Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ১৩ ১৪৩১, শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪

পর্যটকদের আকর্ষণ সুন্দরবনের কটকা বন্যপ্রাণি অভয়ারণ্য

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৯:১৪, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

আপডেট: ০১:০৫, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

প্রিন্ট:

পর্যটকদের আকর্ষণ সুন্দরবনের কটকা বন্যপ্রাণি অভয়ারণ্য

ছবি: বহুমাত্রিক.কম

খুলনা : সুন্দরবনের দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে শরণখোলা রেঞ্জের অধীন সমুদ্রের তীরবর্তী এক সুন্দর পর্যটন কেন্দ্র কটকা অভয়ারণ্য। এখানে প্রায়ই দেখা মেলে সুন্দরবনের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ হয়ে থাকা রয়েল বেঙ্গল টাইগারের।

এ ছাড়া নানান জাতের পাখি, শান্ত প্রকৃতি, মনোরম চিত্রা হরিণের দল এবং বিবিধ রকমের বণ্য প্রাণির উপস্থিতির কারণে পর্যটকদের পছন্দের তালিকায় কটকা অভয়ারণ্য সব সময়ই আলাদা স্থান দখল করে আছে। কটকা অভয়ারণ্যে যেতে চাইলে আপনাকে প্রথমেই যেতে হবে সুন্দরবন অঞ্চলে।

কটকায় বেড়াতে আসার প্রধান মাধ্যম বলতে গেলে শুধু লঞ্চই। আর পর্যটকদের নিয়ে এই লঞ্চ নোঙ্গর করা হয় কটকা খালে। খালের পশ্চিম পাড়ের জেটি পেরিয়ে উপরে উঠলেই বন কার্যালয়।

এখান থেকে খানিকটা পশ্চিমে এগুলেই দেখা মিলবে ইট বাঁধানো সংক্ষিপ্ত একটি পথের। এর পরে আরেকটু সামনে গেলে সমুদ্র। সূর্যাস্ত দেখার জন্য এই স্থানটি বেশ মনোরম। কটকা বন কার্যালয়ের পেছন দিক থেকে সোজা পশ্চিমমুখী কাঠের তৈরি ট্রেইল। ট্রেইলের উত্তর পাশের মরাখালটির তলায় ভাটার সময় ম্যানগ্রোভ জাতীয় উদ্ভিদের ঘন শ্বাসমূল দেখা যায়।

এ ছাড়া একটু শান্ত থাকলে বা নিরিবিলি যেতে পারলে এখানে দেখা মেলে চিত্রা হরিণেরও। ট্রেইলের শেষ মাথায় হাতের ডানে সোজা দক্ষিণে মিনিট বিশেক হাঁটলে টাইগার টিলা। এ টিলায় প্রায়ই বাঘের পায়ের ছাপ দেখতে পাওয়া যায় বলেই টিলাটির এমনতর নামকরণ। টাইগার টিলা থেকে সামান্য পশ্চিমে বয়ার খাল।

দুই পাশে কেওড়া, গোলপাতা আর নানান পাখির কলকাকলিতে মুখর থাকে জায়গাটি। কটকার জেটির উত্তরে খালের চরজুড়ে থাকা কেওড়ার বনেও দেখা মেলে দলবদ্ধ চিত্রা হরিণ, বানর আর শূকরের। এখানেই আপনি দেখতে পাবেন সুন্দরবনের সবচেয়ে বড় পাখি হিসেবে স্বীকৃত মদনটাক পাখিকে।

আবার শীতের সময় ভাগ্য ভালো থাকলে দেখা মিলতে পারে লোনা জলের কুমিরেরও। কটকা বন কার্যালয়ের ঠিক ওপারে একটি ছোট খাড়ি চলে গেছে সোজা পূর্বদিকে। এই পথে কিছু দূর যাওয়ার পরে হাতের ডানে ছোট্ট জেটি এবং ওপরে ওয়াচ টাওয়ার। কটকার ওয়াচ টাওয়ারটি চারতলা বিশিষ্ট।

টাওয়ারের পশ্চিম পাশে ঘন জঙ্গল। পুবে আর দক্ষিণে দীর্ঘ ছন বন। মাঝে মিঠা জলের পুকুর। এখান থেকে আশপাশে তাকালে দেখা মেলে সুন্দরবনের অতি বিপন্ন প্রাণি মাস্কফিনফুট আর উদবিড়ালের দল। এ ছাড়া ওয়াচটাওয়ার থেকে খানিকটা সামনে এগুলে অপেক্ষাকৃত ছোট একটি খালের মাঝেও দেখা মেলে বিপুল সংখ্যক বণ্যপ্রাণীর। সবমিলিয়ে কটকা অভয়ারণ্য যেন প্রকৃতি আর প্রাণেরই এক অপূর্ব মেলবন্ধন।

বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বনভূমি সুন্দরবন। বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের জীববৈচিত্রময় স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম সুন্দরবন পূর্ব বনবিভাগের শরণখোলা রেঞ্জে অবস্থিত সমুদ্রের তীরবর্তী পর্যটন কেন্দ্র ‘কটকা অভয়ারণ্য’।

সুন্দরবনের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ রয়েল বেঙ্গল টাইগারের। তবে বনে বাঘের দেখা মেলা ভার। আর তার ওপর বাঘের দেখা মিললেও নিজের নিরাপত্তার বিষয়টি তো আছেই।

তবে বাঘ দেখা ও নিরাপদে থাকা- এ দুই-ই সম্ভব সুন্দরবনের চমৎকার পর্যটন কেন্দ্র কটকা অভয়ারণ্য থেকে।

এছাড়া কটকার জেটির উত্তরে খালের চরজুড়ে থাকা কেওড়ার বনেও দেখা মেলে দলবদ্ধ চিত্রা হরিণ, বানর আর শূকরের। আবার শীতের সময় দেখা মিলে যেতে পারে রোদ পোহানো লোনা জলের কুমির। কটকা বন কার্যালয়ের ঠিক ওপারে একটি ছোট খাড়ি চলে গেছে সোজা পূর্ব দিকে। এই পথে কিছু দূর যাওয়ার পরে হাতের ডানে ছোট্ট জেটি এবং ওপরে ওয়াচ টাওয়ার।

কটকার ওয়াচ টাওয়ারটি চারতলা বিশিষ্ট। ৪০ ফুট উচ্চ টাওয়ার থেকে উপভোগ করা যায় সুন্দরবনের অপার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য। একটি সুন্দর সমুদ্র সৈকত আছে এখানে। পর্যবেক্ষণ টাওয়ার হতে ফেরার সময় হেঁটে বীচের সৌন্দর্য্য উপভোগ করা যায়।

পূর্বে দীর্ঘ বন আর মাঝে মিঠা জলের পুকুর। এই পুকুরের পানি পান করেন কমর্রত কোস্টগার্ড, ফরেস্ট অফিসার ও স্থানীয় জেলেরা। এখান থেকে আশপাশে তাকালে দেখা মেলে সুন্দরবনের প্রায় বিপন্ন প্রাণিদের। এ ছাড়া ওয়াচ টাওয়ার থেকে খানিকটা সামনে এগুলে অপেক্ষাকৃত ছোট একটি খালের মাঝেও দেখা মেলে বিপুলসংখ্যক বন্যপ্রাণির। সবমিলিয়ে কটকা অভয়ারণ্য প্রাকৃতিক সৌন্দয্যের এক অপরুপ লীলাভূমি।

কটকা ওয়াচ টাওয়ারকে পিছু ফেলে সোজা উত্তরে প্রায় তিন কিলোমিটার হেঁটে গেলে জামতলা সমুদ্র সৈকত। পথে চলতে চলতে বিভিন্ন আকারের জামতলা সৈকতটির নামের সার্থকতা খুঁজে পাওয়া যায়। জামতলা সৈকতটি নির্জন এবং পরিচ্ছন্ন। বেলাভূমিজুড়ে শুধুই দেখা যায কাঁকড়াদের শিল্পকর্ম। কোথাও কোথাও দেখা যায় জোয়ারের ঢেউয়ে ধুয়ে যাওয়া গাছের শেকড়। সৈকতটি সোজা পুবে গিয়ে শেষ হয়েছে কচিখালিতে।

ঢাকা থেকে সুন্দরবন ভ্রমনে এসেছেন, সরকারী কর্মকর্তা কাজী মুরাদ হোসেন তিনি বলেন, আমাদের সুন্দরবনে দেখার অনেক কিছু রয়েছে। বিনোদনের জন্য দেশের বাআরে যাওয়ার কোন প্রয়োজন হয় না। সুন্দরবনের কটকা, করমজল, হাড়বাড়ি বিভিন্ন।লোকা ঘুরে দেখেছি। অনেক ভাল লেগেছে।

ড. গাজী মাহবুবুর রহমান বলেন, আমাদের বাড়ি খুলনায়। ছোট বেলায় সুন্দরবনে পিকনিকে এসেছি। দুবলার চরে রাশমেলায়ও গেছি। তখনকার বনের চেহারা আর এখনকার চেহারার মধ্যে অনেক পার্থক্য। নদী নালাগুলো জীর্ণ হয়ে গেছে। গাছের সেই সবুজ আভা আর নেই। আমাদের ঐতিহ্য সুন্দরবনের সম্পদ আমাদেরকেই রক্ষা করতে হবে বলে।

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer