Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ১২ ১৪৩১, শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪

সিমেন্ট চাহিদার ১০ শতাংশই যোগান দেয় লাফার্জ-সুরমা

চান মিয়া, ছাতক প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ০১:৪১, ১৯ নভেম্বর ২০১৬

আপডেট: ০০:০০, ৩১ ডিসেম্বর ১৯৯৯

প্রিন্ট:

সিমেন্ট চাহিদার ১০ শতাংশই যোগান দেয় লাফার্জ-সুরমা

ছবি: বহুমাত্রিক.কম

সুনামগঞ্জ : সুনামগঞ্জের ছাতকে প্রতিষ্ঠিত ফ্রান্সভিত্তিক এশিয়ার বৃহত্তম সিমেন্ট উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান লাফার্জ-সুরমা সিমেন্ট লিমিটেড গত ২০০৬ সালের সেপ্টেম্বর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে উৎপাদন শুরু করেছে।

প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন এ কারখানায় প্রতিবছর ১ দশমিক ৫ মিলিয়ন মেট্রিক টন ক্লিংকার এবং সিমেন্ট উৎপন্ন হচ্ছে। যা দেশের মোট সিমেন্ট চাহিদার ১০ শতাংশেরও বেশি বলে জানা গেছে।

ভারতের মেঘালয় রাজ্যের কুমরা এলাকায় প্রায় ২শ’ একর ভূমিতে লাফার্জের রয়েছে চুনাপাথর খনি, ক্রাসিং প্যান্ট সহ পূর্নাঙ্গ একটি মাইনিং প্রজেক্ট। ছাতকস্থ লাফার্জ-সুরমা সিমেন্ট লিমিটেডের মূল স্থাপনার সাথে ভারতের মাইনিং প্রজেক্টের যোগসূত্র ঘটানো হয়েছে অত্যাধুনিক বেল্ট কনভেয়ারের মাধ্যমে।

জানা যায়, ১৯৯৪ সালে ছাতকের নোয়ারাই এলাকায় লাফার্জ-সুরমা সিমেন্ট লিমিটেডের স্থাপনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। এতে নোয়ারাইও ঠেঙ্গারগাঁও এলাকায় কারখানার মূল স্থাপনা তৈরীতে ৮০ একর ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়।

ইসলাম গ্রুপ নামের একটি প্রতিষ্ঠান এখানে সিমেন্ট কারখানা স্থাপনের উদ্যোগ নিয়ে প্রাথমিকভাবে কার্যক্রম শুরু করলেও পরবর্তীতে ফ্রান্স ভিত্তিক প্রতিষ্টান লাফার্জের কাছে এটি হস্তান্তর করে।

পরে ইসলাম গ্রুপ লাফার্জের কাছে প্রতিষ্টানের নামের সাথে এদেশীয় ও ঐতিহ্যবাহী সুরমা নদীর ‘সুরমা’ শব্দটি সংযুক্ত করার প্রস্তাব করলে এপি লাফার্জ-সুরমা সিমেন্ট লিমিটেডের নামে অভিহিত হয়। এরপর লাফার্জের ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু হয়।

দেশের অভ্যন্তরে মূল স্থাপনাসহ লাফার্জের অধিগ্রহণকৃত ভূমি রয়েছে ১৮৭.৭৬৮ একর। এযাবত ভূমি অধিগ্রহণে ক্ষতিগ্রস্থ ভূমি মালিকদের ক্ষতিপূরণ হিসেবে প্রায় ৪ কোটি টাকার বেশি প্রদান করা হয়। ভারতের কুমরা এলাকার খনি থেকে ক্রাসিং করে চুনাপাথরচূর্ণ কারখানার ছাতকস্থ সিমেন্ট উৎপাদন প্যান্টে নিয়ে আসার লক্ষ্যে ১৭ কিলোমিটার দীর্ঘ ছাতক-কুমরা বেল্ট কনভেয়ার স্থাপন করা হয়েছে।

ভূমি অধিগ্রহণের পর ১৯৯৮ সালে ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে নোয়ারাই এলাকায় কারখানার মূল স্থাপনা নির্মাণের ৮০ একর ভূমি বালুও মাঠি ভরাট সম্পন্ন করলে গত ২০০৪ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া আনুষ্টানিকভাবে কারখানার নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করেন।

ভারতের এলএন্ডটি নামের একটি নির্মাতা প্রতিষ্টান এটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করলে গত ২০০৬ সালের জুন মাস থেকে কারখানার বিভিন্ন বিভাগের টেষ্টরান শুরু করা হয়। দু’মাস টেষ্টরান শেষে ২০০৬ সালের ২৩ আগষ্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া আবারও কারখানার উৎপাদন কার্যক্রমের শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন।

একই সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে কারখানায় পুরোদমে ক্লিংকারও সিমেন্ট উৎপাদন শুর হয়। ২০০৭ সালের এপ্রিল মাসে শব্দ দুষণ ও পরিবেশ বিপর্যয়ের অজুহাতে ভারতের রাজ্য সরকার কুমরা খনি থেকে চুনাপাথর আহরন বন্ধ ঘোষণা করে। ফলে কাঁচামালের অভাবে কারখানাটি বন্ধ হয়ে পড়ে।

ভারতের কুমরা এলাকার স্থানীয় বাসিন্দারা বনবিভাগে ডিনামাইট বিস্ফোরনে খনি থেকে চুনাপাথর আহরণের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলে সেদেশের পরিবেশ মন্ত্রণালয় পাথর আহরণে নিষেধাজ্ঞা জারি করে।

এ নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে লাফার্জ-সুরমা সিমেন্ট লিমিটেড ভারতের হাইকোর্ট বিভাগে একটি রিট পিটিশন দায়ের করে। এতে ২০০৭ সালের ২৪ নভেম্বর হাইকোর্ট থেকে এনিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের রায় ঘোষণা করলে দীর্ঘ ৮ মাস বন্ধ থাকার পর পূনরায় এটিতে উৎপাদন শুরু হয়।

জানা গেছে, নতুন বিএমআরই স্থাপনের মাধ্যমে কারখানার বার্ষিক উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা দ্বিগুণ করার উদ্যোগ রয়েছে কর্তৃপক্ষের। একটি মাত্র বিএমআরই স্থাপন করলে বার্ষিক ১২ লাখ মেট্রিক টন থেকে বৃদ্ধি পেয়ে কারখানটি ২৪ লাখ মেট্রিক টন সিমেন্ট উৎপাদন করতে পারবে।

তবে সিমেন্ট উৎপাদনের পর্যাপ্ত মাটি সংগ্রহের ক্ষেত্রে কারখানাটি এখন চরম বিপর্যয়ের মূখে পড়েছে। ছাতক সিমেন্ট কারখানা তাদের নিজস্ব টিলা থেকে মাঠি সংগ্রহ করলেও লাফার্জকে মাঠি সংগ্রহ করতে হচ্ছে স্থানীয় কৃষকদের কৃষি জমি থেকে।

এছাড়া বার্ষিক দেড়লক্ষাধিক মেট্রিক টন উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন ছাতক সিমেন্ট কারখানায় স্থায়ী-অস্থায়ী জনবল রয়েছে প্রায় সহস্রাধিক। কিন্তু লাফার্জ মাত্র আড়াইশ’ জনবল দিয়ে বছরে বার্ষিক ১ দশমিক ৫ মিলিয়ন মেট্রিক টন ক্লিংকার এবং সিমেন্ট উৎপাদন করছে।

তবে লাফার্জের চেয়ে তুলনামূলক ছাতক সিমেন্ট কারখানায় উৎপাদিত সিমেন্টের গুণগতমান অনেক বেশী বলে জানা গেছে। কারখানার একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, নির্মাণ শিল্পের চাহিদা পূরনে সুপারক্রিট সিমেন্ট বর্তমানে দেশের নির্মাণ খাতের মোট চাহিদার প্রায় ১০শ তাংশ পূরণ করছে।

ছাতকে অবস্থিত লাফার্জ-সুরমা সিমেন্ট লিমিটেড সম্পূর্ণ ইন্টিগ্রেটেড ড্রাই প্রসেসে উৎপন্ন এ সিমেন্ট ইতোমধ্যেই নির্মাতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন কোম্পানীর কর্তাব্যক্তিরা সরেজমিন কারখানায় এসে উৎপাদন প্রক্রিয়াও সিমেন্টের মাননিয়ন্ত্রণ পদ্ধতিদেখে সন্তেুাষ প্রকাশ করেছেন বলে জানান লাফার্জ কর্তৃপক্ষ।

নির্মাণ শিল্পের সব চাহিদার কথা বিবেচনা করে সুপারক্রিট সিমেন্ট উৎপাদনের প্রতিটি ধাঁপে ব্যবহৃত হচ্ছে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতিসহ উন্নত প্রযুক্তি। কনভেয়ার বেল্টের মাধ্যমে প্রতি ঘন্টায় প্রায় ৮শ’ মেট্রিক টন পাথর আসছে। আর এ হারে আরো ৫০বছর নিজস্ব খনি থেকে চুনাপাথর সংগ্রহ করা যাবে বলে জানান কর্মকর্তারা।

লাফার্জ-সুরমা সিমেন্ট প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি হিসেবে অনুমোদন পায় ১৯৯৭সালের ১১ডিসেম্বর। অনুমোদন লাভের পর ২০০২ সালে শুরু হয় কারখানা নির্মাণের কাজ এবং সিমেন্ট উৎপাদন শুরু হয় ২০০৬ সালে। বর্তমানে এ প্রতিষ্ঠানের সাথে জীবন-জীবিকার সন্ধানে রয়েছেন হাজার হাজার শ্রমিক-কর্মকর্তা-কর্মচারিসহ অন্যান্য লোকজন।

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer