ছবি- বহুমাত্রিক.কম
যুবসমাজের মাঝে মানবিক মূল্যবোধ ও সেবার মহান ব্রত জাগ্রত করতে অখণ্ড ভারতের নবজাগরণের পুরোধা স্বামী বিবেকানন্দের জীবনাদর্শ ছড়িয়ে দেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন বিশিষ্টজনরা। বিশ্ববরেণ্য এই সন্ন্যাসী ও দার্শনিকের ১৫৯তম জন্মতিথি উপলক্ষে টাঙ্গাইলের রামকৃষ্ণ সেবাশ্রমে আয়োজিত অনুষ্ঠানে অতিথিরা তাঁর জীবন ও কর্মের নানাদিক তুলে ধরেন।
বিবেকানন্দ স্টাডি সার্কেল আয়োজিত দিনব্যাপি বর্ণাঢ্য এই আয়োজনের অতিথি মানিকগঞ্জ সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভাস্কর সাহা বলেন, ‘দেশের প্রত্যেকটি সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষা এবং সামাজিক প্রতিষ্ঠানসমূহে স্বামীজির বাণী পৌঁছে দেওয়া জরুরি। দেশে যে সাম্প্রতিক সম্প্রীতির টানাপোড়েন বিরাজমান-তা দূর করতে বিবেকানন্দের বাণীকে আকড়ে ধরার কোনো বিকল্প নেই।’
মন্দির ভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম, হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়- এর সহকারী প্রকল্প পরিচালক রমেশ চন্দ্র সরকার বলেন, ‘ধর্ম মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে খুব শিগগির বিবেকানন্দকে নিয়ে কাজ করা হবে। সারাদেশে বিবেকানন্দের আদর্শকে কিভাবে যুব সমাজের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া যায় সেই লক্ষ্যে সরকার কাজ করবে।’
অনুষ্ঠানের মুখ্য আলোচক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও প্রধান সমন্বয়ক-বিবেকানন্দ ইতিহাস ফান্ড ড. মিল্টন কুমার দেব বলেন, ‘স্বামী বিবেকানন্দ ছিলেন সকল ধর্মের মানুষের প্রাণ-প্রদীপ। রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের সেবাশ্রমে সকল ধর্মের মানুষের আরাধনা করা হয় ‘
তিনি বলেন, ‘এখানে মোহাম্মদ (সঃ) এর জন্ম ও মৃত্যুদিবস উপলক্ষে যেমন আয়োজন করা হয়, ঠিক তেমনই গৌতম বুদ্ধের জন্যেও আরাধনা করা হয়। রামকৃষ্ণ বলেছিলেন- যত মত তত পথ। সব ধর্মেই স্রষ্টাকে পাওয়া যায়। এরজন্য মানব সেবার মহাব্রতী হতে হবে।’
আলোচক জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাইদা নাসরিন বলেন, ‘স্বামীজি পৃথিবীর বুকে যে আলো রেখে গিয়েছেন তা আামাদেরকেই সবখানে পৌঁছে দিতে হবে। স্বামীজি ভগিনী নিবেদিতাকে বলেছিলেন লক্ষ্য রেখো মানুষ যেনো কখনো আমার পূজা না করে। তারা যেন মানুষের সেবা করে। একজন সত্যিকারের সেবকের পক্ষেই স্রষ্টার সান্নিধ্য লাভ করা সম্ভব।’
আলোচক কবি সাজিদ হাসান কামাল বলেন, ‘‘স্বামীজির আদর্শ ব্যতীত রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ কল্যাণ সাধন সম্ভব নয়। স্বামীজির দশ ও দেশসেবার বাণীতে অনুপ্রাণিত হয়ে সুভাষচন্দ্র বসু হয়ে উঠেছিলেন অখণ্ড ভারতবর্ষের পূর্ণ স্বাধীনতার একমাত্র জননায়ক ‘নেতাজি’। স্বামীজির থেকে যে আলো নেতাজির মধ্যে ছড়িয়েছিল সেই আলোকে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শক্তি এখনো বন্দী করে রেখেছে। আমাদেরকে সেই আলো পুনর্বার জাগিয়ে তুলে হবে, জগতকে আলোকিত করে তুলতে হবে।’’
রামকৃষ্ণ সেবাশ্রমের বিবেক মহারাজ বলেন, ‘ভারতের পাশাপাশি এখন বাংলাদেশেও স্বামীজির চর্চা শুরু হয়েছে। যা জাতীয় জীবনে অতীব জরুরি ছিল। স্বামীজির মতাদর্শে শুধু একটি জাতি নয় সারাবিশ্ব জেগে উঠুক- আমি ঈশ্বরের কাছে এই প্রার্থনা করি।
আলোচনা সভা শেষে স্কুল-মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের মাঝে বিবেকানন্দ শিক্ষা বৃত্তি প্রদান ও শিক্ষা উপকরণ বিতরণ করা হয় এবং সবশেষে বিতরণ করা হয় প্রসাদ। বর্ণাঢ্য এই আয়োজনে সঙ্গীত পরিবেশন করেন বিটিভির শিল্পী পারভীন আক্তার। অনুষ্ঠানে ভক্তিমূলক গান পরিবেশন করেন স্থানীয় শিশু শিক্ষার্থীরা।
বহুমাত্রিক.কম