ঝালকাঠি : রাজাপুরে ২ কোটি ১২ লাখ ৮১ হাজার ১২৮ টাকা ব্যয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে বহুমুখী ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রের পাইলিংয়ের কাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, পাইলিং নির্মাণে নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে নিন্মমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করা হচ্ছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষের অজ্ঞাতেই কাজ করে যাওয়া হলেও প্রতিকারে কেউ এগিয়ে না আসায় জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
জানা গেছে, ডিডিএম/এমসিএস-২/০৬৩নং প্যাকেজে, ই-টেন্ডার আইডি নং-২০৫২৩০ এর আওতায় বড়াইয়া ডিগ্রি কলেজ-কাম-বহুমুখী ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে তিন তলাবিশিষ্ট (নিচতলা উন্মুক্ত) ভবন নির্মাণ করা হবে।
এদিকে মূল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স শ্যাডো কনস্ট্রাকশনের কাছ থেকে প্রকল্পটি ক্রয় করে ভবন নির্মাণের কাজ করছেন রাজাপুর সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ঠিকাদার আনোয়ার হোসেন মৃধা মজিবর।
সরেজমিন জানা গেছে, মূল ভবন নির্মাণের জন্য ৮০ ফুট গভীরতায় ৪২টি পাইলিং নির্মাণ করার কথা থাকলেও নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে ৭৫-৭৬ ফুটে ঠিকাদারের ইচ্ছামতোই নির্মাণকাজ এগিয়ে যাচ্ছে। আর পাইলিং নির্মাণে রডের খাঁচায় ব্যবহার করা হচ্ছে ১৬ এমএম-এর পরিবর্তে ১২ এমএম, ১০ এমএম-এর পরিবর্তে ৮ এমএম নিন্মমানের রড। রডের খাঁচায় চেয়ারের ব্যবহারের কথা থাকলেও তা দেয়ার কোনো বালাই নেই। নিয়ম মোতাবেক পাইলিং নির্মাণে বোল্ডার পাথরের চিপস ব্যবহারের কথা থাকলেও ব্যবহার করা হচ্ছে সিঙ্গেল পাথর। পাইলিং নির্মাণে ঢালাই মিশ্রণ দ্রুত জমাট বাঁধতে কেমিক্যাল ব্যবহারের নিয়ম থাকলেও কেমিক্যাল রাখা হয়েছে শুধু ডিসপ্লে করে।
অভিযোগ রয়েছে ঢালাই মিশ্রণে সি-১ সিমেন্ট ব্যবহার না করে সি-২ সিমেন্ট দিয়ে মিশ্রণ তৈরি করা হলেও পরিমাণেও সিমেন্ট কম দেয়া হয়। নির্মাণকাজ চলাকালে দেখা মেলেনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধি বা দায়িত্বপ্রাপ্ত পিআইও অফিসের কোনো প্রতিনিধির।
ঠিকাদারের লোকজন নিজেদের ইচ্ছেমতো কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। ফলে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ভবনের অনিয়ম দেখে স্থানীয়রা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
৬ অক্টোবর স্থানীয়রা বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আফরোজা বেগম পারুলকে জানালে তিনি সঙ্গে সঙ্গে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোসা. নাসরিন সুলতানাকে ঘটনাস্থলে পাঠান। কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে ঘটনাস্থলে পাঠালেও কোনো সুফল মিলছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা নিষেধ করার পরও ঠিকাদার তার ইচ্ছামতো কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
সুধীজনরা মনে করেন উপকূলীয় ও ঘূর্ণিঝড়প্রবণ এলাকায় এ আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণের ক্ষেত্রে তদারকি করা জরুরি হয়ে পড়েছে। তারা বলছেন, বিপদাপন্ন মানুষরাই আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়ে থাকেন। এখন সে আশ্রয় কেন্দ্রের অবকাঠামোই যদি গড়ে ওঠে দুর্বল ভিত্তির ওপর, তবে তা সবাইকে আবার নতুন করে বিপদের মুখে ফেলে দিতে পারে।
এ ব্যাপারে ঠিকাদারের পক্ষ থেকে তদারকির দায়িত্বে থাকা মো. জসিমের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, পাইলিংয়ের রড ব্যবহারের ক্ষেত্রে দু-একটি রড এদিক-সেদিক হতে পারে। আর পাইলিংয়ের গভীরতায় ২ ফুট কম দিয়েছি মাত্র।
এ ব্যাপারে বর্তমান ঠিকাদার মো. আনোয়ার হোসেন মৃধা মজিবরের কাছে জানতে চাইলে তিনি সম্পূর্ণ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এখানে এদিক-সেদিক করার কোনো সুযোগ নেই। কারণ এটা কম্পিউটারের মাধ্যমে টেস্ট করা হবে, তবে কাজ করতে গেলে উনিশ-বিশ হতে পারে।
বহুমাত্রিক.কম