ছবি-সংগৃহীত
ঢাকা : ২৬ নভেম্বর (২০১৬) শনিবার দিবাগত রাত আনুমানিক ৩টা। রাজধানীর আর্মি স্টেডিয়ামে বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসবের তৃতীয় রাতের শেষ পরিবেশনা ওস্তাদ রাশিদ খানের খেয়াল।
গুণী এই শিল্পীর দরাজ কণ্ঠে খেয়াল শুনতে মিডিয়া সেন্টার থেকে মূল ভেন্যুর সামনে দিকে বসার ইচ্ছায় মাঝামাঝি গিয়ে বসলাম। সহকর্মী বহুমাত্রিক.কম এর ডেপুটি এডিটর মাহেনূর মোস্তারি আগে থেকেই সেখানে আমার জন্য একটি আসন রেখে দেন।
প্রতি বছরের মতো এবারও ওস্তাদ রাশিদ খানের খেয়াল যাতে নিবিড় মনোযোগে শুনতে পারি তাই বাড়তি আকর্ষণ ছিল। সেখানে বসার পর আমার বা পাশেই দেখতে পারি সাদা পায়াজামা-পাঞ্জাবি পরিহিত প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী মাহবুবুল হক শাকিলকে।
ওস্তাদ রাশিদ খানের পরিবেশনা শুরু হতে খানিকটা বিলম্ব হওয়ায় মাহবুবুল হক শাকিলকে বিরক্ত হতে দেখা যাচ্ছিল বা বলতে পারি তিনিও আমার মতোই অধীর হয়ে অপেক্ষা করছিলেন খেয়াল শোনার জন্য। গণমাধ্যমকর্মী হিসেবে মাহবুবুল হক শাকিলকে বহুপূর্ব থেকেই চিনি-জানি। কিন্তু ঘনিষ্টভাবে কখনো কথা বলা সুযোগ হয়নি।
তুখোঁড় রাজনৈতিক কর্মী, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী বা একজন তরুণ কবি হিসেবে ওনার বহুমূখি প্রতিভার মুগ্ধ ছিলাম আমি। তাই খুব কাছে পেয়ে কথা বলার ইচ্ছা জাগে। ওস্তাদ রাশিদ খানের পরিবেশনার শুরুর পর থেকেই সমঝদার শ্রোতার পরিচয় মেলে ধরেন শাকিল। পরিবেশনার চরম মুহুর্তগুলোতে বেশ উৎফুল্ল ছিলেন তিনি। ক্ষণে ক্ষণেই জোড় করতালি দিয়ে তার জানান দিচ্ছিলেন।
এসময় তাঁকে আমি বলি ‘একজন কবির পাশে বসে এমন সংগীতায়োজন উপভোগ করতে পেরে আমি গর্বিত’। আমার এই প্রতিক্রিয়ায় তিনি শক্তহাতে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন। ্এরপর বেশ অনেকটা সময় ধরে আমরা কথা বলি। আমার একটি ভিজিটিং কার্ড উনার হাতে তুলে দিই। তিনি যত্নের সাথে তা মানিব্যাগে রাখেন। সাথে কার্ড না থাকায় তিনি একটি কাগজে লিখে দেন উনার সেল নম্বর ও ইমেইল আইডি।
২৬ নভেম্বর দিবাগত রাতে একটি কাগজে এভাবে নিজের সেল নম্বর-ইমেইল আইডি লিখে দেন মাহবুবুল হক শাকিল
সদালাপী মাহবুবুল হক শাকিল বলেন পেশাগত সহযোগিতার পাশাপাশি বহুমাত্রিক.কম-এ ওনার লেখা গল্প-কবিতা পাঠাবেন। তাঁর এই স্বপ্রণোদিত আন্তরিক আশ্বাস মুগ্ধ করে আমাকে।
মঙ্গলবার দুপুরে হঠাৎ-ই ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাসে চোখ আটকে গেল। সাংবাদিক আদিত্য আরাফাতের স্ট্যাটাস ‘‘এইমাত্র বার্তাকক্ষে এলো, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী মাহবুবুল হক শাকিল মারা গেছেন...’’
অনেকটাই থমকে গেলাম। আর এই অকাল প্রয়াণ কোনো ভাবেই যেন বিশ্বাস হচ্ছিল না। ক্ষণকাল পরেই জানা গেল, মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টায় রাজধানীর গুলশান-২ এর হোটেল সামদাদো থেকে উদ্ধার করা হয়েছে মাহবুবুল হক শাকিলের নিথর দেহ।
জানা গেছে, এই হোটেলটিতে তিনি নিয়মিতই যাতায়াত করতেন। সামদাদো হোটেল কর্তৃপক্ষ জানান, সোমবার রাতে মাহবুবুল হক শাকিল ওই হোটেলের একটি কক্ষে ছিলেন। মঙ্গলবার সকাল থেকে কোনো সাড়া শব্দ না পাওয়ায় দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে হোটেল কর্মকর্তারা কক্ষটিতে গিয়ে শাকিলের মরদেহ দেখতে পান।
মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৪৭ বছর। তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০১৪ সাল থেকে অতিরিক্ত সচিব মর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারীর পদে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন তিনি।
বহুদিনে চেনা-জানা না থাকলেও পরিচয়ের মাত্র দশ দিনের মাথায় এভাবে একজন আলোকিত মানুষকে হারাতে হল। তাঁর এই অকাল প্রয়াণ ব্যক্তিগতভাবে, সর্বোপরি দেশের অনেক বড় ক্ষতি হয়ে গেল। অনন্তলোকে পাড়ি জমানো এই মানুষটির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা।
লেখক: প্রধান সম্পাদক, বহুমাত্রিক.কম
বহুমাত্রিক.কম