Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ১৩ ১৪৩১, শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪

সুনামগঞ্জে নীতিমালা বদল হলেও শুরু হয়নি বাঁধ নির্মাণ

জাহাঙ্গীর আলম ভূঁইয়া, সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১০:৩৩, ১০ জানুয়ারি ২০১৮

আপডেট: ০০:০০, ৩১ ডিসেম্বর ১৯৯৯

প্রিন্ট:

সুনামগঞ্জে নীতিমালা বদল হলেও শুরু হয়নি বাঁধ নির্মাণ

ছবি : বহুমাত্রিক.কম

সুনামগঞ্জ : সুনামগঞ্জে এক ফসলি বোরো ধান উৎপাদন সমৃদ্ধ হাওরগুলো রক্ষায় ২০১৭ কাবিটা নতুন নীতিমালা অনুযায়ী ১৫ ডিসেম্ভর থেকে বাঁধ নির্মাণের কাজ বাধ্যতামুলক শুরু করার কথা। ২৮ ফেব্রুয়ারি বাঁধ নির্মাণের কাজ শেষ করার কথা থাকলেও নির্ধারিত সময়ের ২৬দিন পার হলেও এখনও বাঁধ রক্ষার কাজ শুরুই হয় নি।

প্রকল্প অনুমোদন, পিআইসি গঠন ও মাঠের কাজে পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রতিনিধিদের সহায়তা না পাওয়াসহ নানান কারণ রয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলার বিভিন্ন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাগন। অনেক উপজেলার হাওরে পানি না কমায় এখনও বাঁধ নির্মাণ শুরু হয় করা হয় নি। ফলে এ নিয়ে লাখো কৃষক উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা আর আতঙ্কে সময় পার করছেন।

জানা গেছে, জেলার তাহিরপুর, জামালগঞ্জ, ধর্মপাশা, বিশ্বম্ভরপুর, দিরাই, শাল্লা, ছাতক, দোয়ারা বাজার উপজেলাসহ ১১টি উপজেলার ছোট বড় ১৫৪টি হাওরের বাঁধ রক্ষায় পিআইসি অনুমোদন হয়েছে-৮৬৫টি।

এবার পিআইসি গঠনের দায়িত্ব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নেতৃতাধীন কমিটির। নতুন নীতিমালা নদী, খাল পূর্নখননের জন্য স্কিম প্রস্তুত ও বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাবিটা নীতিমালা-২০১৭ অনুযায়ী ২০১৭-২০১৮ থেকে এই পরিবর্তিত নীতিমালায় কাজ হবে। সে অনুযায়ী ৩১অক্টোবরের মধ্যে পিআইসি গঠনের নির্দেশনা ছিল। নতুন নীতিমালা অনুযায়ী ১৫ ডিসেম্বর থেকে বাঁধ নির্মাণের কাজ বাধ্যতামুলক শুরু করার কথা। আর ২৮ফেব্রুয়ারি বাঁধ নির্মাণের কাজ শেষ করার কথা থাকলেও গত শনিবার অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান নলুয়ার হাওরের বাঁধের কাজের উদ্বোধন করেন। এছাড়া আর কোথাও এখনও বাঁধ রক্ষার কাজ শুরুই হয় নি।

নির্ধারিত সময়ের এক মাস পর পিআইসি গঠন করে অনুমোদন হলেও জেলার বিভিন্ন উপজেলার পিআইসি অনুমোদনে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। পাউবো সূত্রে আরো জানাযায়, হাওর রক্ষা বাঁধের কাজের গতি আনার জন্য দুটি বিভাগে বিভক্ত করা হয়। পাউবোর সুনামগঞ্জ (পরিচালনা ও রক্ষানাবেক্ষণ) বিভাগ-১ এর অধীনে সুনামগঞ্জ ১এর অধিনে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা ৪৮টি, বিশ্বম্ভরপুর ৩৫টি, তাহিরপুর ৬০টি, জামালগঞ্জ ৬৯টি ও ধর্মপাশা-১৭৯টি। ১-এর অধীনে মোট পিআইসি ৩১৯টি গঠন করে পিআইসিদের কে ১২ কোটি ৩৯ লাখ টাকা ও বিভাগ-২ এর অধীনে দিরাই-১১৩টি, শাল্লায়-১৪১টি, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ-৬০টি, জগন্নাথপুর-১০৮টি, ছাতক-১১টি, দোয়ারা বাজার-৪১টি পিআইসি গঠন করা মোট ৪৭৪টি গঠন করে পিআইসিদেরকে ১৬কোটি ৪৯ লাখ টাকা বরাদ্ধ দেওয়া হয়েছে।

হাওর রক্ষার বাঁধ নির্মাণের চাহিদা রয়েছে ১ হাজার ৪৫০কিলোমিটার হলেও রাজস্ব খাতে ৩৬টি হাওরে কাজ হবে ৫৭৯কিলোমিটার। ৯১কোটি টাকার চাহিদা থাকলেও অনুমোদন হয়েছে ২৮কোটি ৮৮লাখ টাকা। গত বছর সুনামগঞ্জের হাওরের বাঁধ রক্ষায় ৬০কোটি টাকা বরাদ্ধ দেওয়া হয়। এর মধ্যে ঠিকাদারদের ৪৮কোটি ও পিআইসিদের ২০কোটি টাকা বরাদ্ধ দওয়া হয়। কিন্তু কাজের ক্ষেত্রে হয়েছিল পুকুর চুরি যার জন্য অকাল বন্যায় বাঁধ ভেঙ্গে সকল হাওর পানিতে তলিয়ে যায়। এতে করে জেলার ৩লাখ ২৫হাজার ৯৯০টি কৃষক পরিবার চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

সুনামগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালকের কার্য্যালয় সূত্রে জানা যায়, জেলার সর্বমোট আবাদি জমির পরিমাণ ৩,৭৯,২১৬ হেক্টর। গত বছর প্রায় ২লাখ ১৫হাজারের অধিক হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ করা হয়েছিল। আর বাকি জমিতে অন্যান্য ফসল। চলতি বছরে ২ লাখ ২২ হাজার ৫৫২ হেক্টর লক্ষ্যমাত্র নির্ধারণ করা হয়েছে। যার মূল্য ১৫শ কোটি টাকার বেশি।

তাহিরপুরের কৃষকগন খেলু মিয়া বলেন, এবারও সময় নষ্ট করে প্রকল্প প্রস্তুত, অনুমোদন ও পিআইসি গঠন করায় আর নতুন নীতিমালা মাইক ডোল বাজিয়ে বললেও কাজের কাজ কিছুই মানা হচ্ছে না। ১৫ডিসেম্বর বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরুর কথা থাকলেও এখনও শুরুই হয় নি। এবারও মনে হচ্ছে দুঃখের শেষ থাকবে না।

তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পূনেন্দ্র দেব জানান, আমার উপজেলায় পিআইসি গঠন করা শেষ ও অনুমোদন হয়েছে। এছাড়া সকল কাজ সমাধানে সর্বোচ্ছ চেষ্টা করছি।

সুনামগঞ্জ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী (ডিভিশন-১)আবু বক্কর সিদ্দিক ভূঁইয়া বলেন,নতুন নীতি মালা অনুযায়ী ৩০নভেম্বরের মধ্যে সকল পিআইসি গঠন করার কথা ছিল কিন্তু নানান কারনে দেরী হয়েছে। ৬ জানুয়ারি অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান নলুয়ার হাওরের বাঁধের কাজের উদ্বোধন করেছেন। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করব যাতে করে ২৮ফেব্রুয়ারির মধ্যেই জেলার সকল বাঁধের কাজ শেষ হয়ে যায়।

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer