Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ২০ ১৪৩১, শনিবার ০৪ মে ২০২৪

ভাড়া দোকানে অতিথি শিক্ষক দিয়ে টেকনিক্যাল কলেজ!

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০২:২৫, ৮ মে ২০১৭

আপডেট: ০০:০০, ৩১ ডিসেম্বর ১৯৯৯

প্রিন্ট:

ভাড়া দোকানে অতিথি শিক্ষক দিয়ে টেকনিক্যাল কলেজ!

ছবি : বহুমাত্রিক.কম

ময়মনসিংহ : তিনটি দোকান ভাড়া নিয়ে তাতে দুইটি শ্রেণিকক্ষ আর একটি অফিসকক্ষ বানিয়ে চালানো হচ্ছে জেলার গফরগাঁও টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিএম কলেজ। নেই কোন নিজস্ব শিক্ষক, ব্যবহারিক ক্লাস ও পরীক্ষার জন্য ল্যাবও নেই।

কলেজের কেরানি, ল্যাব প্রদর্শক ও একজন অতিথি শিক্ষক (খন্ডকালিন) ও ২/৩ জন ভাড়াটিয়া শিক্ষক দিয়ে চলছে ক্লাস। অথচ কারিগরী শিক্ষা বোর্ডের অনুমোদন ব্যবহার করে কলেজের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গফরগাঁও টেকনিক্যাল এ্যান্ড বিএম কলেজটি ২০০৪ সালে খালেক-আমিন ফাউন্ডেশন কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতি বছর এখানে কম্পিউটার অপারেশন ও সেক্রেটারিয়াল সায়েন্স বিষয়ে ৮০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করানোর অনুমতি আছে। বর্তমানে কলেজটিতে ১৩০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। প্রতি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে প্রতিবছর মাসিক বেতন, ফরম পূরণ, বার্ষিক চাঁদা ও দোকান ঘর ভাড়ার চাঁদা বাবদ সর্বমোট প্রায় ১০ হাজার টাকা করে আদায় করা হয়।

কলেজটির নিজস্ব কোন ভবন নেই। পৌর শহরের ব্যস্ততম বাণিজ্যিক এলাকা জামতলা মোড় এলাকায় জনৈক আব্দুল খালেক ভেন্ডারের তিনটি দোকানঘর ভাড়া নিয়ে কলেজটি পরিচালিত হয়ে আসছে। কলেজের কোন নিজস্ব শিক্ষক নেই। স্নাতক পাশ কলেজের কেরানি সুরুজ মিয়া, ল্যাব এ্যাটেনডেন্ট মনোয়ারুল আলম লিটন, ভাড়াটে শিক্ষক স্নাতক পাশ মেরুনা সুলতানা মিশরী এবং আল মামুন নয়ন ও খন্ডকালিন শিক্ষক মুজাহিদুল ইসলামকে দিয়ে কলেজের ক্লাস নেওয়া হচ্ছে। শিক্ষকদের কারও এনটিআরসি’র নিবন্ধন নেই। কলেজে শিক্ষকতা করার যোগ্যতা নেই।

রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে পাশ করা মুজাহিদুল ইসলামের বিধি মোতাবেক কারিগরি কলেজে প্রভাষক পদে নিয়োগের জন্য আবেদন করার যোগ্যতা না থাকলেও কলেজের খন্ডকালিন/অস্থায়ী শিক্ষক পদে নিয়োগ নিয়ে কলেজের অধ্যক্ষ পদ পরিচয় দিয়ে বর্তমানে কলেজ পরিচালনা করছেন।

কলেজে শিক্ষক হিসেবে কর্মরত কেউ কলেজ পরিচালনা কমিটি কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত নয় এবং কারিগরি শিক্ষা/অধিদপ্তর কর্তৃক তাদের শিক্ষকতার অনুমোদন নেই। কলেজটি প্রতিষ্ঠার শুরুতে ১১ জন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হলেও দীর্ঘদিন কলেজের শিক্ষকদের এমপিও না হওয়ায় নিয়োগপ্রাপ্ত সকল শিক্ষক চাকুরি ছেড়ে চলে যায়।

এ অবস্থায় কলেজের ম্যানেজিং কমিটি ২০১৫ সালের এপ্রিল মাসে কলেজটি বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয় এবং বাংলাদেশ কারিগরী শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ কারিগরী শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ প্রশাসনের সকল স্তরে বিষয়টি অবহিত করে। এরপরও কারিগরি শিক্ষা বোর্ড কলেজটির একাডেমিক স্বীকৃতি বহাল রাখে এবং নিবন্ধনবিহীন ভাড়াটিয়া ও খন্ডকালীন শিক্ষকরা প্রতিবছর কলেজে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি অব্যাহত রাখে। বিষয় ভিত্তিক শিক্ষক ও ল্যাব না থাকায় কলেজটিতে নামমাত্র ক্লাস নেওয়া হলেও কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা কোন ব্যবহারিক ক্লাস কিংবা বাস্তব প্রশিক্ষনের সুযোগ পায় না।

এ ব্যাপারে কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোঃ আমিনুল হক বলেন,কলেজে কোন শিক্ষক না থাকায় দুই বছর পূর্বেই কলেজের পরিচালনা কমিটি কলেজের সকল কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। কিছু যুবক গায়ের জোরে কলেজটি পরিচালনা করছে এবং আমার স্বাক্ষর জাল করে অর্থ নয়ছয় করছে। কলেজের অধ্যক্ষ দাবীদার মুজাহিদুল ইসলাম বলেন,পরিচালনা কমিটি শিক্ষক নিয়োগ না দেওয়ায় অতিথি শিক্ষক দিয়ে কলেজ চালানো হচ্ছে।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ বেলায়েত হোসেন বলেন, এ কলেজের কার্যক্রম শহরের অন্য একটি কলেজে বিএম শাখা হিসেবে সম্পৃক্ত করার প্রস্তাব উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্টদের দেওয়া হয়েছে।

কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অশোক কুমার বিশ্বাস বলেন, বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer