
ছবি: সংগৃহীত
রাজশাহীতে ‘বিক্ষুব্ধ জনতা’ একটি খানকা শরিফে ভাঙচুর করেছেন। শুক্রবার জুমার নামাজের পর দেড় শতাধিক মুসল্লি মসজিদ থেকে বেরিয়ে খানকা শরিফে যান এবং সেটি ভাঙচুর করেন। রাজশাহীর পবা উপজেলার বড়গাছি ইউনিয়নের পানিশাইল চন্দ্রপুকুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে
খানকা শরিফটির নাম ‘হক বাবা গাউছুল আজম মাইজ ভান্ডারী গাউছিয়া পাক দরবার শরিফ’। এলাকার বাসিন্দা আজিজুর রহমান ভান্ডারী প্রায় ১৫ বছর আগে বাড়ির পাশে নিজের জায়গাতেই এই খানকা শরিফ করেন। তিনি তার ভক্তদের কাছে ‘পীর’ হিসেবে পরিচিত।
এ খানকায় প্রতিবছর ঈদে মিল্লাদুন্নবী (সা.) পালিত হয়। এবার বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার পর্যন্ত তিন দিনের আয়োজন ছিল। সেখানে নারী শিল্পীরা আসছিলেন। ভান্ডারী ও মুর্শিদী গান হচ্ছিল। তা নিয়ে আগে থেকেই উত্তেজনা ছিল। শুক্রবার জুমার নামাজের পর হামলার শঙ্কায় দুই গাড়ি পুলিশ নিয়ে ছিলেন পবা থানার ওসি মনিরুল ইসলাম। তবে হামলার সময় পুলিশ ছিল দর্শকের ভূমিকায়। উত্তেজিত জনতার কাউকে বাধা দেওয়া সম্ভব হয়নি।
হামলার একটি ভিডিওতে দেখা যায়, প্রায় দেড় শতাধিক মুসল্লি খানকা শরিফে আক্রমণ করেছেন। তারা টিন দিয়ে ঘেরা ওই খানকায় মুহুর্মুহু আঘাত করছেন। দূর থেকেই এর শব্দ পাওয়া যাচ্ছে।
এই হামলার সময় বাড়ি থেকে বের হননি খানকা শরিফের ‘পীর’ আজিজুর রহমান ভান্ডারী। তিনি বলেন, ‘কয়েকদিন ধরেই এলাকার কিছু লোক আমাদের অনুষ্ঠানে বাধা দিচ্ছিল। অনুষ্ঠান বন্ধ করতে গত রাতে তারা পবা থানায় গিয়েছিল। পুলিশের সঙ্গে কী আলাপ হয়েছে জানি না। জুমার নামাজের পর তারা একত্রিত হয়ে খানকা শরিফে হামলা চালায়। ভক্তরা আমাকে বাড়ি থেকে বের হতে দেয়নি। তাই তারা আমার বাড়ি লক্ষ্য করেও ইট-পাটকেল ছুড়েছে।’
তিনি দাবি করেন, স্থানীয় বিএনপি নেতা ও ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক সদস্য গোলাম মোস্তফা এতে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তার সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর কর্মীরাও ছিলেন। তারা হামলা চালাতে আসার সময় মাইকে ‘নারায়ে তাকবির, আল্লাহু আকবার’ বলে স্লোগান দিচ্ছিলেন।
জানতে চাইলে গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘আমাকে গত রাতে থানায় ডেকেছিল। সে জন্য গিয়েছিলাম। কিন্তু আজ হামলার সময় আমি ছিলাম না। পরে এসে শুনছি যে এমন ঘটনা ঘটে গেছে।’
উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আলী হোসেন বলেন, ‘গোলাম মোস্তফা বিএনপির পুরনো লোক। তিনি এমন ঘটনা ঘটিয়েছেন কি না, তা আমার জানা নেই।’আলী হোসেন বলেন, ‘খানকা ভাঙার দরকার কী? যার যেটা বিশ্বাস, সে সেটা করবে। বিএনপি হলেও কারও ছাড় নেই।’
জামায়াতে ইসলামীর পবা উপজেলার আমির আযম আলী বলেন, ‘আমাদের দলের লোকের কাজ নাই তো, তারা গেছে খানকা ভাঙতে! আমরা নিজেদের কাজই করে শেষ করতে পারছি না।’
পবা থানার ওসি মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘গত রাতে থানায় অনেক মানুষই এসেছিল খানকার বিষয়ে। আমি সবাইকে শান্ত থাকতে বলেছিলাম। তারপরও একটু উৎকণ্ঠা থাকায় পুলিশ গিয়েছিল। পুলিশ একটু দূরেই ছিল। তখনই উত্তেজিত জনতা এটা করে ফেলে। মানুষ এত বেশি, অল্প কয়েকজন পুলিশের কিছু করার ছিল না। এখন কোনও অভিযোগ পাওয়া গেলে দেখা হবে।’
তবে থানায় কোনও অভিযোগ করবেন না বলে জানিয়েছেন ‘পীর’ আজিজুর রহমান ভান্ডারী। তিনি বলেন, ‘পুলিশ ছিল, ডিবি ছিল, ওসি নিজেই ছিলেন। সেখানে তারা রক্ষা করেন না, অভিযোগ করবো কার কাছে?’
তিনি বলেন, ‘আমি অভিযোগ করবো না। আমি মানবধর্ম করি, আমার কাছে সবাই আসে। সবাইকে মাফ করে দিলাম। আল্লাহও যেন তাদের মাফ করে দেন। তারা ভেঙে খুশি হয়েছে, হোক।’
এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া মুখপাত্র উপ-পুলিশ কমিশনার গাজিউর জানান, অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।