ধ করবে’।
হর্ষবর্ধন শ্রিংলা ভারতের শীর্ষতম কূটনীতিবিদই শুধু ছিলেন না, তাকে ভারতের বাংলাদেশ নীতির অন্যতম প্রধান কারিগর হিসেবেও গণ্য করা হয়। বাংলাদেশে ভারতের রাষ্ট্রদূত থাকাকালীন তিনি সে দেশের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন, বাংলাদেশে তার বন্ধু, সুহৃদ ও শুভাকাঙ্ক্ষীর সংখ্যাও কম নয়।
২০২৩ সালে ভারত যখন জি-২০ জোটের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দিল্লিতে জোটের শীর্ষ সম্মেলন আয়োজন করে, তখন তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানানোর নেপথ্যেও তৎকালীন জি-২০ কোঅর্ডিনেটর হর্ষবর্ধন শ্রিংলার বড় ভূমিকা ছিল।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং পাহাড়ের সন্তান শ্রিংলা, তিনি দিব্বি বাংলা বুঝতে ও কিছুটা বলতেও পারেন – বাংলাদেশের সঙ্গে তার আত্মিক সম্পর্ক গড়ে ওঠার সেটাও একটা বড় কারণ।
বাংলাদেশে গত বছরের রাজনৈতিক পালাবদলের পর থেকে ভারতের পররাষ্ট্র নীতিতে বাংলাদেশ একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে আছে – এই পটভূমিতে পার্লামেন্টে শ্রিংলাকে নিয়ে আসাকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবেই বিবেচনা করা হচ্ছে। প্রসঙ্গত, রাষ্ট্রপতি তাকে মনোনীত করলেও এধরনের ক্ষেত্রে তিনি সচরাচর ক্ষমতাসীন সরকারের সুপারিশ মেনেই চলেন – কাজেই রাজ্যসভার জন্য শ্রিংলার নাম মোদি সরকারই পাঠিয়েছে এমনটা ভাবার সঙ্গত কারণ আছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে অবসর নেওয়ার পর তিনি ২০২৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে দার্জিলিং কেন্দ্র থেকেই বিজেপির মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিজেপি সেখানে তাদের পুরনো এমপি-কেই টিকিট দেয়।
বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব অবশ্য শ্রিংলাকে বরাবরই খুব গুরুত্ব দিয়ে এসেছে। গত মে মাসে ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুরে’র পর ভারতীয় এমপি-রা সারা দুনিয়া ঘুরে ঘুরে যে ‘ডিপ্লোম্যাটিক আউটরিচে’ বেরিয়েছিলেন, শ্রিংলা সে রকম একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন।
এখন রাষ্ট্রপতির মনোনীত সদস্য হিসেবে পার্লামেন্টের উচ্চ কক্ষ রাজ্যসভায় আসতে চলেছেন শ্রিংলা, যেখানে এমপি হিসেবে তার পদের মেয়াদ হবে ছয় বছর। কূটনীতিবিদ হিসেবে তার বিপুল অভিজ্ঞতার নিরিখে অনেকেই ধারণা করছেন, তাকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্ট্যান্ডিং (স্থায়ী) কমিটির সদস্যও করা হবে। বর্তমানে এই কমিটির প্রধান হলেন শশী থারুর।
দিল্লির সেন্ট স্টিফেন্স কলেজ ও আজমিরের মেয়ো কলেজের প্রাক্তনী শ্রিংলা অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র ছিলেন। ভারতের সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় ১৯৮৪ সালের ব্যাচে তিনি সারা দেশের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করেন এবং ফরেন সার্ভিসকে কেরিয়ার হিসেবে বেছে নেন। কূটনীতিবিদ হিসেবে তার বর্ণময় ক্যারিয়ারে তিনি শুধু বাংলাদেশেই নয়, যুক্তরাষ্ট্র ও থাইল্যান্ডেও ভারতের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। পরে অবসর নিয়েছেন দেশের শীর্ষ কূটনীতিবিদ বা পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে।
রবিবার রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর কার্যালয় থেকে রাজ্যসভায় মনোনীত সদস্য হিসেবে শ্রিংলার নাম ঘোষণার পর প্রধানমন্ত্রী মোদি এক্স হ্যান্ডলে পোস্ট করে বলেছেন, ‘শ্রী হর্ষবর্ধন শ্রিংলাজি ডিপ্লোম্যাট, ইন্টেলেকচুয়াল ও স্ট্র্যাটেজিক থিঙ্কার হিসেবে অসাধারণ উৎকর্ষের পরিচয় দিয়েছেন। সুদীর্ঘ কর্মজীবনে তিনি দেশের পররাষ্ট্রনীতিতে ও ভারতের জি-২০ প্রেসিডেন্সিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন।’
নরেন্দ্র মোদি আরও লিখেছেন, ‘আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে ভারতের প্রেসিডেন্ট তাকে রাজ্যসভায় মনোনীত করেছেন। তার অনন্য দৃষ্টিকোণ (ভারতের) সংসদীয় কর্মকাণ্ডকে বিপুলভাবে সমৃদ্ধ করবে।’
রাষ্ট্রপতি মুর্মু এদিন শ্রিংলা ছাড়াও ইতিহাসবিদ মীনাক্ষী জৈন, মুম্বাইতে ২৬/১১ মামলায় রাষ্ট্রের আইনজীবী উজ্জ্বল নিকম এবং কেরালাতে একটি রাজনৈতিক হামলায় দু’টি পা হারানো বিজেপি নেতা সি সদানন্দন মাস্টারকেও রাজ্যসভায় মনোনীত করেছেন।