
এখন আমার বোধের ভেতর ২১ ফেব্রুয়ারির চেয়েও
জোর ধ্বনিতে ১৪ ফেব্রুয়ারি ড্রাম বাড়িয়ে যায়।
এবং আমি ঘৃণায় কোন ফেব্রুয়ারি মাসে ঘুমুতেই পারি নে-
পরাপ্রগতিশীল রাজনীতিকের মুখগুলো
গুবরে পোকার মতো আমার মুখের উপর সারারাত ঘুরে ঘুরে হেঁটে বেড়ায়- আমি ঘুমুতে পারি নে।
আমার বউকে আদর করতে গিয়ে আমি ডিজেলহীন মোটরযানের মতোই স্তব্ধ হয়ে যাই।
আমার বউ ষোলো বছরের কুমারীর মতন কেঁদে ফেলে- ডাক্তার দেখাচ্ছো না কেন?
তোমাকে আমি হারাতে চায় না- বুঝেছো!
হায়, আমিও তো তোমাকে হারাতে চাই না।
তুমি যদি হারিয়ে যাও তো আমার জন্মান্ধ চুম্বনের আদর আর কে নেবে ওষ্ঠের উল্লাসে?
কে দেবে নগ্ন শরীর ভাসিয়ে আমার ঊথাল-পাথাল জলধির ঢেউ ভেঙে ভেঙে আনন্দ সাঁতার?
হায়, কে দেবে নিত্য তাগাদা- এক সিরিজ রাজনীতিক উপন্যাস লেখো-
কবতে তো অনেক লিখলে, এবার উপন্যাস লেখো।
আগামী প্রজন্মের জন্য কিছু একটা তো রেখে যাও।
তোমার ছন্নছাড়া রাজনীতিক জীবনের আলোয় যা কিছু তুমি আয়ত্ব করেছো-
পথের ধুলো, মাঠের আকাশ, নদীর চাঁদ, বাতাস ভাঙা চুল,
ঘুড়ির লাটাই ঘুরোনো চোখের দৃষ্টি, বৃষ্টি ভেজা সূর্যদুপুর, এটুকু তো সৃষ্টি করো।
এ তো তোমার নতুন জন্মেরই দায়! তুমি বোঝোন না- কতোবার তুমি জন্মেছো?
জানি, কবিরা আস্ত একটা গাঁধার মতো বোকা-সোকা হয়, কিন্তু তুমি তো এতবার জন্ম নিলে
তবু কখনো একটা গাঁধাও হতে পারলেনা-
যে একটা পানের বোঝা হাটে পৌঁছে দেবে
এবং পানরসিকের কি আনন্দ তা কী তুমি একবারও পরখ করেছো?
কেবল রাত জেগে জেগে কবতে লেখো, গণগান লেখো,
গণনাটকের ডায়ালগ আওড়ে আমার ঘুমটাকে কাড়ো-
আমি বলি কি তার চেয়ে এক সিরিজ রাজনীতিক উপন্যাস লেখো-
তোমার দীর্ঘ জীবন ঘষা স্বপ্নটাকে সুষ্টি করো।
আগামী প্রজন্মের জন্যে কাজে লাগবে- বুঝলে!
আসলে তোমরা রাজনীতিক কবিরা মানুষের রাজনীতির কিছুই বুঝতে চাওনা,
রাজ দরবারে কেবলই ঘুরে ঘুরে মরো অনুগ্রহের আশায়-
খ্যাতি বা কড়ির লোভে পায়ের জুতোর তলা ঘসে ঘসে মাটিকে কাঁদাও!
আর আমি জানি, যা খুব কম কবিদের ভাগ্যেই যোটে
এবং একটি ধাড়ি ছাগলের তৃতীয় বাঁচ্চাটির মতোই বঞ্চনা সহ্য ক’রে ক’রে
বেঁচে থাকার ভান করো,
আর সাতবেলা আঙুল নাচিয়ে নাচিয়ে গলাবাজি করো।
অথচ তোমার এই গলাধকরণের সংসার চালাতে গিয়ে এজন্মে আমার কিছুই হলো না-
তুমি ছাড়া আমার তো আর নতুন জন্ম নেই! ওরে আমার আঙুল নাচানো সংসারির পো-
মুখের থুবড়ি, চুম্বনের বাড়াবাড়ি, লুন্ঠকের মতো আমাকে ছিবড়ে করা
আর ভাঙা-হাড়ির গর্ভ-স্বপ্ন দেখাতে দেখাতে
সারারাত হাঁটিয়ে হাঁটিয়ে নদীর পাড়ে শিশুর মতো ঘুমিয়ে পড়ো।
হায়, আমার ঘুম আসেনা- আমার শরীর জেগে থাকে নদীর স্রোতে-
তুমি সেই না ঘুমোনোর যন্ত্রণা কখনো শুনতেই চাওনি!
আমার এই শরীরের জেগে থাকা দেখেছে জোনাকির আলোয় নদীর কূলের কঁকড়ারা-
তুমি যদি এক জন্মে কাঁকড়াটিও হতে পারতে!
আঙুল নাচিয়ে নাচিয়ে গলাবাজি এই তো তোমার মুরোদখানি!
ওইটুকুর বড়াত্তি ছাড়া আর কী আছে কিছূ? আমি জানি, বড়াত্তির একটা লম্বা লেজ থাকে-
যে মাছি দাবড়ায়, মশা দাবড়ায়, আরো সব কি কি-
বেশ তো কাটিয়ে দিলে চোখের ছানির মতো দেখা-না-দেখা
আমার এই জীবনখানিরে নিয়ে খেলা-খেলা করে।
আর এই ডালভাঙা সজনে গাছের কঁচি পাতা গজানো ডালের মতো
আমাদের জীবনের গল্প আমার বড়খালা কথায় কথায় শুনিয়ে শুনিয়ে
আমার খালুজানকে বৃথায় উত্যাক্ত করেছেন।
কিন্তু খালুজান কিছুই না শোনার ভান করে নাকের ডাকে পাড়া মাতিঢে ঘুমিয়ে পড়তেন।
আর তুমি? তাঁর চেয়েও এক কাঠি দড়!
হায়রে, আঙুল নাচানো গলাবাজ কবির নতুন জন্ম-
যে তার বউকে রাতের জন্যে রাখা আদরের সক্ষমতাটুকু কবেই হারিয়েছে!
এখন কেবল ২১ ফেব্রুয়ারির চেয়েও জোর ধ্বনিতে ১৪ ফেব্রুয়ারির ড্রাম বাড়িয়ে বাড়িয়ে
এক আজব সপ্নের ভেতর আমাকে নিয়ে সাতরাস্তায় ঘুরিয়ে মারছো!
অথচ দেখো, আমাকে নিয়ে তুমি ঠিক কোন রাস্তায় যেতে চাইছো-
পূর্ণিমালোকে-না-অরুণালোকে তা-ই আজও ঠিক করতে পারলে না!
আকাশের সাদামেঘে কী কখনো বৃষ্টি হয়? জীবন তো বৃষ্টির মেঘের মতো-
পারলে সেই জন্মটিই একবার নাও না-নতুন প্রজন্মেরা তবুও অন্তত বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে
নতুন একটি জীবন খুঁজে পাবে- মহাকালের সমুদ্র হতে হতে
তুমিও পথটিকে পেয়ে যাবে; যে পথের গাছে হেলান দিয়ে
রাতের আদরখেলা সক্ষমতার স্বপ্ন দেখতে দেখতে
তোমার ১৪ ফেব্রুয়ারির গানটিই আমি গলা ছেড়ে গাইবো এই বনের রাস্তায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে-
‘শহরে এখন দামাল ছেলের মিছিলে অনেক লাশ .... ’!
ঝিনাইদহ, ২০০০
বহুমাত্রিক.কম