Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ১৩ ১৪৩১, শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪

ভারতের প্রাক্তন মন্ত্রী যশবন্ত সিংয়ের প্রয়াণ

বহুমাত্রিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৪:৫২, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২০

প্রিন্ট:

ভারতের প্রাক্তন মন্ত্রী যশবন্ত সিংয়ের প্রয়াণ

ভারতের প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জসবন্ত সিংহ মারা গেছেন। বয়স হয়েছিল ৮২ বছর। রোববার সকাল ৬ টা ৫৫ মিনিটে দিল্লির সেনা হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। খবর আনন্দবাজার পত্রিকা’র 

হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়েছে, গত ২৫ জুন থেকে তাঁর চিকিৎসা চলছিল। সেপসিস এবং মাল্টিঅর্গান ডিসফাংশন সিন্ড্রোমে আক্রান্ত ছিলেন তিনি। রোববার সকালে তাঁর কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়।

তাঁর মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করে টুইট করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। টুইটবার্তায় মোদী লিখেছেন, ‘‘প্রথমে একজন সেনা এবং তারপর অভিজ্ঞ রাজনীতিক হিসেবে দেশসেবা করেছেন তিনি। অটলবিহারী বাজপেয়ীর সরকারে তিনি অর্থমন্ত্রক, বিদেশ ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছন। তাঁর প্রয়াণে আমি শোকাহত।’’ দলের সাংগঠনিক দিকেও প্রয়াত রাজনীতিকের অবদান স্মরণ করেছেন মোদী। সমবেদনা জানিয়েছেন তাঁর পরিবারের প্রতি।

রাজস্থানের বাড়মের জেলার জসোল গ্রামে জসবন্তের জন্ম ১৯৩৮ সালের ৩ জানুয়ারি। মেয়ো কলেজ এবং ন্যাশনাল ডিফেন্স অ্যাকাডেমি এবং ইন্ডিয়ান মিলিটারি অ্যাকাডেমি উত্তীর্ণ জসবন্ত ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগ দেন পঞ্চাশের দশকের শেষ দিকে। তিনি কর্মরত ছিলেন ‘মেজর’ পদে।

রাজনীতিতে প্রবেশ ষাটের দশকেরই, শেষ দিকে। ভারতীয় জনতা পার্টির প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে তিনি অন্যতম। রাজ্যসভায় প্রথম পা রাখেন আশির দশকে। ১৯৯৬-এর ১৬ মে থেকে সে বছরের ১ জুন অবধি বাজপেয়ীর সংক্ষিপ্ত মন্ত্রিসভায় তিনি ছিলেন অর্থমন্ত্রকের দায়িত্বে। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী হিসেবে আবার তাঁকে দেখা গিয়েছিল ২০০২ সালে। বাজপেয়ীর মন্ত্রিসভায় তিনি ১ জুলাই, ২০০২ থেকে ২১ মে ২০০৪ অবধি কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী ছিলেন। বিদেশমন্ত্রকের দায়িত্বে ছিলেন ১৯৯৮ থেকে ২০০২, দীর্ঘ চার বছর। প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের কার্যভার তিনি পালন করেছেন ২০০০-এর জানুয়ারি থেকে ২০০১-এর অক্টোবর মাস পর্যন্ত।

১৯৯৮-’৯৯ বাজপেয়ীর ১৩ মাসের সরকারের জমানায় জশবন্তই ছিলেন যোজনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান। সব মিলিয়ে মোট পাঁচবার রাজ্যসভা এবং চার বার লোকসভার সাংসদ হয়েছিলেন তিনি। ১৯৮৯ সালের লোকসভা ভোটে রাজস্থানের জোধপুর এবং ১৯৯৬ ও ১৯৯১-এ ওই রাজ্যের চিতৌরগঢ় কেন্দ্র থেকে সাংসদ হয়েছিলেন। ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে জেতেন এ রাজ্যের দার্জিলিং কেন্দ্র থেকে।

১৯৯৯ সালে ইন্ডিয়ান এয়ারলাইনসের বিমান ছিনতাইয়ের ঘটনার সময় তৎকালীন বিদেশমন্ত্রী যশবন্ত আফগানিস্তানের কান্দাহারে গিয়ে হাইজ্যাকারদের সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন। তাঁর এই ‘সক্রিয়তা’ নিয়ে সে সময় তুমুল রাজনৈতিক বিতর্ক হয়েছিল।

২০০৪ সালের লোকসভা ভোটে বাজপেয়ী সরকারের পতনের পরে রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা হয়েছিলেন জশবন্ত। কিন্তু ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে দার্জিলিঙে জেতার কয়েক মাসের মধ্যেই পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মহম্মদ আলি জিন্নার স্তুতি করার অভিযোগে বিজেপি থেকে বহিষ্কৃত হন। জশবন্ত তাঁর বইয়ে লিখেছিলেন, ভারত ভাগের জন্য জিন্না দায়ী নন। বহিষ্কারের মাস দশেক পরেই বিজেপি নেতৃত্ব ফিরিয়ে নেয় রাজপুত নেতাকে। কিন্তু দলের অন্দরে আর হৃত মর্যাদা পুনরুদ্ধার করতে পারেননি তিনি।

২০১৪ সালের লোকসভা ভোটে বাড়মের কেন্দ্রে বিজেপির টিকিট না পেয়ে নির্দল প্রার্থী হন জশবন্ত। ফের বহিষ্কার করা হয় তাঁকে। ভোটেও হেরে যান। কয়েক বছর পরে যশবন্তের ছেলে তথা বাড়মেরের প্রাক্তন বিজেপি সাংসদ মানবেন্দ্র যোগ দেন কংগ্রেসে। গত লোকসভা ভোটে সেখানে কংগ্রেসের প্রার্থীও হন মানবেন্দ্র। জশবন্ত অবশ্য আর সক্রিয় রাজনীতিতে ফেরেননি।

তাঁর প্রয়াণে শোক জানিয়েছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। টুইটে তিনি লিখেছেন, ‘‘ প্রবীণ বিজেপি নেতা এবং প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জসবন্ত সিংহের মৃত্যুতে আমি গভীর ভাবে মর্মাহত। প্রতিরক্ষা-সহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রকের দায়িত্ব তিনি পালন করেছেন বিভিন্ন সময়ে। তিনি ছিলেন একজন সুদক্ষ সাংসদও।’’

দীর্ঘদিন সাংসদের দায়িত্ব পালন করা রাজনীতিকদের মধ্যে জসবন্ত অন্যতম। ২০১৪ সালের অগস্ট মাসে নিজের বাসভবনে পড়ে গিয়ে মাথায় গুরুতর আঘাত পান জসবন্ত। দিল্লির সেনা হাসপাতালে দীর্ঘ দিন চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। তার পর তিনি কোমায় চলে যান।

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer