ছবি : বহুমাত্রিক.কম
খুলনা : খুলনা জেলায় এবার লক্ষমাত্রার চেয়ে বোরো আবাদ কিছুটা বেশিই হয়েছে। মাঠ জুড়ে সবুজ ধানের দোলা, বিকেলে কোথাও সবুজের মাঝে উঁকি দিচ্ছে রুপালী শিশির বিন্দু। বুকভরা আশা নিয়ে যখন কৃষক মাঠের ভালো ফলনের স্বপ্ন দেখছেন, তখনই সে স্বপ্ন যেন মিলিয়ে যেতে বসছে মাঠে মাঠে ইঁদুরের উপদ্রবে।
অন্য সময়ে ধানে পাক ধরলেই উঁদুরের উপদ্রব দেখা দিলেও এবার রোপনের সাথে ষাথে কাচা ধানের গাছে ইদুঁরের আক্রমণ হয়েছে। বোরো চাষীরা উদঁরের উৎপাত থেকে রেহাই পেতে ধান ক্ষেতের চারিদিকে পলিথিনের বেড়া দিয়ে ইদুর আটকানোর চেষ্টা করছে। যদিও পলিথিনের বেড়া দিয়ে ইদুঁর আটকানো কষ্টকর।
সোমবার দুপুরে ডুমুরিয়া উপজেলার গুটুদিয়া ইউনিয়নের ভেলকামারি ও টিয়াবুনিয়া মৌজায় বোরোর ক্ষেতে গিয়ে দেখা যায়, ইঁদুরে কেটে দেয়া কাঁচা ধানগাছ গুলো সরিয়ে ফেলছেন কৃষকরা। সেখানে আবার ধানের চারা রোপন করবেন বলে জানাালেন বেরো চাষী শেখ শহিদুল ইসলাম।
এ সময় সাহাব উদ্দিন নামে এক চাষী (৬৫) বলেন, তার চার বিঘা বোরো ক্ষেতের সদ্য রোপন করা ধানে ইঁদুরের আক্রমন হয়েছে। ইঁন্দুরে যেভাবে কচি ধান গাছ কাটছে, এত বিষ দিচ্ছি কিন্তু কোন কাজ হচ্ছে না’’। এমন আগে হয়েছিল কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, “২০ বছর থেকে কৃষি কাজ করছি, একটু আধটু ইঁদুরে কেটে ধান নষ্ট করে কিন্তু এবার শিষ ফুটেনি তাতেই কাটছে, তবে এত বেশি কোন বারই কাটেনি।
কোমলপুর গ্রামের গ্রামের মাহবুবুর রহমান জানান, এবার তিন বিঘা জমিতে বোরোর আবাদ করেছেন কিন্তু ইঁদুর যেভাবে ধানের গাছ কেটে দিচ্ছে তাতে তিনি ফলন নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন।
ইঁদুর মারার জন্য জমিতে দেয়া বিষ বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে পুকুর বা খালে গিয়ে পড়ায় উল্টো মাছ মরে যাচ্ছে উলেøখ করে শোভনা গ্রামের বোরো চাষী রফিকুল ইসলাম জানান, তিনি এবার ৪ বিঘা জমিতে বোরোর আবাদ করেছেন, তার জমিতে এখনো ধানের শিষ ফুটেনি, তারপরও ইঁদুরে তার জমির ধানের অনেক গাছ কেটে দিয়েছে বিষ দিয়েও তেমন উপকার হচ্ছে না উল্টো খালে বা পুকুরে এ বিষের পানি চলে গিয়ে মাছ মরে যাচ্ছে। আমরা উভয় সংকটেই আছি।
এ বিষয়ে ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ নজরুল ইসলাম জানান, ইঁদুরের ধান গাছ কেটে দেওয়ার বিষয়টি তিনি জেনেছেন। সে অনুয়ায়ী কৃষককে পরামর্শ দেয়ার জন্য উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তবে এটি এখনো উদ্বেগজনক পর্যায়ে আসেনি বলেও জানান তিনি।
তিনি বলেন, কৃষকদের ইঁদুর উপদ্রব থেকে বেশ কিছু পদ্ধতি অবলম্বনের পরামর্শ দিচ্ছি। প্রথমত তারা বিষটোপ ব্যবহার করতে পারে, এছাড়াও মরিচের গুড়া ইদুরের গর্তে দেয়া, ক্ষেতে ধুপ বা অন্য কিছু দিয়ে ধৌঁয়া তৈরী করলে সুফল পেতে পারেন কৃষকরা। এছাড়া পলিথিন টানিয়ে দিলে বাতাশে শব্দে ইঁদুর পালিয়ে যায়।
এ ব্যাপারে খুলনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল কাউয়ুম জানান, খুলনা জেলায় এবার বোরো ধানের আবাদ হয়েছে ৫৮ হাজার ১৬০ হেক্টের (১ হেক্টর = ২. ৪৭ একর) জমিতে বোরোর চাষ হযেছে এবার বোরো চাষের টার্গেট ছিল ৫১ হাজার ৮২৪ হেক্টর জমি। সবচেয়ে বেশি আবাদ হয়েছে জেলার ডুমুরিয়া উপজেলায়। এ উপজেলায় ২১ হাজার হেক্টর জমিতে বোরোর আবাদ হয়েছে।
বহুমাত্রিক.কম