ছবি-সংগৃহীত
যশোর : বাংলাদেশের প্রথম শত্রুমুক্ত জেলা যশোর। ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর এ জেলা মুক্ত হয়। এদিনই যশোর কালেক্টরেট ও যশোর সেনানিবাস তৎকালীন যশোর জোনের জোনাল অ্যাকটিং চেয়ারম্যান এমপি গৌর চন্দ্র বালা ও নন্দ দুলাল দখল করে নেন।
১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বরের এই দিনে মহান মুক্তিযুদ্ধে অবিভক্ত বাংলার প্রথম জেলা যশোর শত্রুমুক্ত হয়। এদিন মহান মুক্তিযুদ্ধে দেশের মধ্যে প্রথম বিজয় সূচিত হয়। ইতিহাসের পাতায় নাম লিখিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা তাদের জেলাকে প্রথম শত্রুমুক্ত করে। বয়ে আনেন যশোরবাসীর জন্য বিরল এক সম্মান।
যুদ্ধবিধস্ত বাংলাদেশ নয় মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধকালীন পাকবাহিনীর পরাজয়ে এক অনাড়ম্বর আনুষ্ঠানিকতায় যশোরের কালেক্টরেট ভবনে ওড়ানো হয় স্বাধীন বাংলার পতাকা। তাই ১৯৭২ সাল থেকে প্রতিবছর যশোরবাসী বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনায় উদযাপন করে এ দিবস।
১৯৭১ সালের ৫ ডিসেম্বর যশোর ক্যান্টনমেন্টের অদূরে মনোহরপুর গ্রামে পাকসেনা বাহিনীর সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে তুমুল লড়াই হয়। প্রচুর হতাহতের এক পর্যায়ে পাকবাহিনী অস্ত্রশস্ত্র ফেলে পিছু হটে যশোর ক্যান্টনমেন্টে আশ্রয় নেয়। ঐদিনই বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনী তথা মুক্তিযোদ্ধা ও বেঙ্গল রেজিমেন্টের সাথে ইতিহাসের খাতায় মিত্রবাহিনী নামে পরিচিত ভারতীয় সেনাবাহিনী তিন দিক অবরোধ করে পাকসেনাদের পালাবার পথ খোলা রেখে পাহারা দেয়।
১৯৭১-এর ৬ ডিসেম্বর যশোর ক্যান্টনমেন্টে পাকসেনা বাহিনী তাদের অস্ত্র ও গোলাবারুদসহ সকল সরঞ্জাম রেখে পালিয়ে যায়। মূলতঃ তাদের খুলনা অভিমুখে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়া হয়। উদ্দেশ্য ছিল তাদেরকে একযোগে আত্মসমর্পনে বাধ্য করা। সে উদ্দেশ্য অনেকটা সফলও হয়।
১৯৭১ এর ৭ ডিসেম্বর মঙ্গলবার খুব ভোরে মুক্তিযুদ্ধকালীন ৮ নম্বর সেক্টর কমান্ডার মেজর এম এ মঞ্জুর ও মিত্র বাহিনীর নবম ডিভিশন কমান্ডার মেজর জেনারেল দলবীর সিংহ যশোর ক্যান্টনমেন্টে প্রবেশ করেন। সে সময় তারা দেখেন সব কিছু ঠিকঠাক থাকলেও পাকবাহিনী রাতের আঁধারে পালিয়েছে।
যশোর ক্যান্টনমেন্ট শত্রুমুক্ত হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ে চারিদিকে। বিজয় উল্লাসে মেতে ওঠে যশোরসহ স্বাধীনতা ও মুক্তিকামী বীর বাঙালী। তৎকালীন যশোর ও ফরিদপুরের জোনাল অ্যাকটিং চেয়ারম্যান এমপি গৌর চন্দ্র বালা ও নন্দ দুলালের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা দলে দলে প্রবেশ করেন যশোর কালেক্টরেট ভবনে।
যশোর শত্রুমুক্ত হয়। কিন্তু সে সময় যশোরে কোন প্রশাসনিক কর্মকর্তা ছিলেন না। সে কারণে মুক্তিযোদ্ধারাই এলাকার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সকল দায়িত্ব পালন করতেন। প্রশাসনে কোন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা না পাওয়া যাওয়ায় তৎকালীন প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্টেট শেখ আব্দুল্লাহকে বাড়ি থেকে ডেকে এনে ডেপুটি কালেক্টরেটের দায়িত্ব দেয়া হয়। তবে এর আগেই যশোর জেলার মুজিব বাহিনীর কমান্ডার আলী হোসেন মনি ও সহকমান্ডার রবিউল আলম একদল সশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধার সম্মান প্রদর্শনের মাধ্যমে কালেক্টরেট ভবনে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করেন।
৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই দু’মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের নেতৃত্বেই যশোরের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণসহ প্রশাসনকে পরিচালনা করতেন। যা স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে আর এক অধ্যায়।
ঐতিহাসিক যশোর মুক্ত দিবস উদযাপন উপলক্ষে জেলা প্রশাসন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ দিন ব্যাপী কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
বহুমাত্রিক.কম