Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ১২ ১৪৩১, শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪

নির্দিষ্ট সময়ে খুলনা-মংলা রেললাইন শেষ হওয়া নিয়ে সংশয়

শেখ হেদায়েতুল্লাহ, নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২১:৪৭, ১৯ এপ্রিল ২০১৭

আপডেট: ০১:৪৩, ২০ এপ্রিল ২০১৭

প্রিন্ট:

নির্দিষ্ট সময়ে খুলনা-মংলা রেললাইন শেষ হওয়া নিয়ে সংশয়

ছবি : বহুমাত্রিক.কম

খুলনা : খুলনা- মংলা রেল লাইন নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরুর ইতোমধ্যে কেটে গেছে ৬ বছর ৪ মাস। দীর্ঘ এই সময়ের মধ্যে প্রকল্পটির কাজ শেষ হয়েছে মাত্র ২৪ শতাংশ।

প্রকল্পের কাজ শেষ করার সময় আছে মাত্র ১ বছর ২ মাস। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ না হওয়ার সম্ভাবনার পাশাপাশি প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। আর ব্যয় বেড়ে গেলে প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয় রয়েছে।

প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্র বন্দর মংলার অর্থনৈতিক গুরুত্ব বহুগুণ বেড়ে যাবে। সেই সঙ্গে দেশ-বিদেশের ব্যবসায়ীরা খুলনা অঞ্চলে আরো বেশি বিনিয়োগে আগ্রহী হবেন। সমৃদ্ধি ঘটবে এ অঞ্চলের অর্থনীতির। ২০১০ সালের ডিসেম্বরে শুরু হওয়া প্রকল্পটির কাজ শেষ হওয়ার কথা ২০১৮ সালের জুন মাসে।

খুলনা-মংলা রেললাইন প্রকল্পের জন্য ৭৫০ একর জমির প্রয়োজন হবে। এজন্য খুলনার ৪০১ দশমিক ২৭৯০২ একর, বাগেরহাটের ২৭৫ দশমিক ০২৫৭ একর ও মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের ৭৩ দশমিক ৩৫৭ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্পের অধীনে লুপ লাইনসহ রেলওয়ে ট্র্যাকের দৈর্ঘ্য ৮৬ দশমিক ৮৭ কিলোমিটার।

এর মধ্যে ৬৪ দশমিক ৭৫ কিলোমিটার ব্রডগেজ রেলপথ নির্মাণ হবে। এর মধ্যে রূপসা নদীর ওপর স্থাপিত রূপসা সেতুর দেড় কিলোমিটার দক্ষিণে যুক্ত হবে ৫ দশমিক ১৩ কিলোমিটার রেলসেতু।

এ ছাড়া ২১টি ছোটখাট ব্রিজ ও ১১০টি কালভার্ট নির্মিত হবে। ফুলতলা থেকে মংলা পর্যন্ত ৮টি স্টেশন হবে। স্টেশনগুলোর মধ্যে রয়েছে ফুলতলা, আড়ংঘাটা, মোহাম্মদনগর, কাটাখালী, চুলকাঠি, ভাগা, দিগরাজ ও মংলা।

এ পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি হয়েছে ২৪ শতাংশ বলে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছে আগামী ২০১৮ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৮০১ কোটি ৬১ লাখ টাকা। এর মধ্যে রেল লাইনের জন্য ১ হাজার ১৪৯ কোটি ৮৯ লাখ টাকা এবং ব্রিজ নির্মাণর জন্য ১ হাজার ৭৬ কোটি ৪৫ লাখ টাকা । বাকি টাকা জমি অধিগ্রহণসহ অন্যান্য খাতে ব্যয় হবে। খুলনা-মংলা রেলপথ প্রকল্পটির কাজ ৩টি অংশে বিভক্ত করা হয়েছে। একটি রেলসেতু, অপরটি রেল লাইন এবং অন্যটি টেলিকমিউনিকেশন ও সিগন্যালিং।

বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব অর্থায়ন (জিওবি) ও ভারত সরকারের আর্থিক সহায়তায় এই রেলপথটি নির্মাণ করা হচ্ছে। এ প্রকল্পের রেল লাইন তৈরির জন্য ২০১৫ সালের ২০ অক্টোবর ভারতের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইরকনের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। এ ছাড়া ব্রিজ তৈরির জন্য ওই বছরের ২৪ আগস্ট ভারতের লারসেন অ্যান্ড টার্ব নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি হয়।

প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) জানান, খুলনা-মংলা রেল লাইন নির্মাণ প্রকল্পের জন্য ইতিমধ্যে রূপসা নদীতে রেলসেতু নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, রেল লাইন নির্মাণের জন্য মাটি ভরাটের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করার জন্য জোর চেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি।

বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ উজ্জামান বলেন, যেভাবে ঢিমেতালে প্রকল্পের কাজ চলছে তাতে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করা কঠিন হবে। প্রকল্পের মেয়াদ বেড়ে গেলে ব্যয়ও বেড়ে যায়। আর ব্যয় বেড়ে গেলে প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়।

বাগেরহাট জেলা প্রশাসক তপন কুমার বিশ্বাস বলেন, খুলনা-বাগেরহাটের ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে ক্ষতিপূরণের টাকা অর্ধেকের বেশী বিতরণ করা হয়েছে। বর্তমানে রেল লাইনের সংযোগ সড়ক ও ষ্টেশন নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহণের জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে।

খুলনা জেলা প্রশাসক মো. নাজমুল আহসান জানান, প্রকল্পটির প্রায় এক চর্তুথাংশ কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। খুলনা-মংলা রেলসেতু নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে জমি অধিগ্রহণের জন্য টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। জমির মালিকদের ক্ষতিপূরণের অর্থ প্রদানও শুরু হয়েছে। কিছু জমির মালিক মামলা করেছে আর কিছু জমির মালিক জমির প্রযোজনীয় কাগজ পত্র দিতে পারেনি যে কারণে তাদের ক্ষতিপূরণের টাকা দেয়া সম্ভব হয়নি।

খুলনা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা শেখ হারুনার রশিদ বলেন, খুলনাবাসীর আরও একটি স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে। খুলনা- মোংলা রেল লাইন স্থাপনের মধ্য দিয়ে খুলনা-বাগেরহাটবাসীর দাবির পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুত প্রকল্পটির কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে। যা অচিরেই শেষ হতে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুত এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে মোংলা বন্দরের সাথে নেপাল, ভারত ও ভুটানের সাথে খুব সহজে যোগাযোগ স্থাপন করা যাবে। মোংলা বন্দরে জাহাজে আসা পণ্য পরিবহণে সহজতর হবে। এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নতি সাধিত হবে। এক থেকে দেড়কোটি মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে লাভবান হবে। খুলনা-মংলা রেললাইনটি অদুর ভবিষ্যতে ভারতের সাথে যোগাযোগে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

রামপাল-মোংলা আসনের সংসদ সদস্য তালুকদার আব্দুল খালেক বলেন; প্রকল্পটির কাজ শুরু করতে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান বিলম্বিত করেছে। আগামী ২০১৮ সালের জুন মাসের মধ্যে কাজ শেষ করা কষ্টকর হবে। তারপরও প্রকল্পের কাজ যেহেতু শুরু হয়েছে কাজের বাস্তবায়নও হবে। তিনি বলেন, এই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে মোংলা বন্দরের গুরুত্ব অনেক বেড়ে যাবে। অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধি আসবে এতদাঞ্চলের মানুষের।

প্রসঙ্গত, ২০১০ সালের ২১ ডিসেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) খুলনা-মংলা রেল লাইন নির্মাণ প্রকল্পটি অনুমোদন করে। পরে ২০১২ সালের নভেম্বর প্রকল্পের পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ পায় ভারতের সিইজি নিপ্পন কোয়িজেভি প্রতিষ্ঠান।

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer