Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

পৌষ ৭ ১৪৩২, সোমবার ২২ ডিসেম্বর ২০২৫

২৫ ডিসেম্বর ঘিরে নিরাপত্তাবলয়

বহুমাত্রিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৩:০৩, ২২ ডিসেম্বর ২০২৫

প্রিন্ট:

২৫ ডিসেম্বর ঘিরে নিরাপত্তাবলয়

ফাইল ছবি

দীর্ঘ ১৭ বছরের বেশি সময় পর আগামী ২৫ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার সপরিবারে দেশে ফিরছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তাকে বরণ করতে ওইদিন ঢাকায় লাখ লাখ জনতার উপস্থিতি থাকবে। সে বিষয়টি মাথায় রেখে ২৫ ডিসেম্বর ঘিরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে ঢাকাজুড়ে সাজানো হচ্ছে বিশেষ নিরাপত্তাবলয়। এরই মধ্যে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে শুরু করে গুলশানের বাসভবন পর্যন্ত নিরাপত্তা প্রস্তুতির কার্যক্রমও শুরু হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্রে এসব তথ্য মিলেছে।

বিএনপির দলীয় সূত্র বলছে, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দেশে প্রত্যাবর্তন ঘিরে নিরাপত্তার বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। সরকারি নিরাপত্তা ব্যবস্থার পাশাপাশি তাই দলীয়ভাবেও নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ২৫ ডিসেম্বর তারেক রহমান ঢাকায় পা দেওয়ার পর চেয়ারপারসন সিকিউরিটি ফোর্স-সিএসএফ তার নিরাপত্তার আনুষ্ঠানিক দায়িত্ব নেবে। এজন্য বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নিরাপত্তায় নিয়োজিত সিএসএফ পুনর্গঠন করা হয়েছে, সদস্য সংখ্যাও বাড়ানো হয়েছে। চেয়ারপারসন ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এরই মধ্যে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এ কে এম শামছুল ইসলামকে প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এ কে এম শামছুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নিরাপত্তার জন্য দলের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা-সংক্রান্ত যত বিষয় রয়েছে, এর সবই নেওয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়মিত নিরাপত্তা কার্যক্রমের বাইরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নিরাপত্তার বিষয়ে সিএসএফের সঙ্গে সমন্বয় করে বিশেষ নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হচ্ছে। তার আগমনের দিন ছাড়াও চলাফেরার সময়ও বিএনপির চাহিদা অনুযায়ী নিরাপত্তা কার্যক্রম বলবৎ থাকবে।

তারেক রহমানকে বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটটি ২৫ ডিসেম্বর বেলা ১১টা ৫৫ মিনিটে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের কথা রয়েছে। ঢাকায় ফিরে রাজধানীর গুলশান অ্যাভিনিউ রোডের ১৯৬ নম্বর বাসায় ওঠার কথা রয়েছে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বাসভবন ‘ফিরোজা’ ওই বাড়ির দেয়াল লাগোয়া।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সূত্রগুলো বলছে, এরই মধ্যে তারেক রহমানের ফেরা নিয়ে পুলিশের মধ্যে কয়েক দফা সমন্বয় সভা করা হয়েছে। এসব সভায় বিমানবন্দর থেকে গুলশান অ্যাভিনিউ পর্যন্ত বিশেষ নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলার কার্যক্রম চলছে। এ ছাড়া ঢাকায় অবতরণের পর বিমানবন্দরের অদূরে তিনশ ফুট সড়কে দলের পক্ষ থেকে তারেক রহমানকে সংবর্ধনা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। দেশে ফিরে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সেখানে তার মাকে দেখতে যেতে পারেন এবং শেরেবাংলা নগরে দলের প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজার জিয়ারত করতে পারেন। এ কর্মসূচি ঘিরে ৩০০ ফুট সড়ক, এভারকেয়ার হাসপাতাল ও শেরেবাংলা নগরে জিয়া উদ্যান এলাকাতেও বিশেষ নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলার প্রস্তুতি রয়েছে। অবশ্য এসব কর্মসূচির বিষয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে নিশ্চিত হওয়ার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী চূড়ান্ত নিরাপত্তা প্রস্তুতি নেবে।

নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, তারেক রহমানকে বিমানবন্দর থেকে গুলশানের বাসভবনে পৌঁছে দিতে সিএসএফের পাশাপাশি পুলিশের বিশেষ এস্কর্ট থাকবে। পোশাকে ও সাদা পোশাকে গোটা এলাকা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরের মধ্যে থাকবে। বিমানবন্দর থেকে শুরু করে গুলশানের বাসভবন পর্যন্ত পুলিশের নিয়মিত তল্লাশি চৌকির পাশাপাশি অতিরিক্ত তল্লাশি চৌকি বসানো হচ্ছে অন্তত দুই দিন আগে থেকে। এ ছাড়া পুরো বিমানবন্দর এলাকাও থাকছে নিরাপত্তা চাদরের মধ্যে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উত্তরা বিভাগের উপকমিশনার মো. শাহরিয়ার আলী কালবেলাকে বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে ফেরার পর তার নিরাপত্তার বিষয়টি কেন্দ্রীয়ভাবে দেখভাল করা হবে। তবে ২৫ ডিসেম্বর তার ফেরা ঘিরে বিমানবন্দর এলাকায় প্রয়োজনীয় সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

পুলিশের গুলশান বিভাগের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা বলেছেন, ২৫ ডিসেম্বর এমনিতেই পুরো ঢাকাজুড়ে নিরাপত্তা বলয় থাকবে। তবে ডিএমপির গুলশান বিভাগের পক্ষ থেকেও বিএনপি চেয়ারপারসন ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বাসভবনসহ গোটা এলাকাতেই নিরাপত্তা বলয় থাকবে।

পুলিশ সদর দপ্তরের একজন কর্মকর্তা কালবেলাকে বলেন, তারেক রহমানের নিরাপত্তার বিষয়ে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। প্রতিনিয়ত গোয়েন্দা কার্যক্রম বিশ্লেষণ করে এবং বিএনপির পক্ষ থেকে চাহিদার ভিত্তিতে চূড়ান্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কত সদস্য থাকবে, জানতে চাইলে ওই কর্মকর্তা বলেন, এ সংখ্যা নির্ধারিত নয়। প্রয়োজন অনুযায়ী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হবে। তারা নানা স্তরে নানাভাবে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে সেদিন। এর মধ্যেই রাজধানীর সব থানাগুলোকে ২৫ ডিসেম্বর ঘিরে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।

বিমানবন্দর ঘিরে বিশেষ নিরাপত্তা : এদিকে বিমানবন্দর সূত্র জানায়, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সব সময়েই নিয়ম অনুযায়ী অতি উচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকলেও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দেশে ফেরা উপলক্ষে ২৫ ডিসেম্বর বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। রানওয়ে থেকে শুরু করে পুরো বিমানবন্দর এলাকায় নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে। বিমানবন্দরের ভিভিআইপি ও ভিআইপি টার্মিনালসহ সব এলাকায় নিরাপত্তা তল্লাশি চলছে। ওইদিন তারেক রহমানকে বহনকারী ফ্লাইটটি অবতরণের পাশাপাশি নিয়মিত ফ্লাইট উড্ডয়ন-অবতরণ যাতে বিঘ্ন না ঘটে, সেই ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে।

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন এস এম রাগীব সামাদ কালবেলাকে বলেন, বিমানবন্দর সব সময়েই নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে থাকে। তবে ২৫ ডিসেম্বর ঘিরে সেই নিরাপত্তা আরও বাড়ানো হয়েছে।

তিনি বলেন, ২৫ ডিসেম্বরও বিমানবন্দরে নিয়মিত ফ্লাইট উড্ডয়ন-অবতরণ করবে। তবে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দেশে ফেরা ঘিরে ওই দিন বিমানবন্দর এলাকা ও আশপাশের সড়কে প্রচণ্ড ভিড় থাকবে। এজন্য নিয়মিত ফ্লাইটের যাত্রীদের নির্ধারিত সময়ের আগে বিমানবন্দরে উপস্থিত থাকা উচিত। পাশাপাশি বিদেশগামী বা দেশে আসা কোনো প্রবাসী যাত্রী যাতে ওইদিন কোনো স্বজনকে বিমানবন্দরে না নিয়ে আসেন, যাত্রীদের কাছে সেই অনুরোধও থাকবে।

ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে চিন্তায় পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ: বিএনপির বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, তারেক রহমানকে স্বাগত জানাতে ওই দিন সারা দেশ থেকে অন্তত ৫০ লাখ নেতাকর্মীকে ঢাকায় আনার পরিকল্পনা চলছে। এ ছাড়া ঢাকা মহানগরী থেকেও ২০ থেকে ২৫ লাখ মানুষের সমাগম করার পরিকল্পনা রয়েছে। দলের নির্দেশনা অনুযায়ী, আগের দিন অর্থাৎ ২৪ ডিসেম্বর রাত থেকেই নেতাকর্মীরা ঢাকায় আসতে শুরু করবেন। এ অবস্থায় নিরাপত্তার পাশাপাশি জনসমাগমে শৃঙ্খলা রক্ষার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে বিএনপি।

তবে ঢাকায় স্মরণকালের এ সর্বোচ্চ জনসমাগম ঘিরে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে চিন্তায় পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের কর্মকর্তারা। ট্রাফিক পুলিশের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা ধারণা করছেন, অন্তত দুদিন আগে থেকে দলটির সারা দেশের নেতাকর্মীরা ঢাকায় ঢুকতে শুরু করবেন। এতে রাজধানীর সড়কে বড় ধরনের যানজট হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। ২৪ ডিসেম্বর দিনভর এবং ২৫ ডিসেম্বর ভোর থেকে ঢাকার প্রবেশপথগুলো রীতিমতো আটকে যেতে পারে বলে ধারণা করছেন ট্রাফিক পুলিশের কর্মকর্তারা। বিভিন্ন জেলা থেকে ওই দিন অতিরিক্ত বাস ঢাকায় প্রবেশের চেষ্টা করবে। এতে গাবতলী, পোস্তগোলা, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের শনিরআখড়া, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সুলতানা কামাল সেতু, বছিলা-মোহাম্মদপুর এলাকা এবং গাজীপুর থেকে উত্তরা এলাকার প্রবেশ পথগুলোতে তীব্র যানজট হতে পারে। এ ছাড়া টঙ্গী ও বিমানবন্দর রেলস্টেশন, কমলাপুর রেলস্টেশন ও সদরঘাট এলাকাতেও থাকবে অতিরিক্ত লোক। অবশ্য ২৫ ডিসেম্বর সরকারি ছুটি থাকায় সে বিষয়টি চিন্তা করে ট্রাফিক ব্যবস্থার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, ২৫ ডিসেম্বর রাজধানীর অনেক সড়ক ডাইভারশন করা হবে, অনেক সড়ক বন্ধ থাকবে। এ বিষয়ে দুই-এক দিনের মধ্যেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে তা নগরবাসীকে জানিয়ে দেওয়া হবে। পাশাপাশি বিভিন্ন জেলা থেকে নেতাকর্মীদের নিয়ে আসা যানবাহন জেলা বা বিভাগভিত্তিক কোথায় কোথায় পার্কিং করা হবে, তা নির্ধারণ করে বিএনপির নেতাদের অবগত করা হবে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মো. আনিছুর রহমান কালবেলাকে বলেন, ২৫ ডিসেম্বর ঘিরে এখনো ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। এ নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করে ওই দিনের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে।

তিনি জানান, নগরবাসীর ভোগান্তি এড়াতে ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে। ২৫ ডিসেম্বর ঘিরে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা চূড়ান্ত করে তা সবাইকে অবগত করা হবে।

Walton
Walton