ফাইল ছবি
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের শাহজাহান রোডের এক বাসায় মা ও মেয়েকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়েছে। নিহতরা হলেন– গৃহিণী লায়লা আফরোজ (৪৮) ও তাঁর মেয়ে নাফিসা নাওয়াল বিনতে আজিজ (১৫)। সোমবার সকালে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ বলছে, ওই বাসায় সম্প্রতি এক তরুণী গৃহকর্মী কাজে যোগ দেয়। সোমবার সকালে তাকে বোরকা পরে ঢুকতে এবং পৌনে দুই ঘণ্টা পর নাফিসার স্কুলের পোশাক ও মুখে মাস্ক পরে বের হতে দেখা যায়। এ কারণে তাকে সন্দেহ করছেন তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা।
পুলিশ ও মর্গ সূত্রে জানা যায়, লায়লার শরীরে প্রায় ৩০টি, আর তার মেয়ের শরীরে ছয়টি ছুরিকাঘাতের চিহ্ন ছিল। মূলত তাদের গলা ও কাঁধে ছুরিকাঘাত করা হয়েছে।
পুলিশ জানায়, নাফিসা মোহাম্মদপুরের প্রিপারেটরি স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী ছিল। তার বাবা এম জেড আজিজুল ইসলাম উত্তরার সানবিমস স্কুলের পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষক।
ভবনের একাধিক সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, আজিজুল ইসলাম সকাল ৭টার দিকে স্কুলের উদ্দেশে বের হয়ে যান। এরপর ৭টা ৫১ মিনিটে বোরকা পরে ওই বাসায় ঢোকে গৃহকর্মী আয়েশা। সকাল ৯টা ৩৬ মিনিটে সে বাসা থেকে বেরিয়ে যায়। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আজিজুল ইসলাম বাসায় ফিরে স্ত্রী ও মেয়ের রক্তাক্ত নিথর দেহ দেখতে পান।
পুলিশের একটি সূত্র বলছে, মাকে হত্যার দৃশ্য দেখে নাফিসা সম্ভবত ড্রয়িংরুমে রাখা ইন্টারকম থেকে নিরাপত্তাকর্মী বা কাউকে ফোন দেওয়ার চেষ্টা করে। তবে সেই চেষ্টা সফল হয়নি। সেখানেই তাকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। ওই সময় ধস্তাধস্তিতে ইন্টারকমের লাইন খুলে যায়। বাসায় তল্লাশি করে বাথরুম থেকে একটি সুইচ গিয়ার চাকু ও একটি ফল কাটা ছুরি পাওয়া যায়। ধারণা করা হচ্ছে, ওই ছুরি দুটি দিয়েই মা-মেয়েকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় ওই বাসার দারোয়ানকে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
নাফিসার বাবা আজিজুল ইসলাম গণমাধ্যমকে জানান, তাঁর বাসায় একজন গৃহকর্মী প্রয়োজন ছিল। সাধারণত বাসার গেটে অনেকেই কাজের সন্ধানে আসে। চার দিন আগে একটি মেয়ে আসে। বোরকা পরা মেয়েটি বাসার দারোয়ানের কাছে কাজের খোঁজ করলে তিনি বাসায় পাঠিয়ে দেন। এরপর লায়লা ও নাফিসা তাঁর সঙ্গে কথা বলে কাজে রেখে দেন। পরে তিনি স্ত্রীর কাছে জানতে পারেন, মেয়েটির নাম আয়েশা। বয়স আনুমানিক ২০ বছর। গ্রামের বাড়ি রংপুর। মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পে চাচা-চাচির সঙ্গে থাকে। বাবা-মা আগুনে পুড়ে মারা গেছে। তার শরীরেও আগুনে পোড়ার ক্ষত রয়েছে। চার দিন আগে কাজ শুরুর পর মেয়েটি প্রথম দুদিন সময়মতো এসেছে। রোববার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে এসেছিল। তবে গতকাল কখন এসেছে, সেটি তিনি জানেন না।
আজিজুল ইসলাম জানান, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বাসায় ফিরে দরজার তালা খুলে ভেতর ঢুকে প্রথমে মেয়েকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। পরে রান্নাঘরে গিয়ে দেখেন, রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছেন তাঁর স্ত্রী।
সরেজমিন ওই ভবনে গিয়ে দেখা যায়, বহুতল ভবনের ওই ফ্ল্যাটের প্রবেশমুখ থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্থানে রক্তের দাগ। বাসার আলমারিসহ জিনিসপত্র তছনছ করা। নগদ টাকা বা স্বর্ণালঙ্কার খোয়া গেছে কিনা, তদন্ত করে দেখছে পুলিশ। তবে কিছু মূল্যবান জিনিস বাসা থেকে নেওয়া হয়েছে বলে ধারণা তাদের। এর মধ্যে লায়লার মোবাইল ফোন রয়েছে, যেটি পরে বন্ধ করে দেওয়া হয়। বাসায় ধস্তাধস্তির আলামত এবং মেঝে ও দেয়ালে রক্তের দাগ রয়েছে।
ভবনটির নিরাপত্তাকর্মী সাংবাদিকদের জানান, বোরকা পরা এক নারী সকালে এসে লায়লা আফরোজের বাসায় যেতে চায়। ইন্টারকমে ফোন দেওয়ার পর তাকে বাসায় পাঠাতে বলেন লায়লা। পরে সাদা রঙের স্কুল ড্রেস পরা এক নারী পিঠে একটি ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে যায়। সন্দেহবশত তাকে ডাক দিলে সে ওই বাসার লোক বলে পরিচয় দেয় এবং রিকশা নিয়ে চলে যায়।
ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার ইবনে মিজান বলেন, লাশ দুটি সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়। দুজনের শরীরের একাধিক স্থানে ছুরিকাঘাতের চিহ্ন রয়েছে। সিসি ক্যামেরা ফুটেজে একজনই দেখেছি। পরে দেখব আশপাশে আরও কেউ ছিল কিনা।




