ছবি-বহুমাত্রিক.কম
সিরাজগঞ্জ : সমাজে শারিরীক অক্ষমতার জন্য অন্যের দয়া-দাক্ষিণ্যে ভর করা অসংখ্য মানুষ থাকলেও আল মাহমুদ তেমন নন। মানুষ হিসেবে মর্যাদার সঙ্গে বেঁচে থাকার লড়াইয়ে শামিল সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার পচিশোর্ধ্ব এই যুবক।
জন্মগতভাবে শারিরীক বৈকল্যের কারণে ভারী কোনো কাজ করার সক্ষমতা না থাকলেও স্থানীয় একটি এনজিও’র সহযোগিতায় একটি মুদি দোকান দিয়েছেন আল মাহমুদ। কিন্তু অসুস্থতার জন্য এই গরমে খুবই কষ্টে দিন যাচ্ছে তার। বিদ্যুতহীন তার দোকানে একটি ফ্যান বা একটু আলো জ্বালাতে একটি ব্যাটারির জন্য সমাজের হৃদয়বানদের সহায়তা চেয়েছেন আল মাহমুদ।
‘আমার জন্য একটা ১৫শ’ বা দুই হাজার টাকার মধ্যে অটো ভ্যানগাড়ীর পুরাতন একটি ব্যাটারি ব্যবস্থা করে দেন ভাই। দিন রাত অসহ্য গরম আর টিকতে পারি না। একটা ব্যাটারির ব্যবস্থা হলে ছোট পাখা লাগিয়ে আমার দূর্বল-ক্লান্ত শরীরটা একটুখানি জিড়িয়ে নিতাম আর দিনের শেষে একটা বাল্ব জ্বালিয়ে আলোর ব্যবস্থা করতাম’-আকুতি জানান সিরাজগঞ্জের তাড়াশে বিনসাড়ার এই যুবক।
স্থানীয় এনজিও ‘পরিবর্তন’র সহায়তায় ক্ষুদ্র পরিসরে ব্যবসা শুরু করতে পারলেও ব্যাটারি কিনে ফ্যান-লাইট জ্বালাতে না পারায় খুবই কষ্টে দিনযাপন করছেন এই শারিরীকভাবে অক্ষম আল মাহমুদ।
সুস্থ হওয়ার আশা না থাকলেও কাজ করে বেঁচে থাকার চেষ্টা করতে চান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘দরিদ্র বাবা-মায়ের একই পরিবারে আমরা চার ভাইবোন প্রতিবন্ধী। খেয়ে না খেয়ে দিনাতিপাত হচ্ছে তবুও আমরা কখনও বৃত্তির চিন্তা করি নাই। ইতোমধ্যে আমার এক ভাই অবহেলায় দীর্ঘদিন বিছানায় পড়ে মারা গেছে। যতই দিন যাচ্ছে প্রতিবন্ধিতার কারণে আমার শরীরও কাজ করার ক্ষমতা হারাচ্ছে। ঢাকাস্থ প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান সিডিডি তাদের ভ্রাম্যমাণ বাস ক্যাম্পে সেবা নেয়ার জন্য গেলে তারা বলেছে, আমার শরীরের মাংসপেশীও শক্ত হতে শুরু করেছে। বেশি দিনতো বাঁচব না। তারপরেও কিছু করে বেঁচে থাকার চেষ্টা করছি।’
সিরাজগঞ্জ জেলাধীন তাড়াশ উপজেলার বারুহাস ইউনিয়নের বিনসাড়া গ্রামের আবুল কাসেমের ছেলে আল মাহমুদ বর্তমানে বিনসাড়া সরকারি রাস্তার পাশে খাস জায়গায় বাস করছেন। তিনভাই দুই বোনের মধ্যে আলমাহমুদ, মনিরুল, কাজলী গুরুতর শারীরিক প্রতিবন্ধিতার শিকার হয়। অপর একজন আবদুল আহাদ আংশিক বুদ্ধি প্রতিবন্ধী।
সরেজমিনে জানা আরও যায়, আল মাহমুদের বর্তমান দোকান ঘরটিতে স্থানীয় এক ব্যক্তি কিছুদিনের জন্য ব্যবসা করতে দিয়েছে। বছর যেতে না যেতে সারাক্ষণ দোকানঘর ছাড়তে তাগাদা দিচ্ছে। এ নিয়েও তার মাঝে দুশ্চিন্তার শেষ নাই। তবে তারপরও ভিক্ষাবৃত্তি করতে নারাজ আল মাহমুদ। প্রয়োজনে রাস্তায় বসে দোকানদারি করে হলেও বেঁচে থাকার প্রতিজ্ঞা তার।
বহুমাত্রিক.কম