ছবি : বহুমাত্রিক.কম
ঝালকাঠি : এখন ইলিশের ভরা মৌসুমেও ঝালকাঠির বিশখালি ও সুগন্ধা নদীতে জেলেদের জালে মিলছে না ইলিশ। দিনরাত নদীতে জাল ফেলে রেখেও মাছ না পাওয়ায় ঋনের বোঝা বাড়ছে। পেশা হারিয়ে দিনদিন নিঃস্ব হয়ে পড়ছেন তাই অনেক জেলে।
এক সময়ের শিশু-কিশোর আর নর-নারীর মুখরিত জেলেপাড়ায় এখন হতাশা। কয়েকটি জেলে সম্প্রদায় এখনো পূর্বপুরুষের পেশা আঁকড়ে জীবনযুদ্ধে কোনোমতে টিকে আছে। এনজিও, দাতা সংস্থাসহ সরকারি সংস্থার যেন জেলেদের এই দুর্দিনে কিছু করার নেই।
রাজাপুর উপজেলার চল্লিশ কাহনিয়া এলাকার জেলে জামাল হোসেন জানান, ইলিশ মৌসুম কেবল শুরু হয়েছে। নদীতে গেলে ২/৩ দিন পর ইলিশ পাওয়া যায়। তাও খুব কম এবং ছোট আকারের। যাতে অর্ধাহার ও অনাহারে দিন অতিবাহিত করতে হচ্ছে।
জেলে মোতালেব হোসেন (৭০) বলেন, আমার কোন ছেলে নেই, ৪ টি মেয়ে আছে। ৩ মেয়েকে বিয়ে দিতে পেরেছি। ছোট মেয়েটা প্রাইমারী স্কুলে পড়ে। সকালে পানিভাত মরিচ পোড়া দিয়ে খেয়ে যায়। দুপুরে আলু রান্না করা আর রাতে আলু ভর্তা দিয়ে ভাত দিতে হয়। পুস্টির অভাবে মেয়েটার স্বাস্থ্যের অবস্থাও ভালো না। অন্য মেয়েরা জামাই নিয়েও আসে না। কারণ তারা বেড়াতে আসলে ভালোভাবে আপ্যায়ন করতে পারি না।
জেলে সোহেল হাওলাদার (২০) বলেন, আগে বাবার সাথে গাঙে (নদীতে) ইলিশ ধরতে যাইতাম। গত বছর বাবা মারা গেছে। নদীতে ইলিশ নেই। তাই এখন আর জাল নিয়ে নদীতে ইলিশ ধরতে যাই না। বর্তমানে বড়শি দিয়ে দেশি বিভিন্ন জাতের মাছ ধরি। তা দিয়ে সংসার চালাতে হয়।
জেলে মোঃ বাদশা মিয়া (৩০) জানান, জেলেরা মৎস্য ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে দাদন নিয়ে নৌকা ও মেরামত বা ক্রয় করতে হয়। এখন ২/৩ দিন পর ২/১ টি ইলিশ ধরা পড়লে তা মৎস্য ব্যবসায়ীদের কাছে দিয়ে আসতে হয়। সবসময় জীবন-মরণের সাথে যুদ্ধ করেই সংসার চালাতে হয়।
জেলে যুবক বিপুল মালো (২০) বলেন, গাঙে মাছ নাই। আমরা সরকারি সাহায্যও পাই না। তাই পিকআপ ভ্যান চালিয়ে সংসার চালাই। আর ইলিশের সময় গাঙে (নদীতে) থাকি।’
জেলেপাড়ার বয়োজেষ্ঠ্য নবদ্বীপ জেলে। ৬৫ বছর বয়সের তুলনায় তিনি যেন আরো বৃদ্ধ। নদীতে মাছ ধরেই শৈশব থেকে বার্ধক্যে পৌঁছেছেন। বছরের পর বছর নদীতে রোদ-বৃষ্টি আর শীত শরীরের ওপর দিয়ে গেছে। তাই নানা রোগ-শোকে এখন ক্লান্ত তিনি জানান, এক সময় ঝালকাঠি শহরের চাঁদকাঠি আর গুরুধাম এলাকা জেলেরাই জমিয়ে রেখেছিল। তখন নদীতে মাছের টান (অভাব) ছিল না। এখন আর আগের মতো মাছ নেই। তাই অভাব দারিদ্র লেগেই আছে। সরকারি সাহায্য সহযোগিতা কিছুই পান না বলে তারও অভিযোগ।
আরেক জেলে যুবক বরুণ মালো (৩২) অভিযোগ করে বলেন, ইলিশ ধরার নিষেদাজ্ঞার মৌসূমে সরকার চাল দেয়। তা আমরা পাই না। যাদের দেয় তাতে তাদেরও কিছু হয় না।’
ঝালকাঠি জেলা মৎস কর্মকর্তা বাবুল চন্দ্র ওঝা জানান, জেলায় মোট জেলের সংখ্যা ৫ হাজার ৩শ’ ৫ জন। আসলে লোকসংখ্যা ও জেলের সংখ্যা দুটোই বেড়েছে। আর ঝালকাঠি একটি পকেট জেলা। ভোলা, পটুয়াখালি, বরগুনা থেকে ছেঁকে ছেঁকে ইলিশ ধরা পড়ে। বাকি কিছু অংশ সুগন্ধা ও বিশখালিতে আসে। তবুও ইলিশ সংরক্ষণে সরকার গত কয়েকবছর ধরে যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে আসছে তাতে নদীতে ইলিশ বেড়েছে। ঝালকাঠিও তার ব্যতিক্রম নয়।’
অন্যদিকে, সাধ্যমতো ১০১২ জন জেলেকে সরকারি প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে বলে জানান এ কর্মকর্তা।
বহুমাত্রিক.কম