Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ১২ ১৪৩১, শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪

ডিএপি সারের মূল্য হ্রাস আরেকটি কৃষিবান্ধব উদ্যোগ

ড. মো. হুমায়ুন কবীর

প্রকাশিত: ১৭:২৭, ৭ ডিসেম্বর ২০১৯

প্রিন্ট:

ডিএপি সারের মূল্য হ্রাস আরেকটি কৃষিবান্ধব উদ্যোগ

ঢাকা : সম্প্রতি ডাই এমোনিয়াম ফসফেট (ডিএপি) সারের মল্য আরেক দফা সমন্বয় করেছে সরকার। এটি নিঃসন্দেহে একটি কৃষিবান্ধব উদ্যোগ। এ বিষয়ে আলোচনার জন্য বলতে হয় বৈজ্ঞানিকভাবে ফসল উৎপাদনের জন্য কৃষিতে সারের ব্যবহার অনস্বীকার্য।

প্রাকৃতিকভাবে প্রস্তুতকৃত ও ব্যবহাকৃত সার হলো জৈব সার আর বিভিন্ন কাঁচামাল ও রাসায়নিক উপাদান দ্বারা প্রস্তুতকৃত ও ব্যবহার্য সার হলো রাসায়নিক সার। প্রাকৃতিক সার বা জৈব সার অনাদি অনন্তকাল ধরে ব্যবহূত হয়ে আসলেও আধুনিক উচ্চফলনশীল চাষাবাদের জন্য রাসায়নিক সারও এখন অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। কাজেই রাসায়নিক সার ব্যবহারের জন্য এর মূল্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। একসময় উন্নত কৃষি প্রযুক্তি হিসেবে সারের ব্যবহারে কৃষককে অভ্যস্ত করতে অনেক বেগ পেতে হয়েছে। তখনকার দিনে কৃষক রাসায়নিক সার ব্যবহার করতে চাইতো না।

তারা তখন মনে করতো রাসায়নিক সার ব্যবহার করলে মাটি নষ্ট হয়ে যায় এবং ফলন কমে যায় এবং ফসলের ক্ষেতে পুড়ে যায় ইত্যাদি ইত্যাদি।

কিন্তু যখন দেখা গেল রাসায়নিক সারের ব্যবহারে ফসলের উৎপাদন অনেকাংশে বেড়ে যায় এবং এর মাধ্যমে উচ্চফলনশীল ও আধুনিক ফসলের জাতের আবাদ করা সম্ভব। তখন রাসায়নিক সার অত্যাবশ্যকীয় কৃষি উপাদেন পরিণত হয়েছে। সেজন্য প্রতি মৌসুমে সার প্রাপ্তির নিশ্চয়তার উপর সে বছরের খাদ্য উৎপাদনের পরিমাণ নির্ভর করে। সারের মূল্য বৃদ্ধির প্রবণতা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় স্বাধীনতার পর থেকে মোটামোটি তা কৃষকের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যেই ছিল। এবং তখনকার দিনে সার নিয়ে কোন কারসাজি কিংবা অভাব অভিযোগ খুব একটা শোনা যায়নি।

কিন্তু ১৯৯১ সালে দেশে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হলে সেখানে কৃষককুল আরো বেশি ভর্তুকি এবং সুযোগ সুবিধা পাওয়ার প্রত্যাশা ছিল। সেখানে উল্টা চিত্র দেখা গেল। একদিকে সারের দামও বৃদ্ধি হলো অপরদিকে তার ক্রাইসিসও দেখা দিল। ১৯৯৪-৯৫ সালের দিকে সারের ব্যাপক ঘাটতির কারণে কৃষিতে ফসল উৎপাদনের ক্ষেত্রে ব্যাপক পতন ঘটলো। হলো সারের জন্য কৃষক আন্দোলন। সারের জন্য জীবন দিলো সারাদেশে প্রায় ১৭ জন কৃষক। ১৯৯৬ সালের ১২ জুনের নির্বাচনের মাধ্যমে দীর্ঘ ২১ বছর পর দেশে আওয়ামীলীগের নেতৃত্বে সরকার গঠনের পর কৃষিক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটতে থাকে।

তখন সারের মূল্য ও সরবরাহের ক্ষেত্রে ব্যাপক সংস্কার করা হয়। তার ফলস্বরূপ ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত সময়ে দেশে অভাবনীয় মাত্রায় ফসল উৎপাদিত হয়। সেখানে খাদ্য ঘাটতির দেশ থেকে প্রথমবারের মতো খাদ্যে স্বয়ম্ভরতা অর্জন করতে সমর্থ হয়। কাজেই সরকার বুঝতে পারে যে সার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমেই কেবল তা সম্ভব হয়েছে। সেজন্য সরকার সারের মূল্য ও এর সরবরাহের উপর সবসময়ই সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে এসেছে। তারই ধারাবাহিকতায় যতবারই আওয়ামীলীগের নেতৃত্বে সরকার গঠিত হয়েছে তখনই তারা কৃষিবান্ধব কর্মসূচি গ্রহণ করেছে সার ব্যবস্থাপনা যার মধ্যে অন্যতম।

আওয়ামীলীগের রেখে যাওয়া ২০০১ সালে সারের মূল্য রাতারাতি দুইগুণ-তিনগুণ বৃদ্ধি করে দেয় পরবর্তী সরকার। সেখানে ২০০৮ সালে প্রতিকেজি ডিএপি সারের মূল্য নির্ধারিত ছিলো ৯০ টাকা। ২০০৯ সালে পুনরায় আওয়ামীলীগ সরকার গঠন করার পর সেই ডিএপি সারের মূল্য নামিয়ে আনা হয় মাত্র ২৫ টাকায়। তখন আনুপাতিক হারে কমানো হয়েছিল অন্যান্য সকল প্রকার সারের মূল্যও। সেখানে হাজার হাজার কোটি টাকা দেশের কৃষকের জন্য কৃষি উন্নয়নের কথা চিন্তা করে ভর্তুকি দেয় সরকার। আর সরকারের সেই উদ্যোগ বৃথা যায়নি। সার ব্যবস্থাপনার সুফলকে কাজে লাগিয়ে দেশে রেকর্ড পরিমাণ খাদ্যোৎপান হয়। এবার শুধু খাদ্যে স্বয়ম্ভরতা নয় হয়েছে খাদ্য রপ্তানিকারক দেশ।

সেটিকে বর্তমানে আরো বেশি কার্যকর রাখার জন্য ডিএপি সারকে গুরুত্ব দেওয়ার জন্য মাটির স্বাস্থ্য রক্ষার কথা চিন্তা করে সেই সারের মূল্য প্রতিকেজি ২৫ টাকা থেকে কমিয়ে ১৬ টাকায় নির্ধারণ করা হয়েছে। হিসাব কষে দেখা গেছে সরকারের হয়তো ৮০০ কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হবে। কিন্তু এর বৈজ্ঞানিক সদূরপ্রসারী প্রভাব রয়েছে। কারণ ডিএপি সার ব্যবহার করার কারণে ইউরিয়া এবং টিএসপি সারের ব্যবহার কমে যাবে। ফসলের উৎপাদনের জন্য ইউরিয়া ব্যবহার করা হয় এমোনিয়ার জন্য আবার টিএসপি ব্যবহার করা হয় ফসফেটের জন্য। অথচ ডিএপি সারে এমোনিয়া (নাইট্রোজেন) এবং ফসফেট (ফসফরাস) একই সাথে পাওয়া যাচ্ছে কম খরচে। এতে একদিকে যেমন রাসায়নিক সারের ব্যবহারের পরিমাণ কমবে অপরদিকে দাম কম হওয়ার কারণে উৎপাদন খরচও কমবে। কাজেই মাটির গুণাগুণ ঠিক রেখে পরিবেশসম্মতভাবে অধিক ফসল অধিক ফলনে উৎপাদন সম্ভব।

লেখক: কৃষিবিদ ও ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়

email: [email protected]

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer