-লেখক
‘কিউএস’ র্যাংকিংয়ে বিশ্বের ৮০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে বাংলাদেশের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ও নেই! নানা সূচকে বাংলাদেশ ইমার্জিং টাইগার হিসেবে এগিয়ে আসছে, অথচ উচ্চ শিক্ষা এবং বিশ্বজ্ঞান সূচকে আমাদের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না!
প্রতিবেশী দেশ ভারত এবং পাকিস্তানের একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ৫০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় রয়েছে। জ্ঞান-নির্ভর অর্থনীতির এ বিশ্বে আমাদের এ দূরাবস্থা কি আলোচনার দাবী রাখে না?
অনেককে আফসোস করতে দেখলাম এই বলে যে পর্যাপ্ত গবেষণা বরাদ্দের অভাবে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গত কয়েক দশকে বিশ্বের ৫০০টি শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা থেকে বের হয়ে এখন ৮০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায়ও নেই।
অনেকে কারণ হিসেবে বলছে গবেষণা বরাদ্দের অভাব। এটি শতভাগ সত্যি। তবে শতবর্ষী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যদি প্রতি বছর একটি মাসকে গবেষণার জন্য এনডাউমেন্ট গ্রহণ করার জন্য উন্মুক্ত করে, আমার দৃঢ বিশ্বাস এলামনাই এবং সমাজের বিত্তবান শ্রেণি সানন্দে যোগ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির গবেষণা বরাদ্দে অভাবনীয় অবদান রাখবে।
আমাদের দেশ শিক্ষায় ব্যক্তিগত অনুদানের সংস্কৃতিতে অত্যন্ত সমৃদ্ধ। দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে এ বিধান থাকলেও আজ পর্যন্ত এ আইনের প্রয়োগ নেই। সকল উন্নত দেশেই ব্যক্তির অনুদান গ্রহণ করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গবেষণা বাজেট এবং অবকাঠামো উন্নয়নের ধারা প্রচলিত।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সিংহভাগ গবেষণা বরাদ্দ আসে এলামনাইদের থেকে। সমাজ বিচ্ছিন্ন আইভরি টাওয়ার হিসেবে দাঁড়িয়ে থেকে এবং শুধুমাত্র সরকারী অনুদানের দিকে থাকিয়ে থেকে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ক্রমশ জ্ঞান সৃজন, জ্ঞান সংরক্ষণ এবং জ্ঞানের বিতরণের মতো মর্যাদাশালী কর্ম থেকে যোজন যোজন দুরের পথে হাঁটছে।
অনেকে বলছে, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নেতৃত্ব আজ গবেষণা এবং শিক্ষায় বিশ্বমানের কেউ নেই। শিক্ষা এবং গবেষণায় বিশ্বমানের উৎকর্ষতা অর্জন বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃত্বদানের একটি পূর্ব শর্ত হিসেবে সারা বিশ্বে প্রচলিত থাকলেও আমরা সেদিকটি বিবেচনা করছি না।
এ গতিপথ থেকে ফেরাতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকগণের কি কোন দায় নেই? শুধুমাত্র ব্যক্তিগত দায়িত্ত্ববোধ এবং নেশায় কাজ করা অল্প কয়েকজন শিক্ষকের অবদানে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিশ্ব র্যাংকিংয়ে উঠে আসতে পারবে না। সেজন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন একটি সাউন্ড ইকোসিস্টেম। প্রয়োজন জনগণের অর্থ ব্যবহারে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা।
একটি দেশের অর্থনীতি এবং নাগরিকের জীবন যাত্রার মান সেদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষা এবং গবেষণার মানের সাথে সমানুপাতিকভাবে সম্পর্কিত। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সকল অংশীজনের প্রতিনিধিদের নিয়ে কি এ বিষয়ে একটি ভার্চুয়াল আলোচনা শুরু করা যায় না?
গণমাধ্যম কত না বিষয় নিয়ে গোলটেবিল আলোচনা আয়োজন করে থাকে অথচ এ বিষয়টিতে শুধুমাত্র প্রতিবছর নেতিবাচক সংবাদ প্রকাশ করেই দায় শেষ। নাগরিক সমাজ কিংবা শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনও তো এ বিষয়ে সেমিনার আয়োজন করতে পারতো?
সরকারের পরিকল্পনা কমিশন আমাদের উন্নয়নের নানা মহাপরিকল্পনা দিয়েছে। এর সুফলও দেশ পাচ্ছে। কিন্তু উচ্চ শিক্ষা, গবেষণা এবং উদ্ভাবনে আমাদের নিম্নমুখী যাত্রা ঠেকাতে পরিকল্পনা কমিশনও একটি কার্যকরী উদ্যোগ নিতে পারে। শুধুমাত্র সমস্যা এবং কারণ নির্দেশ করেই কি আমাদের দায় শেষ। তবে এ দুরাবস্থার পরিবর্তনে কিছু একটা করা দরকার।
লেখক: বিশিষ্ট জীবপ্রযুক্তি বিজ্ঞানী এবং প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক, ইনস্টিটিউট অব বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং (আইবজিই); বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। ইমেইল-[email protected]
বহুমাত্রিক.কম