বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহের তীর্থস্থান কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ার আখড়াবাড়িতে এবার বসছে সাধুদের মিলনমেলা। লালন শাহের তিরোধান দিবসে প্রতি বছর তিন দিনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করে আসছে কুষ্টিয়া লালন একাডেমি।
করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হাওয়ায় আগামী ১ কার্তিক (১৭ অক্টোবর) এবারের ১৩২তম তিরোধান দিবসের সব আয়োজন করেছে কুষ্টিয়া লালন একাডেমি।
এরি মধ্যে লালন সাঁইয়ের ভক্ত আশেকানরা আসতে শুরু করেছে। এ উৎসবকে ঘিরে কুষ্টিয়ার লালন আঁখড়াবাড়ীতে চলবে লালন মেলা। তিরোধান দিবস ও মেলাকে ঘিরে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা।
লালন ভক্তদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠবে লালন আঁখড়াবাড়ি। সাধু ভক্তরা আসতে শুরু করেছে আঁখড়াবাড়ীতে।
আগামী সতেরো, আঠারো, উনিশে অক্টোবর ছেউরিয়াই বসবে সাধুরের হাট বাজার। ফকির লালন সাঁই এর ১৩২ তম তিরোধান দিবস উপলক্ষে সাধুসঙ্গ এবং লালন মেলা অনুষ্ঠিত হবে। ফকির লালন শাহ শতাব্দীর পর শতাব্দী জুড়ে এক ঐন্দ্রজালিক মোহময়তা বিস্তার করে চলেছেন। দিনদিন তার সে ঐন্দ্রজালিক বলয়ের বিস্তৃতি ঘটছে।
অগণিত মানুষ তার বিশাল সৃষ্টি জগতে প্রবেশ করে সন্ধান করছেন যেন লালনেরই। তিনি ছিলেন একাধারে একজন আধ্যাত্মিক বাউল সাধক, মানবতাবাদী, সমাজ সংস্কারক এবং দার্শনিক। ফকির লালন, লালন সাঁই, লালন শাহ, মহাত্মা লালন ইত্যাদি নামেও পরিচিত তিনি।
অসংখ্য গানের গীতিকার, সুরকার ও গায়ক লালনকে বাউল গানের অগ্রদূতদের অন্যতম একজন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তার গানের মাধ্যমেই উনিশ শতকে বাউল গান বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করে। তিনি ধর্ম, বর্ণ, গোত্রসহ সকল প্রকার জাতিগত বিভেদ থেকে সরে এসে মানবতাকে সর্বোচ্চ স্থান দিয়েছিলেন।
তার গান ও দর্শন যুগে যুগে প্রভাবিত করেছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ও অ্যালেন গিন্সবার্গের মতো বহু খ্যাতনামা কবি, সাহিত্যিক, দার্শনিক, বুদ্ধিজীবীসহ অসংখ্য মানুষকে। তার গানগুলো মূলত বাউল গান হলেও এই গোষ্ঠী ছাড়াও যুগে যুগে বহু সংগীতশিল্পীর কণ্ঠে লালনের গান উচ্চারিত হয়েছে।
আঠারোশো নব্বই সালের সতেরোই অক্টোবর একশো ষোলো বছর বয়সে কুষ্টিয়ার কুমারখালির ছেউড়িয়াতে নিজ আখড়ায় মৃত্যুবরণ করেন লালন।
কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ার এক গভীর জঙ্গলে সাধক শিরোমণি ফকির লালন শাহ তার অনুসারী ভক্তদের নিয়ে যে আখড়া গড়ে তুলেছিলেন তা এখন সারা বিশ্বের মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে।
কুমারখালী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা বিতান কুমার মন্ডল জানায়, ১৩২ তম লালন সাঁইয়ের তিরোধান দিবস উপলক্ষে জেলা প্রশাসক সকল ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। আয়োজনের আগে থেকেই ভক্ত আসা শুরু করেছে। তাদের মধ্যে আনন্দ উৎসব দেখা যাচ্ছে। তেমন ভাবে আমরাও খুব আনন্দিত উপভোগ করছি লালন সাঁইয়ের তিরোধান দিবস উপলক্ষে।
বহুমাত্রিক.কম