খুলনা: রাষ্টায়াত্ব পাটকল শ্রমিকদের বকেয়া পাওনা পরিশোধসহ ৯ দফা দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে খুলনার নাগরিক সংগঠণগুলো একাত্বতা ঘোষণা করেছে। সম্মিলিত নাগরিক পরিষদের ব্যানারে শনিবার নগরীর পিকচার প্যালেস মোড়ে এ দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
ওই কর্মসূচিতে নাগরিক নেতৃবৃন্দ আন্দোলনরত পাটকল শ্রমিকদের বকেয়া মজুরী পরিশোধ, মজুরী কমিশন বাস্তবায়ন ও ৯ দফা দাবিসহ রাষ্ট্রায়ত্ব মিলগুলোর আধুনিকায়নের দাবি জানিয়েছেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সম্মিলিত নাগরিক পরিষদের আহ্বায়ক এ্যাড. কুদরত-ই-খুদা এবং পরিচালনা করেন নারীনেত্রী সুতপা বেদজ্ঞ ও উন্নয়ন কমিটির যুগ্ম মহাসচিব আফজাল হোসেন রাজু।
বক্তারা বলেন, বর্তমানে খালিশপুরে ১০ হাজার শ্রমিক পরিবারে অনাহারে, তারা চিকিৎসাবঞ্চিত, অভাবে সাড়ে চারশ’ এসএসসি উত্তীর্ণ শিক্ষার্থী অর্থাভাবে কলেজে ভর্তি হতে পারছে না, ছোট মুদি ব্যবসায়ীরা মানবিক কারণে ধারে মাল বিক্রি করে এখন নিঃস্ব। এসব মিলিয়ে খালিশপুর অঞ্চল এখন মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। বক্তাগণ অনতিবিলম্বে এ সকল সমস্যা সমাধানে ঈদের আগেই প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন ডাঃ মনোজ দাশ, এ্যাড. মিনা মিজানুর রহমান, মোঃ খালিদ হোসেন, এস এ রশীদ, এইচ এম শাহাদৎ, শেখ মফিদুল ইসলাম, কোহিনুর আক্তার কণা, এফ এম ইকবাল, শেখ আশরাফ-উজ-জামান, খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ্যাড. নুরুল হাসান রুবা, ক্রিসেন্ট জুট মিল সিবিএ’র সভাপতি মুরাদ হোসেন, সাধারণ সম্পাদক সোহরাব হোসেন, খালিশপুর জুট মিল সিবিএ সভাপতি দীন মোহাম্মদ, প্লাটিনাম জুট মিলের সিবিএ সাবেক সভাপতি খলিলুর রহমান, বিশিষ্ট সাংবাদিক গৌরাঙ্গ নন্দী, এইচ এম আলাউদ্দিন, এ্যাড. আ ফ ম মহসীন, লোকমান হাকিম, মিনা আজিজুর রহমান, মিজানুর রহমান বাবু, ডাঃ নাসির উদ্দিন, মনিরুল হক বাচ্চু, শরীফ শফিকুল হামিদ চন্দন, মনিরুজ্জামান রহিম, শরীফুল ইসলাম সেলিম, মোঃ হাসিবুর রহমান হাসিব, শামীমা সুলতানা শিলু, রসু আক্তার, সিলভী হারুন, আলমাস আরা, জেসমিন জামান এ্যাড. মোমিনুল ইসলাম, মাহফুজুর রহমান মুকুল এস এম ইকবাল হোসেন বিপ্লব, নাজমুল আজম ডেবিট, এ্যাড. অশোক কুমার সাহা, মেরিনা যুথি, এম এ কাশেম, এ্যাড. নিত্যানন্দ ঢালী, মাহাবুব আলম বাদশা, শেখ মোঃ নাসির উদ্দিন, শাহ মুমুনুর রহমান তুহিন, মাসুদুর রহমান রঞ্জু, সালে আহমেদ খোকন, সাংবাদিক খলিলুর রহমান সুমন, গোলাম মোর্তজা সাগর, মোঃ সিরাজুল ইসলাম, সৈয়দ আলী হাকিম, রুস্তম আলী হাওলাদার, শেখ আব্দুল হালিম, আসিফ ইকবাল, আবু হানিফ, ইসরাত আরা হীরা, নুরুন্নাহার হীরা, আখতার হোসেন, মোঃ ইব্রাহিম, মোঃ মোশারফ হোসেন, মোঃ সুবজুল ইসলাম, সাবির খান, আজগর হোসেন, নূরুল ইসলাম প্রমুখ।
এদিকে আন্দোলনরত শ্রমিকরা শনিবার নগরীর খালিশপুর নতুন রাস্তা মোড়ের প্রতিদিনকার রাজপথ রেলপথ অবরোধ ও ধর্মঘটের নিয়মিত কর্মসূচি চলাকালে ক্ষুব্ধতা প্রকাশ করেন। তারা বলেন, মনে হচ্ছে দেশে কোন সরকার নেই। আমরা ১৩ সপ্তাহ কাজের মজুরী পাই না। রমজান মাস শ্রমিকরা রাস্তায় নামাজ ও ইফতারি করছে, আমরা ছেলে মেয়ে নিয়া অনাহারে দিন কাটাচ্ছি। শ্রমিকরা না খেয়ে কাজ করতে পারছে না। মিল গুলো বন্ধ কোন সুরাহার কথা কেউ বলছেনা। আমরা যাবো কোথায়।
তীব্র দাবদাহের মধ্যে খুলনায় পাটকল শ্রমিকরা টানা ১১ দিন কর্মবিরতি ও ১০ দিন তিন ঘণ্টার রাজপথ ও রেলপথ অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছেন। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যেতে তারা বদ্ধপরিকর। বার বার প্রতিশ্রুতি দেয়ার পরও শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধের কোন সুখবর শ্রমিকরা পাচ্ছেন না। আন্দোলনরত শ্রমিকদের বেধে দেয়ার সর্বশেষ সময় ছিল ১৮ মে। কিন্তু ১৮ মে শনিবার দিন শেষেও কোন আশ্বাসের বানী তারা শুনতে পারেননি। নিদির্ষ্ট সময়সীমা পার হওয়ার পর নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করবে পাটকল শ্রমিকরা।
প্লাটিনাম জুবিলী জুটমিলের সিবিএ সভাপতি শাহানা শারমীন জানান, গত বৃহস্পতিবার ১৩ সপ্তাহ মজুরী বকেয়া পড়েছে। নতুন সপ্তাহ শুরু হয়েছে। কিন্তু শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধের ব্যাপারে মিল কর্তৃপক্ষ কোন উদ্যোগ নেয়নি। পাটকল শ্রমিক লীগের খুলনা অঞ্চলের সভাপতি মো. মুরাদ হোসেন বলেন, ‘চুক্তি অনুযায়ী মজুরি কমিশন কার্যকর হয়নি। শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ করা হচ্ছে না। আমাদের বেধে দেয়া সময় সীমা শেষ হয়েছে। দাবি আদায়ে ২/১ দিনের মধ্যে নতুন কমৃসূচি ঘোষণা করা হবে।
পাটকল শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সরদার মোতাহার উদ্দীন বলেন, ‘বকেয়া পাওনাসহ ৯ দফা দাবিতে রাষ্ট্রায়ত্ব পাটকলের শ্রমিকরা কর্মবিরতিসহ দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন চালিয়ে আসছে। গত ১৫ এপ্রিলের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, ২ মে’র মধ্যে বকেয়া মজুরি পরিশোধ না করায়, শ্রমিকরা কঠোর অবস্থানে রয়েছে। তারা কর্মবিরতি পালনসহ প্রতিদিনি তিন ঘণ্টা করে রাজপথ ও রেলপথ অবরোধ কর্মসূচি পালন করছে।’
বিজেএমসি (বাংলাদেশ জুট মিলস কর্পোরেশন) খুলনার লিয়াঁজো কর্মকর্তা মো: সাজ্জাদ হোসেন জানান, শ্রমিক ও কর্মচারীদের কয় মাসের মজুরি ও বেতন বকেয়া রয়েছে, তা জানতে বিজেএমসি কর্তৃপক্ষ জানতে চেয়েছে। তাছাড়া পাট মন্ত্রণালয়ের চাহিদা অনুযায়ী শ্রমিকদের বকেয়া পাওনাসহ অন্যান্য তথ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। শ্রমিকদের বকেয়া পাওনা পরিশোধের ব্যাপারে এখনও কোন অর্থ বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। তিনি বরৈন, রাষ্টায়াত্ব পাটকলগুলোর মধ্যে খুলনার মিলগুরৈাতে ৫৮ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে।
বহুমাত্রিক.কম