মৌলভীবাজার : বছরের শুরুতে প্রকাশনা সংস্থা সমুহের বিভাগীয় কর্মকর্তা কর্মচারীদের দৌড়ঝাপ তৃণমূল এলাকায় ব্যাপক বিস্তার লাভ করেছে। ফলে গাইড বই প্রকাশনীদের এখন পৌষ মাস হলেও শিক্ষার্থীদের সর্বনাশ বয়ে আনছে।
সরকারি নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও প্রকাশনা সংস্থাগুলো লাইব্রেরি সমুহের সহায়তা নিয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষ কিংবা অসাধু শিক্ষকদের আর্থিক প্রলোভন দেখিয়ে নির্দিষ্ট গাইড বই পাঠ্য তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করে নিচ্ছে। মৌলভীবাজার সদর সহ সবক’টি উপজেলার হাটবাজার সমুহে এখন প্রকাশ্যে নিষিদ্ধ গাইড বই ও নোট বিক্রয়ের রমরমা ব্যবসা চলছে।
প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এসব অসাধু শিক্ষকের নির্দেশে শিক্ষার্থীরা নিন্মমানের নির্ধারিত গাইড বই ও গ্রামার বই কিনতে বাধ্য হচ্ছে। গাইড ও নোট বই ব্যবহারের ফলে শিক্ষার্থীরা সৃজনশীল শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলে অনেকেই মন্তব্য করছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, জেলার উপজেলা ও গুরুত্বপূর্ণ শহর, হাটবাজারে গড়ে ওঠা বইয়ের দোকানে ২য় থেকে ১০ম শ্রেণীর নিষিদ্ধ নোট ও গাইড বইয়ে সয়লাব হয়ে গেছে। এসব দোকানে বিভিন্ন প্রকাশনীর গাইড বই বিক্রি হচ্ছে। প্রকাশনী সংস্থাগুলোর প্রতিযোগিতায় শিক্ষকরা বিভিন্ন ক্লাসের সৌজন্য গাইড বই ও আনুষঙ্গিক সুবিধা পাচ্ছেন। এছাড়া লাইব্রেরী সমুহেও প্রকাশনী সংস্থার সুবিধা নিয়ে জমজমাট বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে।
অভিযোগ রয়েছে জেলার প্রসিদ্ধ স্কুল ছাড়াও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা ক্লাসের শিক্ষার্থীদের তাদের পছন্দের প্রকাশনীর গাইড বই কিনতে উদ্বুদ্ধ করছেন। প্রকাশনীর সঙ্গে অধিকাংশ স্কুল কর্তৃপক্ষ ও অসাধু শিক্ষকদের বিশেষ সখ্যতার বিনিময়ে গাইড বই ব্যবসা জমে উঠেছে। সৃজনশীল ও অনুশীলনমূলক বইয়ের নামে নিষিদ্ধ নোট ও গাইড বই কিনতে অভিভাবকদের বাধ্য করে মুনাফা লুটছে অসাধুচক্র। প্রকাশ্যে এ ধরনের বইয়ের দোকানে নোট, গাইড ও নিন্মমানের বই বিক্রি হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সেদিকে কোনো নজর নেই। শিক্ষার্থীরা জানায়, তারা নোট ও গাইড বইয়ের ওপর ক্রমেই নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। কারন স্কুলে ভালোভাবে পাঠাভ্যাস না করার কারনে গাইড বইয়ের সহায়তা ছাড়া পড়াশুনা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তবে এসব বিষয়ে দেখে শুনেও সংশ্লিষ্টরা রয়েছেন নিরব।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দু’জন প্রধান শিক্ষক বলেন, প্রকাশনা সংস্থার লোকজন রীতিমতো প্রতিযোগিতা নিয়েই এই সময়ে বিদ্যালয়ে এসে ও শিক্ষকদের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা প্রদান করে তাদের নির্ধারিত গাইড, নোট ও গ্রামার বিক্রি করতে বাধ্য করে। কমলগঞ্জে প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি অসমঞ্জু রায় প্রকাশ্যে গাইড বই বিক্রির সত্যতা স্বীকার করে বলেন, সারাদেশেরই এখন এভাবে চলছে। কারো একার পক্ষে এটি বন্ধ করা সম্ভব নয়। তবে প্রকাশনা সমুহে অপ্রয়োজনীয় গাইড ও নোট বই ছাপানো বন্ধ করে দিতে পারলেই সমস্যার সমাধান সম্ভব।
প্রধান শিক্ষক রনেন্দ্র কুমার দেব বলেন, এবছর পরীক্ষার কারনে কোম্পানী যোগাযোগ করতে পারেনি। তবে নিউটন কোম্পানীর লোকজন স্কুলে গাইড নিয়ে ঢুকতে চেষ্টা করেছে, আমি সে সুযোগ দেইনি। ২০১২ সাল থেকে এযাবত কোন গাইড বইয়ের বিষয়ে আমরা পরামর্শ দিই না।
কমলগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোশারফ হোসেন বলেন, এ বিষয়ে আমরা শিক্ষকদের সর্বদা সতর্ক থাকতে বলেছি। তাছাড়া উচ্চ আদালতের নির্দেশনা মোতাবেক লাইব্রেরী সমুহে গাইড বই বিক্রয়ে কোন বিধি নিষেধ করা সম্ভব হচ্ছে না। মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শামসুন্নাহার পারভীন বলেন, গাইড ও নোট বই পুরোপুরি নিষিদ্ধ। কোন শিক্ষক যদি বই কিনতে কাউকে উৎসাহ যোগায় এ ধরণের অভিযোগ পাওয়া গেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে
বহুমাত্রিক.কম