Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ১২ ১৪৩১, শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪

‘বন্যার ক্ষতি গুনছি আমরা, লাভবান চেয়ারম্যান-মেম্বাররা’

নূরুল মোহাইমীন মিল্টন, নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০৩:০৫, ২৫ অক্টোবর ২০১৭

আপডেট: ০০:০০, ৩১ ডিসেম্বর ১৯৯৯

প্রিন্ট:

‘বন্যার ক্ষতি গুনছি আমরা, লাভবান চেয়ারম্যান-মেম্বাররা’

ছবি : বহুমাত্রিক.কম

মৌলভীবাজার : চৈত্র মাস থেকে শুরু করে কার্তিক পর্যন্ত বৃষ্টি, শিলা বৃষ্টি, ঝড়, বন্যা ও জলাবদ্ধতায় মৌলভীবাজারের হাওরাঞ্চল ও নিন্মাঞ্চলের বিল সমুহে বোরো ধান তলিয়ে সম্পূর্ণ বিনষ্ট হয়েছে। অসময়ে পানি এসে আউশ, আমন ও আগাম সবজি ক্ষেত বিনষ্ট হওয়ায় কৃষকের দিন কাটছে এখন অভাব, অনটন আর নানা বঞ্চনার মধ্য দিয়ে।

কৃষকদের অভিযোগ মনু-ধলাই নদীর বাঁধ মেরামত না করায় একদিকে অসময়ে বোরো ধান গেল, অকাল বন্যা, শিলাবৃষ্টি ও ঝড়ো বাতাস সহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগে বছর জুড়ে মার খেয়েছেন তিনটি ফসলি মৌসুম ও সবজি ক্ষেতের।


জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগর ইউনিয়নের কৃষক এখলাছ মিয়া, পতনঊষারের মানিক মিয়া, নসাদ মিয়া বলেন, ‘এবার সারা বছর জুড়িয়া আমরার কষ্ট আর সাধনার ফসল নষ্ট হইয়া এহন রাস্তায় নামি গেছি। বরুয়া (বোরো) গেল, আউশ গেল এখন হাইল (আমন) ও গেল। আর কয়েকদিনের মেঘে (বৃষ্টি) সবজিও গেল। এই ক্ষতি আমরা কিলা পুষাইতাম। বন্যায় আমরার ক্ষতি অইলে ত্রাণ আর সাহায্য আইলে লাভ অয় চেয়ারম্যান, মেম্বার হকলর।’

ক্ষতিগ্রস্ত পতনঊষারের কৃষক চেরাগ মিয়া, সাজিদ মিয়া, ওহাব মিয়া, মুসলিম খাঁ শমশেরনগরের সিদ্দিকুর রহমান, মোবারক আলী, মছদ্দর আলী, আলমগীর হোসেন এসব সমস্যা ও দুর্ভোগের কথা তোলে ধরে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা তৈরি করে সরকারি সহায়তা প্রদানের দাবি জানান।

অনুসন্ধানে জানা যায়, হাকালুকি হাওর এলাকায় গত তিন মাস ধরে পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। ফলে হাওর পাড়ের মানুষের দুর্বিষহ জীবন অতিবাহিত হচ্ছে। মৌলভীবাজারের কৃষি অধ্যুষিত কমলগঞ্জ ও রাজনগর উপজেলার কৃষকরা টানা দশ দফা বন্যা ও নানা দুর্যোগের শিকার হয়েছেন। ধলাই নদীর পাঁচটি স্থানে বাঁধ মেরামত না করায় দু’দিনের বর্ষণ হলেই পাহাড়ি ঢলে নদীর ভাঙ্গন কবলিত স্থান দিয়ে পানি বেরিয়ে বন্যার সৃষ্টি হয়। ফলে আগাম বন্যা আর অসময়ের বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন কৃষকরা।

কমলগঞ্জের মুন্সীবাজার, পতনঊষার ও শমশেরনগর একাংশ জুড়ে লাঘাটা নদীতে ঝোপজঙ্গল ও নদী ভরাট হওয়ায় দ্রুত পানি নিষ্কাষিত হতে পারেনি। ফলে কেওলার হাওরসহ গোটা এলাকায় সপ্তাহব্যাপী জলাবদ্ধতায় কৃষকের পাকা, আধা পাকা বোরো ফসল, আউশ, বীজতলা ও আমন ক্ষেত বিনষ্ট হয়েছে। চলতি আমন মৌসুমে অসময়ের বৃষ্টি ও বন্যায় উপজেলার প্রায় সাতশ হেক্টরের আমন ক্ষেত নিমজ্জিত ও ১০ হেক্টর জমির সবজি বিনষ্ট হয়েছে। এসব চাষাবাদের সাথে হাজারো কৃষক সম্পৃক্ত। এসব দুর্যোগে ব্যাপক ক্ষতি হলেও কৃষি বিভাগ সেই তালিকা প্রদান না করে অল্প পরিমাণে ক্ষয়ক্ষতি তোলে ধরে বলে কৃষকরা অভিযোগ করেন।

হাওর ও নদী রক্ষা আঞ্চলিক কমিটির আহ্বায়ক মো. দুরুদ আলী বলেন, চৈত্র মাস থেকে শুরু করে দফায় দফায় বন্যার কারণে কৃষকরা নানামুখী সংকটে পড়েছেন। সাধারনত চৈত্র মাসে অকাল বন্যা আর অক্টোবর মাসে অসময়ে বন্যা হয়েছে। তিনি বলেন, ধলাই, লাঘাটা নদীর বাঁধ মেরামত, খনন ও সংস্কার, কৃষকদের প্রণোদনা সহ কয়েকটি দাবিতে মে মাসে ইউএনও’র মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করেছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত নদীর বাঁধ মেরামত না হওয়ায় কৃষকরা অসময়েও মারাত্মক ক্ষতির শিকার হচ্ছেন।

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer