ছবি : সংগৃহীত
ঢাকা : অখণ্ড ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের মহানায়ক নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর ১২১তম জন্মবার্ষিকীর মাত্র ৯ দিন পূর্বে চলে গেলেন তাঁর স্নেহধন্যা আজাদ হিন্দ ফৌজের নারী বাহিনী ‘ঝাঁসির রাণী বিগ্রেড’র লড়াকু যোদ্ধা স্বরস্বতী রাজামনি।
রোববার সকালে ভারতের চেন্নাইয়ের নিজ বাড়িতে ৯১ বছরে পা দেওয়া এই বীরমাতা শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। ভারতের স্বাধীনতার গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের অংশ হতে পারা এই বীর নারী বার্মায় জন্ম গ্রহণ করেন। আজাদহিন্দ ফৌজ’র দুর্ধর্ষ এই গোয়েন্দা সদস্যের বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য তিনি স্বয়ং সর্বাধিনায়ক নেতাজির আশীর্বাদ লাভ করেছিলেন। রাজামনির বুদ্ধিদীপ্ত রণকৌশলে অভিভূত নেতাজি তাকে ‘স্বরস্বতী’ অভিধায় আখ্যায়িত করেন।
তবে ব্রিটিশ বিতাড়িত স্বাধীন ভারতে অজস্র আজাদ হিন্দ ফৌজের সদস্যদের মত স্বরস্বতী রাজামনির ভাগ্যেও জুটে অবহেলা। দেশকে স্বাধীন করতে মরণপণ যুদ্ধ করা এই বীর নারী আমৃত্যু যথাযোগ্য সম্মান না পাওয়ার বেদনা পুষে গেছেন। গত বছর কলকাতায় নেতাজির শহরে নেতাজিপ্রেমীদের কাছ থেকে অভূতপূর্ব সংবর্ধনা পান তিনি।
স্বরস্বতী রাজামনি সংবর্ধনায় তরুণ প্রজন্মের কাছে দেশকে ভালবাসার আহ্বান জানিয়েছিলেন। একইসঙ্গে নেতাজির সান্নিধ্যধন্যা এই নারী যোদ্ধা ইতিহাসের মহানায়ক সুভাষচন্দ্র বসুকে মৃত প্রতিপন্ন করার প্রচেষ্টারও নিন্দা করেন, তিনি দৃঢ়কণ্ঠে দাবি করেন, তথাকথিত বিমান দুর্ঘটনায় নেতাজির মৃত্যু হয়নি।
এদিকে, আজাদ হিন্দ ফৌজের বিশিষ্ট এই নারী যোদ্ধার জীবনাবসানে অনেকটা নির্লিপ্তই থেকেছে ভারতের সরকার ও স্থানীয় গণমাধ্যম। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে নেতাজিপ্রেমীরা তীব্র সমালোচনা করে বলেছেন, যারা স্বাধীনতা সংগ্রামীদের সম্মান দেয় না-তারা দেশের কল্যাণও চায় না।
নেতাজি গবেষকদের তথ্য অনুযায়ী, মাত্র ১৫ বছর বয়সে সাহসী রাজামানি যোগ দেন ‘রানী লক্ষীবাঈ ব্রিগেড’-এ। বাচ্ছা মেয়েটা বন্দুক চালানো অভ্যাস করছে দেখে মহাত্মা গান্ধী একবার অহিংসার আদর্শ বুঝিয়ে নিরস্ত্র করতে গেলে রাজামনি উত্তর এলো ‘আমরা লুটেরা,ডাকাতদের গুলি করে মারি। তাই নয় কি মহাত্মা? আর ব্রিটিশরা তো আমাদের দেশকে লুঠ করছে শোষন করছে, তাই আমি বড় হয়ে একজন কে মারবোই মারবো’-গান্ধী নিরুত্তর হয়ে যান।
ঐতিহাসিক তথ্যে জানা গেছে, রেঙ্গুনে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু আজাদ হিন্দ ফৌজের জন্য যখন তহবিল গড়ছেন তখন নিজের সমস্ত গয়না দিয়ে দিয়েছিলো রাজামনি। নেতাজি ফিরিয়ে দিতে চাইলেন। কিছুতেই ফেরৎ নিলেন না।দেশের মুক্তির থেকে বড় কিছুই হতে পারেনা।
আইএনএ’র গুপ্তচর হয়ে কাজ করার সময় ব্রিটিশ পুলিশের কব্জায় থাকা এক সাথী কে উদ্ধার করতে গিয়ে পায়ে গুলির আঘাত লাগে রাজামনির। তবুও লড়াই করে বাঁচান সাথীকে। জ্ঞান আর দৃঢ়তা দেখে স্বয়ং নেতাজি ‘সরস্বতী’ নাম দিয়েছিলেন তাকে।
তথ্যঋণ: ড. জয়ন্ত চৌধুরী, শতদ্রু শোভন ঘোষ, অমৃত দে