ছবি- নিহত রোকসানা ও তার স্বামী হালিম দেওয়ান
স্বামী-সন্তান ফেলে রেখে আশুলিয়ার হালিম দেওয়ান নামের একজনকে ৬ মাস আগে বিয়ে করেন রোকসানা বেগম (৩২)। কিন্ত যে সুখের আশায় ঘর ছাড়েন তা পুরণ হয়নি তার। বিয়ের ছয় মাস না যেতেই দুনিয়া ছাড়তে হয় তাকে। যার হাত ধরে বাড়ি ছাড়ল খোদ স্বামীই তার লাশ হাসপাতালে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়।
ঘটনায় আশুলিয়া থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হলেও নিহতের স্বজনদের দাবী তাকে হত্যা করেই হাসপাতালে নিয়ে যায় স্বামী হালিম দেওয়ান এবং সুযোগ বুঝে লাশ ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। পরে হত্যা মামলা করতে চাইলেও তা করেনি থানা পুলিশ। এরই মধ্যে লাশের ময়নাতদন্ত শেষ হয়েছে। বোন হত্যার বিচার চেয়ে তার দুই ভাই দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। গতকাল দুপুরে কথা হয় তাদের সাথে। এর আগে গেল ২৫ ফেব্রুয়ারি রাতে আশুলিয়ার শ্রীপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহত রোকসানা ময়মনসিংহের ধোবাউরা থানাধীন জিগাতলা গ্রামের আবু তালেবের মেয়ে। তিনি আশুলিয়ার শ্রীপুর এলাকার আলমগীর হোসেনের বাড়িতে স্বামী হালিম দেওয়ানের সাথে বসবাস করতো। অভিযুক্ত হালিম দেওয়ান আশুলিয়ার শ্রীপুর এলাকার আলমাস দেওয়ানের ছেলে। ঘটনার পর থেকে তিনি পলাতক রয়েছেন।
নিহতের ছোট ভাই রোমান ও নাজিম উদ্দিন জানান, বিগত ২০ বছর আগে তার বোনের বিয়ে হয় আশুলিয়ার ধলপুর এলাকায়। তার দুটি কন্যা সন্তান রয়েছে। কিন্তু বিগত ছয় মাস আগে হালিম দেওয়ান নামের একজনের সাথে পরিচয়ের সূত্র ধরে এবং তার প্ররোচনায় স্বামী ও দুই মেয়েকে ফেলে ঘর ছাড়ে রোকসানা। বিয়ের ছয় মাস না যেতেই ওই হালিম তাদের বোনকে হত্যা করে হাসপাতালে লাশ ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। আর সেটাকে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেয়।
তারা জানান, ঘটনার দিন ২৫ ফেব্রুয়ারী শনিবার রাতে রোকসানা তার মা রেজিয়া বেগমকে মোবাইল ফোনে কল করে জানান, তিনি রোববার সকালে শ্যামলীতে যাবেন। এসময় রেজিয়া বেগম মোবাইলে হালিমের গালাগালি শুনতে পান। হালিম উত্তেজিত থাকায় রোকসানা কল কেটে দেন। ঐ রাতেই রোকসানার মা, ভাই-বোনসহ পরিবারের সকলে খবর পান যে, রোকসানা আত্মহত্যা করেছেন। খবর পেয়ে রোকসানার মা রেজিয়া বেগম, ভাই মোঃ রোমান, নিজাম উদ্দিন ও অন্যান্যরা চক্রবর্তী এলাকাস্থিত শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মেমোরিয়াল কেপিজে বিশেষায়িত হাসপাতালে যান এবং সেখানে গিয়ে দেখেন রোকসানার নিথর দেহ পড়ে আছে।
নিহতের দুইভাই অভিযোগ করে বলেন, তাদের বোনকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে সেই হত্যাকে আত্মহত্যা বলে চালাতে চেষ্টা করেছে হালিম। রোকসানার লাশ হাসপাতালে ফেলে হালিম পালিয়ে গেছে। আজ অবধি হালিমের কোন খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। রোকসানার গলায়, মুখে, শরীরের বিভিন্নস্থানে আঘাতের চিহ্ন ছিল। থানায় গিয়ে বার বার হত্যা মামলা করতে চাইলেও অপমৃত্যু মামলা নেয় থানা। তারা বোন হত্যার বিচার চান এবং পুলিশকে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখার দাবী জানান। সেই সাথে দোষী হালিম দেওয়ানকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানান।
এব্যাপারে নিহতের বাবা আবু তালেব জানান, "আমার মেয়েকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। আমি ওর বিচার চাই। এছাড়া হালিমের ভাগ্নে ও ভাতিজা পরিচয় দিয়ে মীমাংশা হোয়ার জন্য চাঁপ দিচ্ছে।" বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
মামলার তন্তকারী কর্মকর্তা আশুলিয়া থানার এসআই শেখ মোঃ মাসুদ আল মামুন জানান, এটা হত্যা না আত্মহত্যা ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পরই প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে। তবে ভিকটিমের বাবাকে বিষয়টা মীমামাংশার জন্য চাঁপ দিচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, বিষয়টি তার জানা নেই। এছাড়া বাদীপক্ষ কেউ তাকে এটা জানায়নি।