Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ১২ ১৪৩১, শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪

মাদার অব হিউম্যানিটি থেকে কওমী জননী

ড. মো. হুমায়ুন কবীর

প্রকাশিত: ০০:২৭, ১০ নভেম্বর ২০১৮

আপডেট: ০০:০০, ৩১ ডিসেম্বর ১৯৯৯

প্রিন্ট:

মাদার অব হিউম্যানিটি থেকে কওমী জননী

ফাইল ছবি

শেখ হাসিনা। মাদার অব হিউম্যানিটি। কওমী জননী। না স্বঘোষিত নয়। এর একটি দিয়েছে ২০১৭ সালের অক্টোবরে ব্রিটিশ গণমাধ্যম। আর অন্যটি দিয়েছে সম্প্রতি ২০১৮ সালের নভেম্বরে ইসলাম ধর্মীয় আধ্যাত্মবাদী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। তিনি আসলে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ট বাঙালি, বিশ্বনেতা, স্বাধীনতার মহান স্থপতি, মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক, বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা। যোগ্য পিতার যোগ্য কন্যা তিনি।

বাংলাদেশের বর্তমান সুযোগ্য ও সফল প্রধানমন্ত্রী। এটি আজ শুধু একটি নাম নয়। কিন্তু তিনি যে কী তা কোন অভিধা কিংবা বিশেষণ দিয়েই প্রকাশ করা যাবে না। তিনি এ যাবৎ দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য, এমনকি নিজের জন্যও অনেক কিছু অর্জন করেছেন। সেগুলোর কোনটি পুরস্কার, পদক, স্বীকৃতি, সম্মান, উপাধি আবার কোনটি সম্মাননা, সনদ, সার্টিফিকেট, সম্মানসূচক ডিগ্রি ইত্যাদি আরো কত কি। প্রত্যেকটি সম্মানই তিনি পেয়েছেন নিজ যোগ্যতাবলে।

এক কথায় বলতে গেলে তিনি যেদিকেই হাত দিয়েছেন সেখানেই তিনি সোনা ফলিয়েছেন। এখানে সামান্য কিছু প্রসঙ্গ কথা বলা প্রয়োজন। পঁচাত্তর পরবর্তী একুশ বছর পর ক্ষমতায় এসে ১৯৯৭ সালে পার্বত্য অঞ্চলের প্রায় তিন দশকের সমস্যা মিটিয়ে আন্দোলনরত জনসংহতি সমিতির সাথে পার্বত্য শান্তি চুক্তি করেছিলেন। সেই চুক্তির মাধ্যমে তিনি অসম্ভবকে সম্ভব করে শান্তি কন্যা হয়েছিলেন। তখন তলাবিহীন ঝুড়ি থেকে প্রথম বারের মতো দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে সমর্থ হয়েছিলেন। করেছিলের ভারতের সাথে দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত ৩০ বছর মেয়াদি পানিবণ্টন চুক্তি। এসব কারণে তাঁকে দেওয়া হয়েছিল জাতিসংঘের সেরেস শান্তি পুরস্কার।

দেশের কৃষি উন্নয়নে, শুধু দেশের অভ্যন্তরে নয় বৈশ্বিক পরিবেশ উন্নয়নে, দারিদ্র্য বিমোচনে, সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক উন্নয়নে-ইত্যাদি নানা বিষয়ে তিনি শুধু বর্তমান সময়েই উন্নয়ন করছেন না। তিনি দারিদ্র্যপীড়িত বাংলাদেশের ভাগ্যোন্নয়নে নিরলস পারিশ্রম করে দেশকে আগামীর স্বপ্ন দেখিয়ে চলেছেন। স্বপ্ন দেখাচ্ছেন রূপকল্প-২০২১, ২০৩০, ২০৪১ এবং সর্বশেষ ২১০০ সাল পর্যন্ত। আর এগুলো করতে গিয়েই তিনি আসলে বলা চলে এক হাতেই সব মানুষের ভালো করে চলেছেন নিরন্তর।

কীভাবে এলো মাদার অব হিউম্যানিটি। আমরা জানি বাংলাদেশে প্রায় তিন দশক আগে থেকেই কক্সবাজারের কাছে মিয়ানমার সীমান্তে প্রায় পাঁচ লক্ষাধিক বিতারিত রোহিঙ্গা মুসলমান শরণার্থী হয়ে বসবাস করে আসছেন। বাংলাদেশের মতো একটি ক্ষুদ্রকায় দেশের অভ্যন্তরে যেখানে তাদেরকে নিয়েই হিমশিম খাচ্ছিল। ঠিক তখনই ২০১৭ সালের শেষার্ধে আবারো মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সমস্যা সম্বলিত গৃহযুদ্ধের কারণে আরো প্রায় পাঁচ-ছয় লক্ষসহ সর্বমোট দশ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা শরণার্থী সেখানে অযাচিতভাবে যুক্ত হয়ে সেখানকার আকাশ-বাতাস ভারী করে দিতে লাগল। জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে বিষয়টি নিয়ে হাহাকার পড়ে গেল। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল থেকে পরামর্শ ও দাবী উঠল তাদেরকে আবার জোর করে পুশব্যাক করাতে হবে।

কিন্তু তখন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা নিজের মতো করে কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু করলেন। কিন্তু কারো কাছ থেকেই উল্লেখযোগ্য তেমন কোন সহযোগিতা কিংবা আশ্বাস পেলেন না। তখন তিনি নিজেই সবার দায়িত্ব নিয়ে নিলেন। শুধু দায়সারা দায়িত্ব নেওয়া নয়। তিনি তাদের থাকার জায়গা, খাবার-দাবার, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, চিকিৎসা ইত্যাদি মৌলিক চাহিদা পূরণের সার্বিক দায়িত্ব গ্রহণ করলেন। মানবিক শেখ হাসিনা তখন বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সময় পাশ্ববর্তী ভারতে প্রায় এককোটি বাঙালির শরণার্থী হওয়ার কষ্টের বিষয়টি ভুলে যাননি।

সেজন্যই তিনি মানবিকভাবে রোহিঙ্গাদের মাতৃস্নেহ গ্রহণ করলেন। সেটি আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপক প্রশংসিত হয়। কারণ যেখানে বিশ্বের বড় বড় অর্থনীতির দেশ সামান্য কিছু শরণার্থী চাপ সহ্য করতে পারেনা। সেখানে বাংলাদেশের নেত্রী সীমিত সম্পদ ও সামর্থের মধ্যে রোহিঙ্গাদের মানবিক আবেদনে সারা দিয়ে যে ঐদার্যের পরিচয় দিয়েছেন তা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। সেজন্য ব্রিটিশ গণমাধ্যম বাংলাদেশের গণতন্ত্রের মানসকন্যা শেখ হাসিনাকে মাদার অব হিউম্যানিটি খেতাবে ভূষিত করেন। সেখানে সেসময় এ বিষয়টির গুরুত্ব অনুভব করে তাঁকে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দেওয়ার দাবী উঠেছিল।

অপরদিকে কীভাবে এলো কওমী জননী। সে বিষয়ে বলতে গেলে নাতিদীর্ঘ বর্ণনা প্রয়োজন। পঁচাত্তর পরবর্তীতে ১৯৯৬ সালের পূর্ব পর্যন্ত একুশ বছর আওয়ামীলীগ তথা শেখ হাসিনার নেতৃত্ব সম্পর্কে একটি ইসলাম ধর্ম বিরোধী অপপ্রচার প্রচলিত ছিল। তখন বলা হতো আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় এলে বাংলাদেশ ভারত হয়ে যাবে এবং মসজিদে উলুধ্বনি শোনা যাবে(!)। কিন্তু ১৯৯৬ সালের পর থেকে আওয়ামীলীগের শাসন বাঙালি প্রত্যক্ষ করার কারণে সেটি আর ধোপে টেকেনি। কিন্তু তারপরও প্রতিক্রিয়াশীল ধর্মীয় মৌলবাদী চক্র থেমে থাকেনি। নানা রকমের নাশকতা, জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করে দেশকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা করা হয়েছে বারংবার। নানাভাবে আওয়ামীলীগের নেতৃত্বকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করেছে বারবার।

অবশেষে এক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে বাংলাদেশের অরাজনৈতিক একটি ধর্মীয় আধ্যাত্মবাদী সংগঠনকে দিয়ে সরকার বিরোধী আন্দোলন করানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু শেখ হাসিনার বুদ্ধিমত্তা এবং ধর্মের প্রতি অগাধ বিশ্বাস থেকে তিনি তা সামলে নিয়েছিলেন। এর পরের ইতিহাস শুধুই বিজয়ের। যে ইসলামী নেতৃত্ব শেখ হাসিনাকে তখন ভুল বুঝেছিলেন, তারা তা বুঝতে পারলেন অল্প সময়ের মধ্যেই। শেখ হাসিনার মতো একজন ধর্মপালনকারী মুসলীম নারী নেত্রীর আচার-আচরণ, চলাফেরা, কথা-বার্তা, ধর্মীয় রীতিনীতি পালন এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে ধর্মকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া ইত্যাদি বিষয়গুলো তারা নিবিড় পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে অনুধাবন করতে পারলেন। কারণ শেখ হাসিনার সকাল শুরু হয় ফজরের নামাজ আদায় করে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে।

তারই সূত্র ধরে সম্প্রতি অবহেলিত ধর্মীয় শিক্ষা হিসেবে কওমী শিক্ষা ব্যবস্থাকে স্বীকৃতি দিলেন। এতে কওমী নেতৃবৃন্দ খুশি হয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তাদের একজন করে নিলেন। তাঁকে ঘোষণা করলেন কওমী জননী। এটি শেখ হাসিনার জন্য একটি পরম পাওয়া। কারণ তিনি যে ইসলাম ধর্মের একজন প্রকৃত রক্ষাকারী তা প্রমাণীত হলো। এখন আর কেউ বলতে পারবে না যে আওয়ামীলীগ এবং এর নেতা শেখ হাসিনা ইসলামের উপযুক্ত নেত্রী নন। তিনি শুধু ইসলাম ধর্ম নন বরং সকল ধর্ম-বর্ণ পালন করতে সহায়তাকারী। কারণ তারই একটি বাণী, ‘ধর্ম যার যার উৎসব সবার’। আর বাংলাদেশ বিশ্বের মধ্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রতির অনন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্তের একটি দেশ। আমরা মাদার অব হিউম্যানিটি এবং কওমী জননী শেখ হাসিনার দীর্ঘায়ু কামনা করি এবং বাংলাদেশে তাঁর নেতৃত্বের ধারাবাহিকতা কামনা করি। জয়তু শেখ হাসিনা।

লেখক: ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়

email: [email protected] 

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer