মৌলভীবাজার : চলতি মৌসুমে মৌলভীবাজার জেলায় আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। মাঠে মাঠে কৃষকদের দিগন্ত বিস্তৃত সোনালী ফসল। ফলন নিয়ে কৃষকদের মধ্যে উৎফুল্ল দেখা দিলেও বাজার মূল্য নিয়ে হতাশায় কৃষক। উৎপাদন ব্যয় থেকে কম দামে ধান বিক্রি করে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
জেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এ বছর জেলায় ৯৪ হাজার ৫৬৭ হেক্টর জমিতে উফশী ও ১ হাজার ৬৭৯ হেক্টর জমিতে স্থানীয় জাত আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। তবে আমন মৌসুমে ৯৬ হাজার ৭৪৭ হেক্টর জমিতে উফশী ও ১ হাজার ২৩৮ হেক্টর জমিতে স্থানীয় জাত সহ মোট ৯৭ হাজার ৯৮৫ হেক্টর জমিতে আবাদ করা হয়েছে। প্রাকৃতিক বিভিন্ন দূর্যোগের পরও বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে মহা ধূমধামে এখন সবক’টি স্থানে চলছে ধান কাটার মহৌৎসব। প্রায় ৩৫ শতাংশ জমির ধান কাটা হয়েছে।
এসব এলাকার কৃষকরা ব্যাপক উৎসাহ, উদ্দীপনা নিয়ে ধান কাটা শুরু করলেও সংশয়ের মধ্যে দিনযাপন করছেন। ফসল ভালো হলেও বাজার দর কম হওয়ার কারণে উৎপাদন ব্যয় বাদে লাভের মূখ দেখা যাচ্ছে না। তৃণমূল পর্যায়ের কৃষকরা ফসল উৎপাদনের জন্য জমি তৈরি ও রোপন, পরিচর্চাসহ অন্যান্য খরচাদি বহন করতে ধারদেনা করে চলেছেন। এখন ফসল বিক্রি করে সেসব ঋণ পরিশোধ করার কথা থাকলেও ধানের ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায়া চিন্তিত রয়েছেন কৃষকরা।
কৃষক তোয়াবুর রহমান, ফারুক মিয়া জানান, এবার জমিত ভালো ধান ফলেছে। তবে বাজারে ধানের দাম একেবারে কম। ধানের প্রতি মন ৪ থেকে ৫শ’ টাকা করে কিনছেন আড়ৎদাররা মহাজনীরা। কৃষক মোবাম্বির আলী, সিদ্দিকুর রহমানও হতাশ সুরে বলেন, এবার মাঠে এক মণ আমন ধান উৎপাদনে ব্যয় হয়েছে পাঁচ থেকে ছয়শ’ টাকা। আর বাজার মূল্য হচ্ছে সর্বোচ্চ ৫শ’ টাকা। এতে দেখাশুনাই এক থেকে দেড়শ’ টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে।
ধানের আড়ৎদার মো.জহির উদ্দীন ও ইউসুফ মিয়া বলেন. চিকন আমন ধান সর্বোচ্চ ৫২০ টাকা দরে আর মোটা আমন ধান আরও কমে কিনছেন। তারা গ্রাম ও ইউনিয়ন পর্যায় ধান কিনে বড় আড়ৎদার ও অটো রাইস মিলে বিক্রি করেন। ধান বাজারজাত করণের মজুরি ব্যয় ধরে মণ প্রতি ১৫ থেকে ২০ টাকা লাভ ধরে আড়ৎদার ও অটো রাইসমিলের মালিকদের কাছে বিক্রি করছেন।
শমশেরনগর খাদ্য গোদাম কর্মকর্তা সাকির আহমদ বলেন, আমাদের কাছে ধান বা চাল কিনার জন্য কোন অর্ডার আসেনি। তাই আমরা ধান, চাল কিনতে পারছি না।
কমলগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রঘুনাথ নাহা এ বছর আমনের বাম্পার ফলনের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, উপজেলায় এখন আমন ধান কাটা চলছে। বাজারে কম দামে ধান বিক্রি সম্পর্কে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বলেন, ধানের উৎপাদন ব্যয় থেকে বিক্রয় মূল্য কম আর কৃষকরা লোকসানের শিকার কিনা তা তিনি খতিয়ে দেখবেন বলেও জানান।
বহুমাত্রিক.কম